২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির যে প্রবৃদ্ধি ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন প্রায় অসম্ভব। বাজেটে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কিভাবে অর্জিত হবে তার বিশ্লেষণ নেই। এই বাজেট বাস্তবায়নই হবে সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
শুক্রবার রাতে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ‘পোস্ট বাজেট ডায়ালগ এফওয়াই- ২০২০-২১’ শীর্ষক লাইভ ওয়েবিনারে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এমন মনোভাব ব্যক্ত করেন অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও ড. এটিএম নুরুল আমিন।
প্রস্তাবিত বাজেটে কভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আয় বৈষ্ণম্য দূরীকরণ, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, ব্যাংকিং সেক্টরের সংস্কারসহ বহুবিধ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা থাকা উচিত ছিল বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদরা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘কভিড-১৯ ও অন্যান্য কারণে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির বেশ কিছু সূচক নিম্নমুখী। রপ্তানী খাতে ধস নেমেছে, প্রবাসী শ্রমিকরা চাকরি হারিয়েছেন। তাতে রেমিটেন্স কমে এসেছে। ব্যাংকিং খাত থেকে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেকদিন ধরে কমতে শুরু করেছে, সেটা আরো কমবে। এই পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কিভাবে অর্জিত হবে তার বিশ্লেষণ বাজেটে নেই।’
তিনি মনে করেন ৪ বা ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরলে সেটা উচ্চাভিলাষ হলেও বস্তুনিষ্ঠ হতো। এছাড়া রাজস্ব আহরণের জন্য ৩ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সেটাও অর্জিত হবে না বলে মনে করেন মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তবে বাজেট পরিকল্পনার চারটি মূল খাত হিসেবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দেওয়াকে ইতিবাচক মনে করছেন তিনি। এই বাজেট বাস্তবায়নে প্রশাসনিকযন্ত্রের অনাগ্রহ রোধ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সরকারি কর্তাব্যক্তিদের জবাবদিহিতার ওপর জোর দেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশেষ সময়ে বিশেষ একটি বাজেটের প্রত্যাশা করেছিলাম যা জনমনে আশার সঞ্চার করবে। তবে আশাহত হলাম। বাজেটের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো এর বাস্তবায়ন। কাঙ্খিত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে না, ব্যয় কিন্তু আবার ঠিকই হবে।’ বৃহৎ প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করা, জনবান্ধব প্রকল্প গ্রহণ ও কম দরকারি প্রকল্প কাটছাট করাসহ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের অন্তত ৩ শতাংশ বাড়ানোর পরামর্শ এই অর্থনীতিবিদের।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইকোনমিক্স অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের (ইএসএস) চেয়ারপারসন ড. এটিএম নুরুল আমিন বলেন, ‘এবারের বাজেটে কভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার অভাব রয়েছে।’ ওয়েবিনারের আরেক বক্তা আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটিডের সিইও মোমিনুল ইসলাম বলেন, তারল্য ব্যবস্থাপনা, ক্রেডিট গ্যারন্টি স্কিম সংক্রান্ত দিক-নির্দেশনাসহ তথ্য প্রযুক্তি খাতে আরো বেশি বরাদ্দ থাকা দরকার ছিল।
লাইভ ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর শামীম এহসানুল হক ও লেকচারার তানিয়া আকতার। এটি আয়োজন করে ব্র্যাক বিজনেস স্কুল (বিবিএস) এর বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক ফোরাম।