ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ায় অনশন ভেঙেছেন আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সরস্বতী পূজার জন্য আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে আমরণ অনশন চালিয়ে আসছিলেন একদল শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের পক্ষে জনমত জোরাল হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে শনিবার আকস্মিকভাবে জরুরি বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন।
কয়েক ঘণ্টার বৈঠক শেষে সন্ধ্যার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের সামনে এসে ভোটের তারিখ পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি করার ঘোষণা দেন।
এই ঘোষণার পর রাজু ভাস্কর্যে অনশনরতদের কাছে ছুটে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। শিক্ষার্থীদের জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান তিনি।
এ সময় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে অনশনকারীদের একজন সুস্মিতা দে বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় অত্যন্ত আনন্দের।
“এটা আমাদের জন্য গর্বের। অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা যৌক্তিক দাবি আদায় করেছি। এর মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হল, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ।”
নির্বাচন কমিশন ভোট পেছানোর এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত-মৈত্রী হল সংসদের ভিপি সুস্মিতার।
“প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, শেষ মুহূর্তে হলেও তিনি আমাদের যৌক্তিক দাবি বুঝতে পেরেছেন। তিনি আমাদের মমতাময়ী মা,” বলেন তিনি।
৩০ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি।
ওই দিন সরস্বতী পূজা বলে তফসিল ঘোষণার পরপরই তার বিরোধিতা করেছিল পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদও ভোটের দিন পরিবর্তনের দাবি জানায়। কিন্তু তা আমলে নেয়নি ইসি। এরমধ্যে ভোটের তারিখ পরিবর্তনে হাই কোর্টে রিট আবেদন হলে তা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ইসি ৩০ জানুয়ারি ভোট করার বিষয়ে আরও শক্ত অবস্থান নেয়।
ইসির পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, ৩০ জানুয়ারিই ভোটগ্রহণের জন্য ‘উপযুক্ত’ দিন। কারণ তার পরের দিন ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার বলে সেদিন ভোটগ্রহণের নজির নেই। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে বলে প্রায় এক মাস আর ভোট করা যাবে না।
ভোটের কারণে পেছাল এসএসসি পরীক্ষা
এরপর ভোট পেছানোর দাবিতে অনশনে বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীরা। শনিবার তৃতীয় দিনের মতো অনশন করছিলেন তারা। অনশনে থেকে এরমধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আরও ডজনখানেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে সেখানেই স্যালাইন লাগিয়ে রাখা হয়েছিল।
এদিন তাদের এই কর্মসূচি সংহতি জানান জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক গোবিন্দ মণ্ডল, গণিত বিভাগের শিক্ষক নেপাল চন্দ্র রায়, চারুকলা ইনন্সিটিউটের শিক্ষক ড. মুকুল কুমার বাড়ৈই, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন প্রমুখ।
শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানান বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ -খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তও।
অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সকাল থেকেই বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীসহ ডাকসু ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রাজু ভাস্কের্যে অবস্থান নেন।