রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে অভিযোগে যখন মিয়ানমার থেকে পশ্চিমাবিশ্ব মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, ঠিক তখনই মিয়ানমারের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে ডজনেরও বেশি চুক্তি করেছে চীন।
দুই দিনের সফরে মিয়ানমারে গিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শনিবার এসব চুক্তি করেছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
কিন্তু ১৯ বছরের মধ্যে চীনের কোনো শীর্ষ নেতার প্রথম এ সফরে নতুন বড় কোনো প্রকল্পের বিষয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বেইজিংয়ের বিনিয়োগের বিষয়ে এমনিতেই মিয়ানমার বেশ সতর্ক থাকে, আর চলতি বছর দেশটিতে নির্বাচন থাকায় তারা আরও সতর্ক ছিল।
তারপরও শি ও মিয়ানমারের নেতা অং সান সু চি চীনের বেল্ট এন্ড রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে ৩৩টি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।
তারা বিশাল বিনিয়োগের অবকাঠামো পরিকল্পনা চীন-মিয়ানমার ইকোনোমিক করিডোর, দক্ষিণপশ্চিম চীন থেকে ভারত মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত রেল সংযোগ, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে ১৩০ কোটি ডলারের গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, সীমান্তে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র ইয়াঙ্গনে নতুন একটি শহর গড়ার প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে সম্মত হয়েছেন।
তবে বেইজিংয়ের সমর্থনে মিয়ানমারে নির্মাণাধীন ৩৬০ কোটি ডলারের বিতর্কিত বৃহৎ বাঁধের কথা তারা উল্লেখ করেননি। ২০১১ সাল থেকে ওই বাঁধের কাজ স্থগিত হয়ে আছে।
এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মিয়ানমারে সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারি দেশ হিসেবে চীনের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করাই শি-র সফরের লক্ষ্য বলে মত বিশ্লেষকদের।
শুক্রবার তাকে স্বাগত জানিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ‘নতুন যুগ’ শুরুর প্রশংসা করেন।
শি বলেন, “আমরা একসঙ্গে কষ্টগুলি কাটিয়ে ওঠা ও পরস্পরকে সহায়তা করার লক্ষে ভবিষ্যতের একটি রোডম্যাপ আঁকছি যা ভাইয়ের মতো ও বোনের মতো ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রাণবন্ত করবে।”
নিজের বক্তব্যে সু চি চীনকে ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী মহান দেশ’ বলে উল্লেখ করেন।
শি মিয়ানমারের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত ও দ্বন্দ্বে লিপ্ত এলাকাগুলোর (যেখানে চীনের অবকাঠামো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নাধীন আছে) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
শনিবারই তার মিয়ানমার ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ইতোপূর্বে কখনো কখনো সমস্যাসঙ্কুল থাকলেও রোহিঙ্গা প্রশ্নে চীন মিয়ানমারের পাশে দাঁড়ানোর পর থেকে দু’দেশের সম্পর্ক অনেকটাই উষ্ণ হয়েছে।