গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘সরকার পরিবর্তনে আর সভা-সমাবেশ নয়, ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে হবে। এটা অর্জনে জনগণকে অনুপ্রাণিত করতে আমরা চলুন সবাই ভূমিকা রাখি। যারা ক্ষমতা আত্মসাৎ করেছে তাদের চিহ্নিত করে বিতাড়িত করি। আসুন আর এক মিনিটও দেরি না করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণের ক্ষমতা আমরা উদ্ধার করি। শহর-জেলায় আমাদেরকে যেতে হবে, বলতে হবে-রুখে দাঁড়ান। দেশটা আমাদের সকলেরই, দেশের ক্ষমতা যারা আত্মসাৎ করেছে তাদের হাত থেকে আমরা দেশকে মুক্ত করি।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে হবে। সেই সংসদে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে তারা দেশ পরিচালনা করবে। এখন যারা আছে, তাদের লাথি মেরে দেশ থেকে বের করে দিতে হবে। পদত্যাগ পদত্যাগ বললে হবে না। পদত্যাগ না করলে লাথি মেরে নামাতে হবে। ওই সব ভাষায় না হলে, তাদের হাত ধরে টেনে রাস্তায় নামিয়ে দিতে হবে। সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশের মালিকের ভূমিকায় আসতে হবে। উন্নয়নের নামে যে লুটপাট হয় এগুলো থেকে দেশকে মুক্ত করতে দেশের মালিক জনগণকে আবার দাঁড়াতে হবে।’
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন তিনি। রাজনৈতিক এবং ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুই বছর কারাবাসের প্রতিবাদে ও মুক্তির দাবিতে সভাটির আয়োজন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান, জেএসডির আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্যের ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মহসিন রশিদ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক হোসেন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, মমিনুল ইসলাম, জেএসডির শাহ আকম আনিসুর রহমান খান, বিকল্পধারার অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, শাহ আহমেদ বাদল ও গণ দলের গোলাম মাওলা চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
স্বাধীনতার ৪৮ বছরে কেউ দেশে রাজবন্দি হবে এটা শুনতে কেমন লাগে বলে উল্লেখ করে কামাল হোসেন বলেন, ‘আজ বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সভা করতে হবে এটা অকল্পনীয় ও দুঃখের বিষয়। এখন সভা-সমাবেশে নয়, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে সামনে রেখে মাঠে নামবো। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে মাঠে নামতে হবে। চলেন আমরা মালিক হিসেবে ভূমিকা রাখি। যারা আমাদের ক্ষমতাকে আত্মসাৎ করেছে তাদের চিহ্নিত করি। আমাদের রাস্তায় নেমে বলতে হবে দেশে গণতন্ত্র থাকবে, সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হবে। এখন সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না।’
দেশে এখন নির্বাচনের নামে প্রহসন হয় দাবি করে ড. কামাল বলেন, ‘তারা রাষ্ট্রক্ষমতাকে জবরদখল করে চালিয়ে যাচ্ছে। আজ সব মানুষের পক্ষে বলতে হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের ইতিহাসে দেখেছি, জনগণকে অধিকার বঞ্চিত করে কেউ স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। শাসকরা চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাদের ভয়াবহ পরিণতি হয়েছে। আজ যারা স্বৈরাচার চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের সেই ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখা দরকার যে বাঙালি কখনও স্বৈরাচারকে মেনে নেয়নি। আজ আমরা সবাই চাই, শান্তিপূর্ণভাবে দেশটাকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’
কামাল হোসেন বলেন, ‘তারা কী কী প্রচার করছে, অমুক বর্ষ এভাবে উদযাপন করবে। সবাইকে একভাবে উদযাপন করতে হবে। দেশের মালিক হিসেবে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করবে, এটা একটা প্রহসন।’
আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট গঠন করার আগে আমরা ৮ দফা দাবি দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও দাবিই পূরণ হয়নি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছিল দাবিগুলোর মধ্যে। আমি বিএনপি করি না। কিন্তু গণতন্ত্রের স্বার্থে খালেদা জিয়ার মুক্তি জরুরি।’
আ স ম রব বলেন,‘শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, আপনি কি শান্তিমতো ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবেন, নাকি অন্যভাবে যাবেন। সিটি নির্বাচনে মানুষ ভোট না দিয়ে প্রমাণ করছে গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা পরিবর্তন হবে না। তাই তারা ভোট দিতে যায়নি। জনগণ আমাদের বলছে, রাস্তায় নামার জন্য তারা প্রস্তুত। এখনও সময় আছে, শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় নেন। না হলে কীভাবে হবে সেটা বুঝতেও পারবেন না।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই স্বৈরাচার সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে ফ্রন্টের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আজ না হোক, এক মাস কিংবা দুই মাস পরে হলেও কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে। না হলে জনগণ নিজেরাই আন্দোলনের পথ বেছে নেবে। আমাদের কথা না বলে আন্দোলনে নামতে হবে।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি নির্বাচনে যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে কিছুটা উৎসাহিত করেছিলাম। এখন আমি বলতে চাই, তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আর কোনও নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না।’
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘এখন আর বক্তব্য দেওয়ার সময় নাই, রাস্তায় নামতে হবে। আন্দোলন করে খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।’
প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নুরল আমিন ব্যাপারী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির শহীদুল্লাহ কাউসার ও ফ্রন্টের দফতরের নেতা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু।