রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পালংশাক

spinach

পালংশাকে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ক্যালসিয়াম, লৌহ শরীরের জন্য উপকারী।

‘পোপাই-দ্য সেইলর ম্যান’ কার্টুনটার কথা মনে আছে? ওই যে কৌটা থেকে কি যেন একটা খেয়ে অসম্ভব শক্তিশালী হয়ে যেত ছোট খাট রোগা ধরনের লোকটা? তার কৌটার গায়ে লেখা থাকত ‘স্পিনাচ’ যার বাংলা হল পালংশাক, খাবার টেবিলে যেটা দেখলে অনেক শিশুই হয়ত নাক সিঁটকে ওঠে, বড়-বুড়োদের মধ্যেও কারও হয়ত মন খারাপ হয়ে যায়।

বাস্তবে পালংশাক খেলেই হাত-পায়ের পেশি ফুলে উঠবে না সেকথা ঠিক। তবে ভিটামিন এ, বি, সি, কে; ক্যালসিয়াম; লৌহ, ‘বেটা ক্যারটিনয়েড’ এবং সামান্য ক্যালরির এই শাক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জোরদার করতে প্রচণ্ড উপকারী।

আর করোনাভাইরাসের এই মহামারীর দিনে সবারই চাই শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জানানো হলো সেবিষয়ে বিস্তারিত।

সহজেই প্রস্তুত করা যায় এমন খাবারের তালিকা করলে পালংশাক প্রথম সারিতেই থাকবে। আর তা প্রতিদিন খেলেও কোনো ক্ষতি নেই বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা।

ধারণা করা হয় এই শাক শুধু দৃষ্টিশক্তির জন্য উপকারী। তবে তার উপকারিতা এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর ভূমিকা অনন্য।

নিয়মিত পালংশাক খেলে অন্তত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য কোনো ‘সাপ্লিমেন্ট’ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

এর বহুমুখী উপকারিতা প্রধান দিক হল পালংশাক একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পেশি গঠনকারী খাবার যাতে অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজের পাশাপাশি আছে ‘ফোলেট’ ও ‘লুটেইন’।

উদ্ভিজ্জ ‘ওমেগা-থ্রি এস’য়ের একটি বড় উৎস এই শাক। এছাড়াও থাকে ‘ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস’, প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান যার আছে প্রদাহনাশক গুণাগুণ এবং সুরক্ষা দেয় বিভিন্ন রোগ ও জীবাণু থেকে।

এককথায় এভাবেই শক্তিশালী হয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কাঁচা অবস্থাতেও পালংশাক খাওয়া যায় এবং সেখান থেকেও মিলবে পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি।

পালংশাক আবার বিভিন্ন পদের খাবারের অংশ হতে পারে। বিভিন্ন দেশে ও অঞ্চলে এই শাকের অসংখ্য রন্ধন পদ্ধতি পেয়ে যাবেন। শাকভাজি, ডালের সঙ্গে, স্মুদি বানিয়ে, ডিম দিয়ে ইত্যাদি রেসিপি বেশ সুপরিচিত।

পালংশাকের স্মুদি শরীরচর্চার পর অত্যন্ত উপকারী পানীয়, যা অনেক শরীরচর্চা বিশেষজ্ঞ পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ডিম আরেকটি স্বয়ংসম্পূর্ণ খাবার যা অনেকের প্রিয়, প্রস্তুত করাও সহজ। এই ডিমের পদের পুষ্টিমান কয়েকগুণ বাড়িয়ে নিতে পারেন ডিমভাজা বা ‘অমলেট’য়ের সঙ্গে পালংশাক মিশিয়ে দিয়ে।

খাওয়ার আগ্রহ কমাতেও ভূমিকা রাখবে এই পদ। ফলে যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন তাদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী।

সব ধরনের ডালের সঙ্গে পালংশাক মিশিয়ে খাওয়া যায় এবং কয়েকটি পদ দেশ-বিদেশে তাদের স্বাদের জন্য সুপরিচিত। এমনটি পদ হল চনার ডালের সঙ্গে পালংশাক যা ভারতীয় রন্ধনশৈলীর অংশ।

মশুর ডালের সঙ্গে পালংশাকের পদের সঙ্গে বাঙালি মোটামুটি পরিচিত। এই পদে মশুর ডাল যোগান দেয় দস্তা, লৌহ এবং ‘লিম্ফোসাইটস’। সঙ্গে পালংশাক যোগ করে ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ যা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। পালংশাকের সুপও বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার।

ভারতীয় ‘কুইজিন’য়ের রেস্তোরাঁয় খেতে দিয়ে ‘পালাক পানির’ অনেকেই খুব রুচি নিয়ে খান। এমনকি ঘরে যারা পালংশাক দেখে মন খারাপ করেন তারাও। তবে রেস্তোরাঁর খাবারটির স্বাস্থ্যগুণ নিয়ে সংশয় থাকতেই পারে, তাই তা ঘরেই যদি বানিয়ে নিতে স্বাস্থ্যকর উপায়ে তবে ভালো।

মনে রাখতে হবে, প্রতিদিন শাকসবজি খাওয়া যেমন জরুরি তেমনি খাদ্যাভ্যাসে ভিন্নতা থাকাও জরুরি। পালংশাকে প্রচুর পুষ্টি বলে প্রতিদিন শুধু সেটাই খাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, ভালোও লাগবে না।

আবার শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েই সুস্বাস্থ্য পাওয়া যায় না, সঙ্গে চাই শরীরচর্চাও। তাই ঘরে বসেই যতটা সম্ভব শারীরিক পরিশ্রমের মধ্যে থাকতে হবে।

Pin It