চীন থেকে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া সংক্রামক ব্যাধি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মঙ্গলবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আরও বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, সবাই সতর্ক থাকুন। সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে, ভয়ের কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশে এখনও কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাস বাংলাদেশে আসবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ওই সভায় স্বাস্থ্য ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, এই ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটি যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য দুই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর একটি হচ্ছে ভাইরাসটি যাতে কোনোভাবেই দেশের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে। স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়েছে। একই সঙ্গে হ্যান্ড স্ক্যানারও সরবরাহ করা হয়েছে। বিমানবন্দরের প্রতি বাড়তি নজর রাখা হচ্ছে। সিভিল এভিয়েশন বিভাগ সার্বক্ষণিক সহায়তা করছে। চীন থেকে আগতদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আগামী ১৪ দিন পর্যন্ত এই নজরদারি অব্যাহত থাকবে। কারণ ভাইরাসটি আক্রমণ করলে ১৪ দিন পর উপসর্গ দেখা দেয়। অপরটি হচ্ছে, করোনাভাইরাস বহনকারী কাউকে পাওয়া গেলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চালু করা পৃথক ওয়ার্ডে তাদের ভর্তি করা হবে। এসব চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের সব হাসপাতালে এই গাইড লাইন পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে সব সরকারি হাসপাতালের পরিচালক, বিভাগীয় পরিচালক, জেলা সিভিল সার্জনদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডিসি ও এসপিদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীনের উহান রাজ্যে আবির্ভাব ঘটা করোনাভাইরাসে ইতোমধ্যে একশর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে তিন হাজারের মতো মানুষ। যতটুকু জানা যায়, এই ভাইরাস ইঁদুর-বাদুড় থেকে মানুষের দেহে আসে এবং ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়। কেউ আক্রান্ত হলে বেশি মাত্রায় জ্বর ও কাশি হবে। এমন উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন।
চীনে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, চীনের উহানে বাংলাদেশের তিনশর মতো শিক্ষার্থী আছেন। তাদের কেউ এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তারা আসতে চাইলে, তাদের যেন নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ১৪ দিন শেষ না হওয়া পর্যন্ত চীন সরকার কাউকে দেশত্যাগে অনুমতি দেবে না। এই ১৪ দিনের বাধ্যবাধকতা শেষ হবে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি। সুতরাং এই মুহূর্তে চীনে যাতায়াত না করার পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু কোনো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি।
জ্বর-কাশি নিয়ে এক চীনা নাগরিক রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন তথ্যে সেখানে উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, একজন চীনা নাগরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি এখন সুস্থ। বাসায় ফিরতে চাচ্ছেন। তার স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পর তার অসুস্থতা নিয়ে মন্তব্য করা যাবে।