যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) আসন্ন বৈঠকে জিএসপি নিয়ে আলোচনায় ‘ইতিবাচক ফলাফল’ আশা করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়ার দায়িত্বে থাকা মার্কিন ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর) ক্রিস্টোফার উইলসনের সঙ্গে মঙ্গলবার সচিবালয়ে বৈঠক করার পর এ কথা বলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় টিকফা ফোরামের সভায় উইলসনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে টিকফা চুক্তি হওয়ার পর এটি হবে পঞ্চম বৈঠক।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যকে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) দেওয়ার বিষয়ে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে তার ‘ইতিবাচক’ বলেই মনে হয়েছে।
“জিএসপি নিয়ে আবেদন করার কিছু নেই৷ কিছু ক্ষেত্র আছে, আলোচনা হবে। তারা যদি মনে করে এসব পূরণ করা হয়েছে, তাহলে এ সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।”
জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেসের (জিএসপি) আওতায় এক সময় বাংলাদেশের বেশ কিছু পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত।
২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও পরের বছর রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংগঠন ‘আমেরিকান অর্গানাইজেশন অব লেবার-কংগ্রেস ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও) এর আবেদনে ২০১৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়।
এই সুবিধা ফিরে পেতে পোশাক কারখানার কাজের পরিবেশ উন্নয়নসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি খাতের পরিবেশ উন্নয়নের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর তৈরি পোশাক খাতসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে উন্নয়ন করে সেই চিত্র জানানোর পরেও জিএসপির ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি।
গত অর্থবছর দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যার মধ্যে ৬৭৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
এবারের টিকফা বৈঠকের মূল আলোচ্যবিষয়গুলো জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, “বৈঠকে অনেক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। যেমন তুলা, কাস্টমস, শ্রমিক, জিএসপিসহ আরো অনেক ইস্যু রয়েছে। এছাড়া তারা যে সকল ইস্যু নিয়ে মনে করেন আলোচনা করা দরকার… আমাদেরও যেমন ইস্যু আছে জিএসপি নিয়ে। সব বিষয়ে খোলা মনে আলোচনা হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ‘আরো উন্নত করতে চায়’ মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “তারা মনে করে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য অনেক ভালো স্থান।… এখানকার পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে গেছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
“এদেশের অর্থনীতিকে তারা মনে করছে গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিবেচনায় আজ আলোচনা হল। ফাইনালি বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে টিকফার বৈঠকে আলোচনা করা হবে। বাণিজ্য প্রতিনিধি খুব আশাবাদী, আলোচনা একটি ফ্রুটফুল রেজাল্ট নিয়ে আসবে।”
যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট কোনো খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী কি না জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “তারা বলেছে আমরা কোথায় বিনিয়োগ চাই। আমরা জানিয়েছি, বাংলাদেশ ওপেন প্লেস। যে কোনো স্থানে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।”
বাংলাদেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, ভারী শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে মার্কিন উদ্যোক্তারা যে বিনিয়োগ করতে পারেন, সে কথা বাণিজ্য প্রতিনিধির সামনে তুলে ধরার কথা জানান টিপু মুনশি।
“আমাদের সরকার বিনিয়োগের ক্ষেত্র অনেক সহজ করেছেন, অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। যারা বিনিয়োগ করবে তারা ব্যবসার শতভাগ লাভ ফেরত নিতে পারবে। তারপর ট্যাক্স হলিডে আছে ৫ ও ১০ বছরের। এসব সুবিধার কথা তারা শুনে গেল। তারা ফিরে গিয়ে যে খাতে বিনিয়োগ করতে চায় তা জানাবে।”
ক্রিস্টোফার উইলসন বলেন, তার দেশ বাণিজ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চায়। সেজন্য বাংলাদেশের কাস্টম প্রসেস, ট্যাক্স, ই-কমার্স ইত্যাদি বিষয় আরো সহজ হওয়া প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা অংশীদাত্বির ভিত্তিতেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে।
“বাণিজ্য বাধাগুলো দূর হলে বাণিজ্য সহজ হবে। বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বেশ চাহিদা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা বাংলাদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে টিকফা বৈঠকে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।”