স্বেচ্ছাসেবকদের সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস তার পদত্যাগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। বিদ্যানন্দের পক্ষে লিখতে গিয়ে অনুমানভিত্তিক অন্যকে দোষারোপ না করতে সবার প্রতি অনুরোধও করেছেন তিনি।
বিদ্যানন্দ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে মঙ্গলবার রাতে সংস্থার ফেসবুক পেইজে তিনি স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, আমার সিদ্ধান্তগুলোতে পাগলামি এবং আবেগের প্রভাব যুক্তির চেয়ে বেশি থাকে। ক্ষমা চাচ্ছি এই সীমাবদ্ধতার জন্য। আজকে আমার এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আমি বিদ্যানন্দ ছাড়ছি না, পরিচালনা পর্ষদেই থাকছি। শুধু দায়িত্ব পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। পরিচালনা পর্ষদে এখনো সে আবেদন গ্রহণ করেনি। যদি আমার আগের বক্তব্যে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে, আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাই।
পদত্যাগের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, কোন চাপে এই সিদ্ধান্ত নেই নি আমি। শারীরিক ক্লান্তি এবং ব্যক্তিগত আবেগের কাছে হার মেনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া। সব ধর্মের বিশেষ করে মুসলমানদের সহযোগিতায় এতদূর আসা। কিছু মন্দ লোক অপপ্রচার করে সেটা খুবই নগন্য।
এরআগে মঙ্গলবার বিকেলে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ঢাকা শাখার প্রধান সালমান খান ইয়াছিন দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, স্বেচ্ছাসেবকদের সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাসের পদত্যাগপত্র এখনও গ্রহণ করা হয়নি। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী কমিটি। তার পরেও ফেরানো না গেলে চেয়ারম্যান পদ তার জন্য ফাঁকা রাখা হবে। রাগ ও অভিমান করেই কিশোর কুমার চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কোনো চাপের কারণে কিশোর কুমার চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা? – এমন প্রশ্নে সালমান খান ইয়াছিন বলেন, ‘এমন কোনো চাপ ছিল না। অনেকেই বলছেন সংগঠনের মুসলিম স্বেচ্ছাসেবকরা তাকে চাপ দিয়েছি। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি এ বিষয়টিও ক্লিয়ার করতে লিখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো ভাববেন উনাকে দিয়ে লেখানো হচ্ছে। ফলে তিনি এখন এ বিষয় নিয়ে কথা বলবেন না।’
প্রভাবশালী কোনো মহলের চাপ ছিল কি? -এমন প্রশ্নে সালমান বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা কাজ করতে গিয়ে সরকারের অনেক সহায়তা পেয়েছি। আমরা সব সময় সব মহলের সহায়তা পাচ্ছি। কিশোর কুমারের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো মহল থেকে চাপ ছিল না। উনার বিকল্প এখন পর্যন্ত বিদ্যানন্দে নেই। যদি তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার নাও করেন, তাহলেও উনার পদ খালি থাকবে। এই পদে কেউ আসবে না। উনি চাইলে যেকোনো সময় আবার এই পদে আসতে পারবেন। ওই পদে কেউ যাবে না। আর ওই পদের জন্য কেউ নিজেকে যোগ্য মনে করেন না।’
কেউ কেউ বলছেন বিদ্যানন্দের ভেতরে কোনো দ্বন্দ্ব কিংবা পদ দখলের ষড়যন্ত্রের কারণে কিশোর কুমার পদত্যাগ করেছেন -এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সালমান বলেন, ‘বিদ্যানন্দে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।’
মঙ্গলবার সকালে বিদ্যানন্দের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে কিশোর কুমার দাস প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রধান পদ ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানানো হয়। বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদ্যানন্দের কাজ বিদ্যা বা শিক্ষা দিয়ে শুরু হলেও বিভিন্ন সময় সংগঠনটির সঙ্গে ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতা খুঁজেছেন এক শ্রেণির ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। আর এ কারণেই প্রতিষ্ঠানের প্রধানের পদ থেকে কিশোর কুমার দাশ সরে গেলেন।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা সহায়ক বিষয় নিয়েই কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদ্যানন্দ। এছাড়াও সংগঠনের এক টাকায় আহার নামের একটি প্রকল্পও বেশ পরিচিত।