বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা না করা তার পরিবারের বিষয়, আবেদন করলে পরিবারই করতে পারে।
তিনি বলেছেন, “সাজা স্থগিতের সময় বাড়াতে আবেদনের বিষয়ে পরিবার এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। অতীতের মতো পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেহেতু তারা আগে আবেদন করে সরকারের সাথে কথা বলে সাজা স্থগিত করেছিলেন।
“এখনও যেহেতু ম্যাডাম সুস্থ হননি, তিনি একেবারেই একই (আগের) অবস্থাতেই আছেন। সুতরাং সাজা স্থগিতের সময়টা বাড়ানো এখন জরুরি প্রয়োজন।”
‘সময় মতোই’ পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হতে পারে বলে জানান মির্জা ফখরুল।
দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয় বিএনপি প্রধানকে।
সাজা স্থগিতাদেশের সেই মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর।
মুক্তির পর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজাতে’ রয়েছেন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। বাইরে থেকে শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়া ও চিকিৎসার বন্দোবস্ত দিচ্ছেন। খালেদা জিয়া আর্থারাইটিসের ব্যথা, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ম্যাডামের চিকিৎসা যেটা চলছিল সেটাই চলছে। হাসপাতালের ডাক্তাররা যেটা চিকিৎসা দিয়েছিলেন সেটাকেই ফলোআপ করছেন এখন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকেরা।
“এখন যতটুকু সম্ভব তার যে বউমা (লন্ডনের অবস্থানরত বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান) আছেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তার পরামর্শ নিয়ে ম্যাডামের চিকিৎসাটা চলছে।”
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিতসার জন্য মুক্তি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে তার ছোটভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে তার সাজা স্থগতি করে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
সাজা স্থগিতের সেই আদেশে বলা হয়েছিল, খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।মুক্তির পর পরিবারের কয়েকজন সদস্য ছাড়া কাউকে খালেদার গুলশানের বাসায় ঢুকতে দেয়া হয় না। দলের নেতা-কর্মীরাও খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ পাননি।
তবে দুই ঈদে তার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ‘ফিরোজায়’ গিয়েছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য মূলত দুইজন- বোন সেলিমা ইসলাম ও ভাই শামীম ইস্কান্দার।
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শামীম ইস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা সব সময় ও প্রয়াত ভাই সাইদ ইস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন ইস্কান্দার মাঝে মধ্যে খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
তার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ছাড়াও আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে, যার বেশিরভাগ ১/১১ এর সরকারের আমলে দায়ের করা হয়েছে।