করোনাভাইরাসের মহামারীকালে সোনার ভরি বেড়ে এক লাফে প্রায় ৭০ হাজার টাকায় উঠেছে।
বাংলাদেশের বাজারে এর আগে কখনই এত বেশি দামে সোনা বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।
তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে সোনার দর অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারেও তাদের দাম বাড়াতে হয়েছে।
“আমরা হিসাব করে দেখেছি, বিশ্ব বাজারে প্রতি ভরি গোল্ডের দাম ৭ হাজার টাকা বেড়েছে। আমরা সেখানে ৫ হাজার ৭১৫ বাড়িয়েছি।”
অতীতে দেখা গেছে, দেশের বাজারে সোনার দাম সাধারণত ভরিতে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়।
তবে এবার সবচেয়ে ভালো মানের সোনার দর (২২ ক্যারেট) এক লাফে ৫ হাজার ৭১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে জুয়েলার্স সমিতি।
মঙ্গলবার থেকে এই মানের প্রতি ভরি সোনা ৬৪ হাজার ৪২ টাকার পরিবর্তে ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকায় কিনতে হবে।
জুয়েলার্স সমিতি সোমবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
তাতে বলা হয়, “করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববাজারে সোনার দাম সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে।
“ফলে দেশের বুলিয়ন মার্কেটে সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে সোনার দাম পুনর্নির্ধারণ করেছেন।”
বিয়ের মওসুমে সোনার বাজারে হা-পিত্যেশ
গত দুই সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (২ দশমিক ৬৫ ভরি) সোনার দাম ৩০০ ডলার বেড়েছে বলে জানান আগরওয়ালা।
নতুন দর অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট সোনা ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকা, ২১ ক্যারেট ৬৬ হাজার ৭১৮ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৫৭ হাজার ৯৭০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার ভরি বিক্রি হবে ৪৭ হাজার ৬৪৭ টাকায়।
সোমবার পর্যন্ত প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনা ৬৪ হাজার ১৫২ টাকা, ২১ ক্যারেট ৬১ হাজার ৮১৯ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৫৬ হাজার ৮০৪ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির সোনা বিক্রি হয়েছে ৪৪ হাজার ৩১ টাকায়। সর্বশেষ গত ২৮ মে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৭১৯ মার্কিন ডলার। সোমবার রাতে সেটি বেড়ে হয় ১ হাজার ৭৫৭ ডলার হয়েছে।
আগরওয়ালা বলেন, গত ১৫ দিন ধরে সোনার বাজার অস্থির। প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে দর। আন্তর্জাতিক বাজারে আট বছরের মধ্যে সোনার দাম সর্বোচ্চ উপরে উঠেছে।
“কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে হঠাৎ করেই বিশ্ব বাজারে গোল্ডের চাহিদা বেড়ে গেছে। সবাই এখন গোল্ড কিনে মজুদ করে রাখছে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে সোনার দর বাড়ছিল। সম্প্রতি চীনের সঙ্গে ভারতের অস্থিরতার কারণেও গোল্ডের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।”
আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম আরও বাড়তে বলে আভাস দিয়ে তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সবাই এখন নিরাপদ বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গোল্ড কিনে মজুদ করে রাখছে। সে কারণে দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
সোনার দাম বাড়লেও দেশে রুপার দাম অপরিবর্তিত থাকবে, ভরি ৯৩৩ টাকায়।
এলসি খুলেছে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড
নতুন বাজেটে সোনা আমদানির উপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ কমানোয় তার প্রভাবে স্থানীয় বাজারে দাম খুব বাড়বে না বলে মনে করছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী আগারওয়ালা।
তিনি বলেন, “এতদিন বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে সোনা আমদানি হত না। নীতিমালার মাধ্যমে সোনা আমদানির সুযোগ দেওয়া হলেও ভ্যাট বেশি হওয়ার কারণে কেউ আমদানি করতে আগ্রহ দেখায়নি। এবারের বাজেটে ভ্যাট কমানোয় অনেকেই আমদানির উদ্যোগ নিয়েছেন।”
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার আগরওয়ালা বলেন, “আমাদের ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের পক্ষ থেকে আজ দুবাই থেকে ১১ কেজি গোল্ড আমদানির জন্য এলসি খুলেছি। আশা করছি, দুই সপ্তাহের মধ্যে এই গোল্ড দেশে আসবে।
“গোল্ড আমদানির অনুমতি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের লাইসেন্স দিয়েছে। আমরাই প্রথম দেশে সোনা আমদানির জন্য এলসি খুলেছি।”
সবাই সোনা আমদানি শুরু করলে স্থানীয় বাজারে এর দর স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করছেন আগরওয়ালা।