শিল্পকারখানা নির্মাণের সময় পাশেই একটি জলাধার রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্ঘটনা হলে আগুন নেভানোসহ অন্যান্য প্রয়োজনে পানির সংস্থানে এই নির্দেশনা দেন তিনি। একই সঙ্গে বর্ষায় এসব জলাধারে বৃষ্টির পানি ধরে রাখারও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মঙ্গলবার এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী এবং একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
শিল্পকারখানায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) স্থাপনের কথা বলেছেন তিনি। উন্নয়ন প্রকল্পের সেবা পেতে যাতে একদিনও বিলম্ব না হয়, এ উদ্দেশ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং প্রশিক্ষিত জনবল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ প্রশিক্ষকের প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, প্রয়োজেনে তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করতে হবে। সারাদেশে আরও তিন শতাধিক টেকনিক্যাল স্কুল এবং কলেজ প্রতিষ্ঠা প্রকল্প প্রসঙ্গে জনবলের প্রতি এই গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। ‘৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন’ নামের এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য হ্রাস ও দক্ষ মানবম্পদ গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে দক্ষ জনবলের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে প্রবাসী আয় বাড়ানো। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। আগামী চার বছরে এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নুতন করে আর কোনো সড়ক নির্মাণ করবে না সরকার। প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যমান সড়কের সম্প্রসারণ এবং মান উন্নয়ন করা হবে। বৈঠকে সাতটি প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। এর মধ্যে পাঁচটি নতুন প্রকল্প। বাকি দুটি পুরনো প্রকল্পের সংশোধন। এসব প্রকল্পের অনুমিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৪৬ কোটি টাকা।
অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- বিসিক শিল্প পার্ক সিরাজগঞ্জ প্রকল্পের সংশোধনী। প্রকল্পটি এ নিয়ে তিনবার সংশোধন করা হলো। ২০১০ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালে। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৭৯ কোটি টাকা। দফায় দফায় সময় বৃদ্ধিতে ব্যয় দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। মোট ব্যয় এখন ৭১৯ টাকারও বেশি। সময় বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ভবন নির্মাণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৩ কোটি টাকা। কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর এলাকায় নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৯৩ কোটি টাকা। ২৩৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্পের সংশোধনী অনুমোদন করা হয় বৈঠকে।
অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে তিনটিই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের। এগুলো হচ্ছে- ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরার বেতগ্রাম-তালা-পাইকগাছা-কয়রা সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্প। ৩৬৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগ সড়ক ও লক্ষ্মীপুর-আলেকজান্ডার-সোনাপুর-মাইজদী মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প ও ৮৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভোলা-পরান-তালুকদার হাট-চরফ্যাসন আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলোর কাজ এ মাসেই শুরু হচ্ছে।
বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।