ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধান দুই দলের চার মেয়র প্রার্থীর এক জায়গায় মিল রয়েছে মন্তব্য করে শাহদীন মালিক বলেছেন, তারা সবাই ‘বিকট ধরনের কোটিপতি’।
বাংলাদেশে সৎ পথে কোটি টাকার মালিক হওয়া যায় না বলেও মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।
বুধবার রাজধানীতে নির্বাচন নিয়ে এক আলোচনায় শাহদীন মালিক বলেন, “ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের যে প্রধান চারজন প্রতিদ্বন্দ্বী, একটা কমন ফ্যাক্টর আছে তাদের চারজনের মধ্যে- বিকট ধরনের কোটিপতি।
“এখন শিল্পপতি, অন্যান্য বিভিন্নভাবে কোটিপতি, সাংসদ হয়ে যে শত কোটিপতি হওয়া যায় বেশি বছর লাগে না। এ রকম সৃষ্টিকারী লোকরাই এখন আমাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।”
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম গার্মেন্ট ব্যবসায়ী, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি তিনি।
এই সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে। মাল্টিমোড গ্রুপের চেয়ারম্যান মিন্টু ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে লেখাপড়া করে আসা তাবিথও মাল্টিমোড গ্রুপের পরিচালকদের একজন, ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রয়েছেন তিনি।
হলফনামা: উত্তরে আতিকের চেয়ে সম্পদ বেশি তাবিথের
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের দেওয়া হলফনামায় আতিকের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে এক কোটি ২৯ লাখ ৬৮টাকা, আর তাবিথের বার্ষিক আয় চার কোটি টাকারও বেশি। আতিকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে কয়েক কোটি টাকার, তাবিথের অস্থাবর সম্পদই ৪৫ কোটি টাকার উপরে।
অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এবং বিএনপির মেয়র প্রার্থী ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন।
হলফনামা: দক্ষিণে সম্পদে ইশরাকের চেয়ে এগিয়ে তাপস
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাপসের বার্ষিক আয় ১০ কোটি টাকার উপরে, আর ইশরাকের বার্ষিক আয় কোটি টাকার কাছাকাছি। এর বাইরে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে দুজনেরই।
এক সময় নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীর দায়িত্বপালন করা শাহদীন মালিক বলেন, “এই প্রার্থীদের একজন ব্যতীত কারও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু চারজনেরই কমন ফ্যাক্টর হল, কোটি কোটিপতি। সো আমাদের আজকে গণতন্ত্র হয়েছে কোটিপতির গণতন্ত্র। আর কোটিপতি তো সৎ পথে কোটি টাকা বাংলাদেশে আয় করা যায় না, অসৎ পথে। তর্ক হতে পারে কতটা অল্প অসৎ, বেশি অসৎ ইত্যাদি।”
তিনি বলেন, “কোটিপতিদের জন্য দুঃখ-দুর্দশা, গরিবের জন্য কথা বলাটা অনেক সহজ। কারণ এই দুঃখ-দুর্দশা তাদের গায়ে লাগে না। সো আমরা কোটিপতিদের একটা প্রচারণামূলক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।”
ভোটগ্রহণে ইভিএমের ব্যবহারের বিরোধিতা করে এটাকে ‘ক্ষমতাসীনদের ভোট কারচুপির’ নতুন পন্থা আখ্যায়িত করেন শাহদীন মালিক।
ইভিএম ভোট কারচুপির একটা নতুন পদ্ধতি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই সিটি নির্বাচন হয়ে গেলে আমরা বুঝে উঠতে পারব প্রতারণার বিষয়টি। আমি মোটামুটি সম্পুর্ণ নিশ্চিত, আগামী বড় নির্বাচনে (জাতীয় নির্বাচন) প্রতারণার আরেক পদ্ধতি আসবে। ইভিএম এই নির্বাচন কমিশন ও সরকার চাচ্ছে।
নিঃসন্দেহে এর পেছনে কোনো সৎ উদ্দেশ্য, নাগরিকদের ভোট, গণতন্ত্র, কোনো কিছু থাকতে পারে না। আমাদের ভোট যাতে বানচাল হয়, সুক্ষ্ম কারচুপির পদ্ধতি বের করেছে।
“ফলাফল কী হবে? আমরা বেশিরভাগ লোক জানি, এখানে কারচুপি হবে।”
কীভাবে ভোট কারচুপি হতে পারে তার একটা ধারণাও তুলে ধরেছেন আইনজীবী শাহদীন মালিক।
তিনি বলেন, “ইভিএমের একটা প্রধান অবদান হবে, ভোটের দিন খুব অল্প সংখ্যক লোক ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হবে। ভোটার উপস্থিত যত কম হয়, এই প্রতারণা করা, লোক ঠকানো, বিভিন্ন ধরনের কারচুপি সহজ হয়। এটা আমার দৃষ্টিতে এর পেছনে সৎ উদ্দেশ্য, সৎ নিয়ত, গণতন্ত্র, আমাদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা- এর কোনোটাই থাকতে পারে না।”
স্বাধীনতা অধিকার ফোরামের উদ্যোগে ‘অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনে বিশ্বব্যাপী ইভিএম প্রত্যাখ্যান এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা’ শিরোনামে এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম।
সংগঠনের সভাপতি মনিরুজ্জামান মুনিরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস কে নোমানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, স্বাধীনতা ফোরাম আন্দোলনের উপদেষ্টা শেখ ফরিদুল ইসলাম, ইসমাইল তালুকদার খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।