সরকার ফের বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি মামলা’ আর ‘আগুনের খেলা’ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় তিনটি মোটরসাইকেল পোড়ানোর ঘটনায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলার প্রসঙ্গ টেনে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তার এ মন্তব্য আসে।
তিনি বলেন, “গত এক সপ্তাহে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নামে একের পর এক মামলা দিয়েই যাচ্ছে এই সরকারের প্রশাসন। মৃত ব্যক্তি, কারাবন্দি নেতাদেরও গায়েবি মামলায় পাইকারি আসামি করা হচ্ছে। সরকার বর্তমানে নতুন কোনো ইস্যু পাচ্ছে না। তাই তারা আগের মতই গায়েবি মামলা দিয়ে আবার আগুনের খেলা শুরু করেছে।”
খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির আগের দিন বুধবার বিকালে সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন সড়কে তিনটি মটর সাইকেলে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে।
পরে পুলিশের পক্ষ থেকে রমনা থানায় ১৩৫ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, জয়নাল আবেদীন (খালেদা জিয়ার আইনজীবী), শওকত মাহমুদের পাশাপাশি রিজভীকেও সেখানে আসামি করা হয়।
ওই মামলাকে ‘উদ্ভট’ ও ‘হাস্যকর’ আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, “হাই কোর্ট এলাকায় বেওয়ারিশ দুই মোটর সাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার জন্য এটি সরকারের বিশেষ বাহিনীর পরিকল্পিত অগ্নি সংযোগ।”
এর নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে ওই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
“মোটর সাইকেল তিনটির মালিকানা কেউ দাবি না করায় মনে হচ্ছে এই ঘটনাটা উদ্দেশ্যমূলক। ঘটনার পর এখনো বেওয়ারিশ মটর সাইকেলগুলোর মালিক খুঁজে পায়নি পুলিশ। অথচ মামলা হয়েছে ১৩৫ জন নেতার নামে।
“সবাই এটা জানে যে, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের লোকজন এবং সরকারের বিশেষ বাহিনী পরিকল্পিত একেকটি ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির নামে মামলা দিচ্ছে।”
ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার ও মোস্তাফিজুর রহমানের নামও আসামির তালিকায় রয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেন, “ইসহাক দেড় বছরের উপরে জেলে। আর মুস্তাফিজ ডাকসুতে আমাদের ভিপি প্রার্থী ছিল। তারা কী করে জেলখানার প্রাচীর টপকে এসে মোটর সাইকেলে আগুন দিয়ে আবার জেলখানায় ঢুকে গেল! এটা আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসা করতে চাই।
“ঢাকা মহানগরীর যারা পুলিশ কর্মকর্তা আছেন, তাদের কাছে বলতে চাই, আপনার নিজেরাই প্রমাণ করে দিচ্ছেন যে এটা আপনারাই নিজেরা ঘটিয়েছেন।”
‘খালেদাকে জামিন না দেওয়া নিষ্ঠুরতা’
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সর্বোচ্চ আদালতে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং গুরুতর অসুস্থ ৭৫ বছর বয়সী একজন মহিয়সী নারীকে জামিন না দেওয়া সাম্প্রতিক কালের সেরা নিষ্ঠুরতা। এটি শুধু দেশের ইতিহাসে নয়, সারাবিশ্বে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।”
খালেদা জিয়া জামিন না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি কর্মীদের মিছিলে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে এবং গণগ্রেপ্তার চালিয়েছে অভিযোগ করে এর নিন্দা জানান রিজভী। পাশাপাশি গ্রেপ্তারদের মুক্তিও তিনি দাবি করেন।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, আমিনুল ইসলাম ও আবেদ রাজা উপস্থিত ছিলেন।