রাজধানীর কাফরুল এলাকায় একটি মাত্র খেলার মাঠ ছিল শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য। সেই মাঠটিও নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। মাঠের মাঝখানে তৈরি করা হচ্ছে একটি বহুতল ভবন। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র সরেজমিন পরিদর্শনও করেছেন। কিন্তু তাতেও কাজ বন্ধ হয়নি। ঘটনাটি ঘটছে রাজধানীর মিরপুরের ১৩ নম্বরের সি নম্বর ব্লকের ৪ ও ৫ নম্বর রোডের সংযোগস্থলে অবস্থিত হাজি আলী হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে নির্বিকার।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মীর আশরাফ হোসেন বলেন, কিছু দিন আগে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে লোকজন এসে জানায়, তাদের স্কুলে একটি ছয়তলা ভবন নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। তারপর তারা মাপজোক করে। তারাই জায়গা নির্ধারণ করে কাজ শুরু করে। এ ক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা নেই। কোনো মতামতও নেওয়া হয়নি। তিনি টাকা বরাদ্দের কথাও জানেন না।
এ ব্যাপারে ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র এবং ওই এলাকার কাউন্সিলর (ডিএনসিসির ৪ নম্বর ওয়ার্ড) জামাল মোস্তফা বলেন, এলাকার শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য রাজধানীতে মাঠের তীব্র সংকট। ওই মাঠটিতে সবাই খেলাধুলা করে। এর আগে সেটা নোংরা অবস্থায় ছিল। তিনি উদ্যোগ নিয়ে সেটি সমতল করে মাঠ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ করে দেন। কিছু দিন আগে এলাকাবাসী তার কাছে অভিযোগ দিয়ে মাঠ ধ্বংসের কথা জানায়। পরে তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এটা নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি হলে হয়তো কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু ইতোমধ্যে ভবন নির্মাণের জন্য গভীর করে খননের কাজ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।
এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলরা জানান, কোনো স্কুলে ভবন তৈরির সময় কর্তৃপক্ষ যে জায়গা নির্ধারণ করে দেয়, সেখানেই তারা ভবন তৈরি করে দেন। স্থান নির্ধারণের দায়িত্ব শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ বা গভর্নিং বডি যে জায়গাটা চূড়ান্ত করে, সেখানেই ভবন তৈরি করে দেওয়া হয়। তাদের লিখিতও নেওয়া হয় এ ব্যাপারে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা থাকে না।
সরেজমিন দেখা যায়, ১৩ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৪ ও ৫ নম্বর রোডের পাশে প্রায় চার বিঘা আয়তনের মধ্যে হাজি আলী হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলের উত্তর পাশে রয়েছে একটি চারতলা ভবন। পাশেই আরেকটি ভবন একতলা পর্যন্ত উঠে বাকি কাজ বন্ধ। এছাড়া দক্ষিণ পাশের দেয়ালজুড়ে রয়েছে একটি লম্বা টিনশেড ভবন। মাঝখানে ছিল খেলার মাঠটি। সেখানেই প্রতিদিন খেলাধুলা করত শিক্ষার্থী ও আশপাশের শিশু-কিশোররা। স্কুল শুরুর আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশনও সেখানেই হতো। ঠিক যেখানে খেলাধুলা ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন হতো সেখানেই শুরু হয়েছে ভবনটির নির্মাণকাজ।
ছয়তলা ভবন তোলার জন্য প্রায় ১৫ ফুট গভীর করে খোঁড়া হয়েছে পুরো এলাকা। নিচে দেওয়া হয়েছে কংক্রিটের ঢালাই। কলামের জন্য লোহার রড দিয়ে খাঁচাও তৈরি হয়েছে। আর খোঁড়াখুঁড়ির মাটি-বর্জ্য পাশেই উঁচু ঢিবি করে রেখে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন জাতীয় সংগীত পরিবেশনেরও তেমন স্থান নেই।
স্থানীয়রা জানান, স্কুলে ভবন তোলায় তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সেটা স্কুল কম্পাউন্ডের একটি পাশে হলে মাঠটি রক্ষা পেত।
স্থানীয় বাসিন্দা মমিনুল হোসেন বলেন, ওই এলাকায় আগে আরেকটি খেলার মাঠ ছিল। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ওই মাঠটিও এখন আর নেই। পুরো কাফরুলে এই একটি মাত্র খেলার মাঠ ছিল। নতুন এই ভবন উঠলে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা আবরার হোসেন বলেন, ভবনটি মাঠের মাঝখানে এমনভাবে তোলা হচ্ছে, যাতে কোনো পাশেই আর মাঠ থাকবে না। কিন্তু দক্ষিণ বা পূর্ব পাশে ভবনটি করলে একপাশ মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা যেত। তাহলে আর কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না। এছাড়া যেখানে ভবন তোলা হচ্ছে, এক সময় সেখানে ডোবার মতো ছিল। ফলে ওই স্থানের মাটির মানও ভালো নয়।
মনোয়ার হোসেন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, স্কুল গভর্নিং বডির উদাসীনতায় এটা হয়েছে। তারা মাঠের কোনো গুরুত্বই বোঝেনি। অথচ খেলার মাঠ রক্ষার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা রয়েছে যে, কোনো খেলার মাঠ নষ্ট করা যাবে না। ভালো মাঠটা নষ্ট করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতি মতিউর রহমান মাইকেলের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।