সদ্য প্রয়াত ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। শনিবার রাতে মারা যাওয়ার পর তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। রোববার সকালে তাতে পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর সম্মিলিতি সামরিক হাসপাতালে মারা যান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি এক ছেলে, নয় মেয়েসহ আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পৃথক শোকবার্তায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, শুক্রবার থেকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর হালকা কাশি ছিল। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে একটু শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে রাত ১০ টার দিকে সিএমএইচ এ যাওয়ার পথে জাহাঙ্গীর গেটেই অচেতন হয়ে যান তিনি। সিএমএমএইচ এ নিয়ে সাথে সাথে তাকে লাইভ সাপোর্টে নেয়া হয়। রাতে পৌনে ১টায় ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর জন্ম ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার কেকানিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম শেখ মো. মতিউর রহমান এবং মাতা মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর সুলতান শাহি কেকানিয়া প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। ১৯৬১ সালে একই বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন। আযম খান সরকারি কমার্স কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৬৬ সালে বি.কম (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম.কম এবং ১৯৭৪ সালে অর্থনীতি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে ঢাকার সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে সুলতান শাহি কেকানিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে গোপালগঞ্জ ও ঢাকা জজকোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হন। প্রথমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বোর্ড অব গভর্নরসের সদস্য ও পরে ওই বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন।
তিনি ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। আযম খান সরকারি কমার্স কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় কলেজের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং সে সময় যুবলীগে যোগদান করে গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুজিব বাহিনীতে যোগদান করেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি গোপালগঞ্জ জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে শেখ হাসিনার সব সংসদ নির্বাচনের প্রচার ও কার্যক্রমে ভূমিকা পালন করেন।
তিনি গত কয়েক মেয়াদে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শেখ আবদুল্লাহ এ আসনে শেখ হাসিনার পক্ষে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলের সম্পর্কোন্নয়ন এবং কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির পেছনে ভূমিকা পালন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ-৩ আসনের দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন।