এমপি পাপলুর বছরে আয় ৫৫ কোটি টাকা

1592674926_11

লক্ষীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল কুয়েতে তার জনশক্তি ব্যবসা থেকে বছরে আয় করছেন প্রায় ২০ লাখ দিনার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। গত শুক্রবার কুয়েতের তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র আল-রাই এ তথ্য জানিয়েছে।

পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহীদ ওরফে কাজী পাপুলের মাধ্যমে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন এবং তার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পেয়েছে দেশটির তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তারা (মিডিয়া) এ বিষয়ে তিন জনের বক্তব্য শুনেছেন। তিন জনের মধ্যে দুজন এমপি শহীদের জনশক্তি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং অপরজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আবদুল মোমেন বলেছেন, কুয়েত অভিযোগ জানালে এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবসের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে অবৈধভাবে মানবপাচার, মুদ্রাপাচার এবং নানা অপকর্মের অভিযোগ ৬ জুন এমপি কাজী শহিদ পাপুলকে কুয়েতে গ্রেফতার করা হয়। দুই দফা রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কুয়েতের বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্তে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনার বিনিময়ে ঘুষ, নগদ অর্থ এবং বিভিন্ন উপহার দেয়ার পরও বাংলাদেশি এই সংসদ সদস্যের বার্ষিক মোট আয় আনুমানিক প্রায় ২০ লাখ দিনার।

এমপি শহীদ ছাড়াও এ ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন জন কুয়েতের কর্মকর্তা। এছাড়াও আরও চার জনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। কুয়েতের তিন কর্মকর্তার মধ্যে একজন কুয়েতে শ্রম বিষয়ক সরকারি সংস্থার জনশক্তি কর্মকর্তা। এই কর্মকর্তার বোনের একটি জনশক্তি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে শ্রমিক আনার জন্য এমপি শহীদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির একটি চুক্তি রয়েছে।
রিমান্ডে শহিদ কুয়েতের তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, সে দেশের সরকারের ভেতরেই একটি মহল এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যারা অর্থের বিনিময়ে আরব দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রবেশের পথ তৈরি করে দেয়। কুয়েতের জনশক্তি প্রতিষ্ঠান মারাফি কুয়েতির মালিক এমপি শহীদ এবং কুয়েতের এক নাগরিক। দেশটিতে শ্রমিক পাঠানোর বিনিময়ে জনপ্রতি প্রায় তিন হাজার দিনার নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এমপি শহীদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও প্রতি বছর সেদেশে থাকার অনুমতিপত্র পুনরায় অনুমোদন করাতে প্রতিষ্ঠানটিকে মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদান করতে হত শ্রমিকদের।

কাজী শহিদের মানবপাচার নিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি আরব টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়েতের যাদের পাপুল ঘুষ দেন তাদের তিনটি বড় প্রতিষ্ঠানে এই তিন জন ‘গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল’ করে আছেন। যেসব প্রতিষ্ঠান ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিককে কুয়েতে পাঠিয়েছে। ধারণা করা হয়, এই শ্রমিকদের কাছ থেকে বিনিময় হিসেবে প্রায় এক হাজার ৩৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকারও বেশি নেয়া হয়েছে।

মানবপাচার ও মুদ্রাপাচারে অভিযোগে কুয়েতে আটক এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা এখনো কুয়েতের কাছ থেকে সরকারিভাবে কোনো তথ্য পাইনি। পত্রিকায় যেসব তথ্য পেয়েছি, সরকারিভাবে কুয়েতের কাছ থেকে এসব তথ্য পেলে আইন অনুযায়ী অবশ্যই তার বিচার হবে। এখন তথ্য না পেলে তো আমাদের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। কুয়েতে সংসদ সদস্যের অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনা দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কার কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দূতাবাসের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেব।

Pin It