আবাহনীর নায়ক মুশফিক

mushfiq-150320-04

ক্রিকেট হোক বা ফুটবল, আবাহনী বা মোহামেডানের নাম এখন আলোড়ন জাগায় সামান্যই। অথচ একসময় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই ক্লাবের উত্তেজনা নাড়িয়ে দিত গোটা দেশকে। ছেলেবেলায় সেসব গল্প শুনেছেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু নিজে ক্রিকেটার হয়ে পাননি সেই রোমাঞ্চের ছোঁয়া। আবাহনীর হয়ে অভিষেকে দলকে জিতিয়ে মুশফিক ফিরে গেলেন সেই সোনালী অতীতে। জানালেন, একসময় তিনি সমর্থন করতেন মোহামেডানকে।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে এবারই প্রথম আবাহনীতে খেলছেন মুশফিক। নতুন ঠিকানায় প্রথম ম্যাচেই রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দলের বিপর্যয়ে খেলেন ১২৪ বলে ১২৭ রানের অসাধারণ ইনিংস। ব্যাট হাতে যেমন, তেমনি নেতৃত্বেও ছিলেন দারুণ।

একসময় ঢাকার ক্রীড়াঙ্গনে আবাহনী, মোহামেডানের মতো দলগুলির প্রতিটি ম্যাচ ঘিরে থাকত অন্যরকম উত্তেজনা। সেই শিহরণ ছড়িয়ে পড়ত গোটা দেশে। বদলে যাওয়া সময় ও বাস্তবতায় এখন অনেকের কাছে সেসব মনে হতে পারে রূপকথার গল্প।

আবাহনীর হয়ে প্রথম ম্যাচের পর মুশফিকের স্মৃতিচারণায়ও উঠে এলো সেসব। শোনালেন নিজের শৈশবের গল্প।

“রোমাঞ্চ বলতে, আবাহনী-মোহামেডানের অনেক গল্প শুনেছি। ওই সময়ে দল কোনো ম্যাচ হেরে গেলে নাকি অনেক রাত পর্যন্ত মাঠ থেকে বের হতে পারত না! আমার ওগুলো দেখার সৌভাগ্য হয়নি। আসলে এখন আন্তর্জাতিক ম্যাচ এত বেশি দেখে হয়তো তাদের সময় বের করে লিগের ম্যাচ দেখা কঠিন হয়ে যায়।”

“সত্যি বলতে আমি ওই সময়ে মোহামেডানের সাপোর্টার ছিলাম। পরে যখন দেখলাম, আবাহনী সব সময় সেরা দল বানায় এবং ফুটবলে ও ক্রিকেটে নিয়মিত চ্যাম্পিয়ন হয়, আস্তে আস্তে আবাহনীর প্রতি আমার দুর্বলতা বাড়ে। সাপোর্টার হিসেবে তো আপনি সব সময় চাইবেন, জয়ের ভেতরে থাকে এমন দলকে সাপোর্ট করতে। সেদিক থেকে আবাহনীই সেরা।”

মুশফিকের আবাহনী অভিষেকে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে দল জিতেছে ৮১ রানে। তবে শুরুতে আবাহনীকে ভড়কে দিয়েছিল পারটেক্স। দুই ওপেনার লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ রান করতে পারেননি। মুশফিক উইকেটে যান দ্বিতীয় ওভারেই, দলের রান তখন ২ উইকেটে ৬। একসময় সেটি হয়ে যায় ৫ উইকেটে ৬৭। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন মুশফিক।

ম্যাচের পর বললেন, চাপই তার সেরাটা বের করে আনে।

“এই চাপগুলো আমি সবসময় উপভোগ করি। এগুলো উপভোগ করলে খেলোয়াড় হিসেবে তা আমাকে আরও দুই ধাপ এগিয়ে দেবে। আমি সব সময় এটা উপভোগ করি। শুধু আবাহনীর জন্যই না, যে পর্যায়েই খেলি, দলের জয়ে আমার অবদান যেন বেশি থাকে, এটাই মাথায় থাকে।”

ইনিংস শেষে তার স্ট্রাইক রেট ছিল একশর বেশি, অথচ প্রথম রানের দেখা পেতে লেগেছিল ২৩ বল। ফিফটি স্পর্শ করেন ৭৫ বলে। পরে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ছাপিয়ে যান রান-বলের দূরত্ব।

শুরুতে ধুঁকলেও মুশফিকের বিশ্বাস ছিল, থিতু হয়ে গেলে তিনি ঠিকই ভালো করবেন।

“আমি নিজেও ভুলে গেছি যে প্রথম রান করতে এত বল লেগেছে। আমার একটা বিশ্বাস ছিল যে, আমি যদি টিকে থাকি, সেট হয়ে যেতে পারি, তাহলে এটাকে গ্রিপ করতে পারব। চাওয়া ছিল, আমরা যেন একটা জুটি গড়ে তুলি। আমার কাজটা সহজ করে দিয়েছে মোসাদ্দেক, পরে সাইফ উদ্দিনও।”

মোসাদ্দেক করেন ৭৪ বলে ৬১ রান। মুশফিকের সঙ্গে তার জুটি ছিল ১৫৫ বলে ১৬০ রানের। শেষ দিকে সাইফ ৫ ছক্কায় ১৫ বলে ৩৯ রান করে দলের রান নিয়ে যান তিনশর কাছে। শেষ ১৫ ওভারে আবাহনী তোলে ১৫৬ রান।

মুশফিক জানালেন, শুরুতে বেশ স্নায়ুর চাপে ভুগেছেন। শেষ পর্যন্ত সামনে থেকে দলের জয়ে নেতৃত্ব দিতে পেরে আবাহনী অধিনায়কের কণ্ঠে ছিল স্বস্তি।

“ভালো লাগছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে আবাহনী টপ টিম। শুরুটা ভালো হওয়ায় ভালো হয়েছে। প্রথম ম্যাচ ছিল, সত্যি বলতে একটু নাভার্স ছিলাম। সবারই নার্ভাস থাকা স্বাভাবিক। চ্যাম্পিয়ন দলের ওপর সব সময় চাপ থাকে। প্রতিপক্ষ যত ছোট দল বা বড় দল হোক, জেতার জন্যই আবাহনী খেলে। দিন শেষে দল জিতেছে, এটিই আনন্দের।”

Pin It