বিশ্বকাপের মতো বড় কোনো আসরে সেঞ্চুরি করাটা একজন ক্রিকেটারের কাছে স্বপ্নের মতো। একজন ব্যাটসম্যান বিশ্বকাপে তার সেরাটা দেয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিংবা সাকিব-আল-হাসান কিন্তু ঠিকই সফল হয়েছেন। এই দুই জনের রয়েছে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব।
তবে এই দুজন ছাড়াও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আরেক জনের রয়েছে সেঞ্চুরি করার অভিজ্ঞতা। তবে তিনি সবার থেকে আলাদা। কারণ তার নামের আগে রয়েছে ‘বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটার’এই তকমাটি লেগে রয়েছে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান জয়। চলতি বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে।
ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ঘরে তোলে জুনিয়র টাইগাররা। যে কোনো লেভেলের বিশ্বকাপের মঞ্চে সেমিফাইনালে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের কোনো সেঞ্চুরি নেই। এই দিক দিয়ে সাকিব-মাহমুদউল্লাহকেও ছাপিয়ে সবার থেকেই আলাদা হয়ে থাকবেন মাহমুদল।
করোনা ভাইরাসের কারণে দেশর ক্রিকেট স্থবির হয়ে আছে। অনির্দিষ্টিকালের জন্য স্থগিত সব ধরনের ক্রিকেট। তাই ক্রিকেটাররা বাধ্য হয়ে ঘরে সময় পার করছেন।
এসময় সঙ্গে কথা বলেছেন বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার মাহমুদুল হাসান জয়। মুঠোফোনে সঙ্গে শেয়ার করেছেন বিশ্বকাপের সেঞ্চুরির সময়টুকুর অভিজ্ঞতার কথা। জানিয়েছেন নিজের পরিকল্পনার কথা।
সেঞ্চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে অল্প কথায় মাহমুদুল বলেন, ‘আসলে এটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। সেঞ্চুরির কথাটা মনে হলে মাঝে মাঝে নিজের কাছে প্রাউড ফিল হয়। কারণ ওয়ার্ল্ড কাপ সেমিফাইনালে বাংলাদেশের আর কোনো সেঞ্চুরি নেই। আমারই প্রথম, আমার কাছে যখনই মনে হয় গর্ববোধ করি।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রয়োজনের সময় সেঞ্চুরি করেছেন মাহমুদুল। শুরুতেই জোড়া উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল জুনিয়র টাইগাররা। সেখান থেকে ঠান্ডা মাথায় ম্যাচ বের করে নিয়ে এসে দলকে সহজ একটা জয় উপহার দেন মাহমুদুল।
এই চাপটাকে কিভাবে জয় ‘জয়’ করলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপে একটু চাপ থাকবেই, সেমিফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশ। আমার তেমন চাপ মনে হয়নি কারণ দুই উইকেট যাওয়ার পর আমি চেষ্টা করেছি পার্টনারশিপ করে আস্তে আস্তে এগোনোর। স্ট্রাইক পরিবর্তন করে বিশ রান বিশ রান করে এগুলে পার্টনারশিপ হবে। যেহেতু লো স্কোরিং ম্যাচ আমরা যদি একটা ৭০-৮০ রানের পার্টনারশিপ করতে পারি তাহলে হয়তো ম্যাচটা বের হয়ে যাবে এটাই চিন্তা করে এগিয়েছি।’
মাহমুদুল মনে করেন বিশ্বকাপের আগে দেশের বাইরে বেশ কয়েকটি সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ, যার অভিজ্ঞতাই কাজে লেগেছে বিশ্বকাপে। তবে সেগুলো এখন অতীত। সামনে এগিয়ে যেতে হলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তবে দেশের বাইরে ইংল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকার মতো দেশে বেশি বেশি সিরিজ খেলতে পারলে এই সাফল্য ধরে রাখা সম্ভব। কারণ হিসেব তিনি মনে করেন দেশের উইকেট আর সেখানকার উইকেট এক নয়।
মাহমুদুল বলেন, ‘আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ অনেক সিরিজ খেলেছি। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডে অনেকগুলো ট্যুর করেছে দল। যদি এরকম টুর থাকে তবে আমাদের ভিত্তিটা শক্ত করার আরো সুযোগ থাকবে। আমরা ভালোভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারবো। এই ট্যুর গুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এশিয়ার উইকেট আর বাইরের উইকেট, যেমন ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড-সাউথ আফ্রিকার উইকেটগুলো একটু ভিন্ন হয়। আমরা যদি এই দেশগুলোতে বেশি খেলি তাহলে আমরা আরো অনেক উন্নতি করতে পারব।’
শুধু তাই নয় পাশাপাশি দেশের উইকেটগুলো যদি আরও পেস বান্ধব করা হয় তবে তাদের জন্য ভালো বলে মনে করেন জয়।
মাহমুদুল বলেন, ‘বোর্ড থেকে বলা হয়েছিল অনূর্ধ্ব ২১ দল করবে। যদি এটা করা হয় আমরা যারা একসাথে আছি সবাই একসাথে খেলতে পারব আরো ভালো কিছু করতে পারবো। পাশাপশি আমাদের দেশে উইকেটগুলো যদি আরেকটু বাউন্সি হয় অথবা যদি একটু ঘাস দিয়ে করা হয়, স্পোর্টিং হয় তাহলে হয়তো বা ওগুলো বিদেশে গিয়ে মানিয়ে নিতে বেশি অসুবিধা হবে না।’
নিজের লক্ষ্যের কথা বলতে গিয়ে মাহমুদুল জানান, ‘এখন আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে এইচপি টিম, ‘এ’ টিম, অনূর্ধ্ব-২১ দল এখানে সুযোগ করে নিয়ে ভালো করা এবং জাতীয় দলে খেলা।’