সাড়ে তিন বছরের শাসনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পথচলার যে ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিলেন, তার উপরে ভর করেই এখনও বাংলাদেশ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
মঙ্গলবার রাতে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় যোগ দিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘাতকচক্র ও পরবর্তীতে ক্ষমতাসীনরা ইতিহাসের ধারাকে পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
“এখনও আমরা যা-ই করি না কেন, সব কিছুতে তিনি প্রাসঙ্গিক। সব কিছু চলছে তার দেখানো আদর্শের উপর ভর করে।”
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতা পরবর্তী রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে অক্সফোর্ড পলিটিক্যাল রিভিউ (ওপিআর) এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল অ্যান্ড পলিটিকস রিভিউ’র (ডিএলপিআর) আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার উদাহরণ দিতে গিয়ে ১৯৭১ সালে সমুদ্রসীমা আইন করা এবং তার মাধ্যমে কয়েক বছর আগে সমুদ্রসীমা জয়ের প্রসঙ্গ টানেন দীপু মনি।
তিনি বলেন, সংবিধানে চার মূলনীতি সন্নিবেশিত করার ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর যে সংযোগ, তার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়।
“মানুষের সঙ্গে বিচরণের বিস্তৃত অভিজ্ঞতা বঙ্গবন্ধুর ছিল। তিনি তার জনগণকে ভালোবাসতেন মন-প্রাণ উজাড় করে দিয়ে।”
দীপু মনি বলেন, “ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ঘৃণা করত। তার শাসনামলের সব অর্জনকে পেছনের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, মুছে ফেলতে চেয়েছিল ইতিহাস। পাকিস্তান আমলে যে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছিলাম, সেটাই আবার ফিরে এসেছিল।”
ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের কমনওয়েলথ স্টাডিজের ইমেরিটাস অধ্যাপক জেমস ম্যানার বলেন, সত্তরের দশকে যেসব দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তার থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের মতো কঠিন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে কেউ যায়নি।
“৬০ লাখ বাড়িঘর আর রাস্তাঘাট সব ধ্বংস হয়েছিল এখানে। ওই অবস্থার মধ্য থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভিত্তি রচনা করছিলেন শেখ মুজিব।”
আলোচনা অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত ছিল কি-না, এটা বলা কঠিন।
“কিন্তু পাকিস্তানপন্থি অবস্থানের কারণে তারা শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে ছিলেন। আবার বাকশাল হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র এটাকে তার সোভিয়েতপন্থি অবস্থান বলে মনে করেছিল।”
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ম্যানার বলেন, “আমার কাছে মনে হয়েছে, সেনাবাহিনীর যারা হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে এমন ভাবনা ছিল, তারা এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন পেয়ে যাবে।”
আলোচনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক শাসন জারি না হলে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসত, ঘাতকেরা সেটা বুঝতে পেরেছিল।”