তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শুক্রবার পাকিস্তানের কাছে ৫ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ২০ ওভারে করতে পারে ১৪১ রান। রান তাড়ায় শুরুটা ভালো করতে পারেননি পাকিস্তান, খুঁড়িয়েছে শেষ দিকেও। তবে হারায়নি পথ, জিতেছে ৩ বল বাকি রেখে।
সবশেষ দুই সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পর শোয়েব মালিককে প্রায় এক বছর পর দলে ফিরিয়েছে পাকিস্তান। ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দিয়েছেন প্রতিদান। ৪৫ বলে ৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তিনিই দলকে নিয়ে গেছেন কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়।
গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের উইকেট ছিল বেশ মন্থর। বল ব্যাটে এসেছে ধীরে, নিচু হয়েছে অনেক ডেলিভারি। দুই দলের ব্যাটিংয়েই তাই ছিল না টি-টোয়েন্টির ঝাঁঝ। অভিজ্ঞ মালিক সেখানে গড়ে দিয়েছেন ব্যবধান।
বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে ব্যাটিংয়ে। ছিল না খুব পরিকল্পনার ছাপ। উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ ১০ ওভার খেললেও পাননি টি-টোয়েন্টির ছন্দ। পরের ব্যাটসম্যানরাও মেটাতে পারেননি সময়ের দাবি। মাঝারি পুঁজিতে বোলাররা চেষ্টা করেন লড়াইয়ের। পেরে ওঠেননি মালিকের সঙ্গে।
ম্যাচের প্রথম ওভার থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, উইকেট বেশ মন্থর। বাংলাদেশের রানের গতিও ছিল উইকেটের মতো ধীর। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ তোলেন কেবল ৩৫ রান।
পাওয়ার প্লের পরও গতি খুঁজে পাননি দুজন। কোনো উইকেট না হারিয়েও ১০ ওভার শেষে রান ছিল মোটে ৬২।
লেগ স্পিনার শাদাব খানকে স্লগ সুইপে ছক্কা মেরে তামিম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শেকল ভাঙার। কিন্তু দ্বিতীয় রান নেওয়ার চেষ্টায় রান আউট হয়ে যান সেই ওভারেই।
৩৪ বলে ৩৯ করে ফিরেন তামিম। ইনিংসটির পথে সাকিব আল হাসানকে টপকে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের তালিকায় আবার উঠে গেছেন শীর্ষে।
আরেক ওপেনার নাঈমের ইনিংসও এগিয়েছে একই পথ ধরে। পারেননি শুরুর ঘাটতি পরে পুষিয়ে দিতে। আউট হন ৪১ বলে ৪৩ করে।
ঝড় তোলার জন্য যার দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ, সেই লিটন দাস করতে পেরেছেন ১৩ বলে ১২। আফিফ হোসেন করেন কেবল ১০ বলে ৯। প্রায় একই পথের পথিক সৌম্য সরকার (৫ বলে ৭)।
রানের গতি বাড়াতে চারে উঠে আসা মাহমুদউল্লাহও পারেননি প্রত্যাশিত দ্রুততায় রান তুলতে। ১৪ বলে করেছে ১৯। বাংলাদেশ তাই যেতে পারেননি দেড়শ পর্যন্তও।
ব্যাটিংয়ে ১৫-২০ রান কম হওয়ার হতাশা পেছনে ফেলে বোলিংয়ের শুরুটা দারুণ করেছিল বাংলাদশ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে শফিউল ইসলাম ফিরিয়ে দেন বাবর আজমকে।
টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান এই সংস্করণে প্রথমবার শূন্য রানের স্বাদ পেলেন ঘরের মাঠে নিজের প্রথম নেতৃত্বে ম্যাচে।
মুস্তাফিজুর রহমান আলগা কিছু বলে রান গুনলেও ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ হাফিজকে। পাওয়ার প্লেতে পাকিস্তান ২ উইকেট হারিয়ে তোলে কেবল ৩৬ রান।
সেই চাপ থেকে পাকিস্তান আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসে এহসান আলি ও মালিকের জুটিতে। অভিষিক্ত এহসান নিজের ২৫ রানে একটি সুযোগ দিয়েছিলেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে, কিন্তু কঠিন সেই ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি এই লেগ স্পিনার।
পরে বিপ্লবকেই উড়িয়ে মারতে গিয়ে এহসান ফেরেন ৩২ বলে ৩৬ রান করে। শফিউল-আল আমিনদের দারুণ বোলিংয়ে পাকিস্তানের পরের পথটুকু পাড়ি দেওয়া হয়ে উঠেছে কঠিন। কিন্তু অভিজ্ঞতার ভেলায় দলকে টেনে নিয়ে গেছেন মালিক।
শেষ দিকে দুর্দান্ত ডাইভ দিয়েও মালিকের ক্যাচ নিতে পারেননি লং অফ ফিল্ডার। মালিক তখন বিদায় নিলেও হতে পারত নাটকীয় কিছু। এমনকি শেষে রিজওয়ানের ওই ক্যাচ মিঠুন নিতে পারলেও ৩ বলে পাকিস্তানের লাগত ২ রান। হতে পারত অনেক কিছুই।
কিন্তু হলো না কিছুই। পারল না বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪১/৫ (তামিম ৩৯, নাঈম ৪৩, লিটন ১২, মাহমুদউল্লাহ ১৯*, আফিফ ৯, সৌম্য ৭, মিঠুন ৫*; ইমাদ ৩-০-১৫-০, আফ্রিদি ৪-০-২৩-১, হাসনাইন ৪-০-৩৬-০, রউফ ৪-০-৩২-১, মালিক ১-০-৬-০, শাদাব ৪-০-২৬-১)
পাকিস্তান: ১৯.৩ ওভারে ১৪২/৫ (বাবর ০, এহসান ৩৬, হাফিজ ১৭, মালিক ৫৮*, ইফতিখার ১৬, ইমাদ ৬, রিজওয়ান ৫*; শফিউল ৪-০-২৭-২, মুস্তাফিজ ৪-০-৪০-১, আল আমিন ৪-০-১৮-১, সৌম্য ২.৩-০-২২-০, বিপ্লব ৪-০-২৮-১, আফিফ ১-০-৬-০)
ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শোয়েব মালিক