রুনা লায়লার প্রথম গান রেকর্ড করার ছয় দশক পূর্তি হল সোমবার।
বাংলা-হিন্দি-উর্দু, ইংরেজিসহ ১৮ ভাষায় দশ হাজারের বেশি গান কণ্ঠে তুলেছেন সংগীত শিল্পী রুনা লায়লা। সুরের জাদুতে বশ করেছেন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের শ্রোতাদের। বাবার চাকরির সুবাদে শৈশবে রাজশাহী থেকে পাকিস্তানের লাহোরে চলে যাওয়া রুনা লায়লার করাচিতে প্রথম গান রেকর্ড করার ছয় দশক পূর্তি হয়েছে সোমবার।
শুরুতে তিনি উচ্চাঙ্গ সংগীতে দীক্ষা নেন ওস্তাদ হাবিব উদ্দিন খান ও আবদুল কাদের পিয়ারাংয়ের কাছে। গজলে দীক্ষা পান পণ্ডিত গোলাম কাদিরের (মেহেদি হাসানের ভাই) কাছে। সংগীতের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আসা এই শিল্পীর কেবল চাওয়া, আরো কিছু ভালো গান যেন গেয়ে যেতে পারেন।
চার বছর বয়সে নাচ শিখতেন রুনা লায়লা। তখন বড় বোন দীনা লায়লাকে গান শেখাতে যে ওস্তাদ আসতেন, খেলার ফাঁকে তার কাছেই একটু একটু গানের তালিম নেওয়া শুরু। সেই শিক্ষকই রুনাকে গান শেখানোর পরামর্শ দেন। এরপর শুরু হয় রুনা লায়লার জীবনের নতুন অধ্যায়।
রুনা লায়লার প্রথম গান রেকর্ড করা হয়েছিল করাচির ইস্টার্ন স্টুডিওতে ১৯৬৪ সালে। পরের বছর ‘জুগনু’ সিনেমায় সেই গান মুক্তি পায়। তখন রুনার বয়স ১২। প্রথমে বাবার আপত্তিতে প্রায় ভেস্তে যেতে বসেছিল প্রথম প্লেব্যাক। পরে অনেক কষ্টে বাবাকে রাজি করিয়ে সিনেমার গান গাওয়া শুরু করেন রুনা।
রুনা লায়লা বাংলা সিনেমায় গান গাওয়া শুরু করেন সুবল দাসের সুরে ‘স্বরলিপি’তে ষাটের দশকে। গানটির শিরোনাম ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’। একই গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন মাহমুদুন্নবী। তখনো রুনা লায়লা থাকতেন করাচিতে। বাংলাদেশে আসার পর প্রথম গান করেন সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ সিনেমায়।
পাকিস্তানের সুরকার নিসার বাজমির সুর করা বহু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রুনা লায়লা। একবার এক প্রতিষ্ঠান রুনাকে দিয়ে নিসার বাজমির সুরে গান গাওয়ানোর পরিকল্পনা করে। প্রতিদিন এই সুরকারের ১০টি করে তিন দিনে মোট ৩০টি গান রেকর্ড করে গিনেস বুকে জায়গা করে নেন রুনা।
১৯৮২ সালের ১ ডিসেম্বর ভারতীয় শিল্পী ও সুরকার প্রয়াত বাপ্পি লাহিড়ীর সুরে, রুনা লায়লার গান নিয়ে ইএমআই মিউজিক কোম্পানি প্রকাশ করে ‘সুপার রুনা’ অ্যালবাম। প্রকাশের পরপরই অ্যালবামটির লাখ কপি বিক্রি হয়।
১৯৭৪ সালে মুম্বাইয়ে রুনা লায়লার একক কনসার্টের আগের দিন মহড়ার সময় ভারতীয় কিংবদন্তী শিল্পী লতা মঙ্গেশকর নিজে থেকে এসেছিলেন বাংলাদেশের এই শিল্পীর সঙ্গে দেখা করতে। সেটি ছিল প্রথমবার। এরপর থেকে তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। যা টিকে ছিল লতার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
রুনা লায়লার দারুণ সম্পর্ক লতা মঙ্গেশকরের ছোট বোন শিল্পী আশা ভোঁশলের সঙ্গেও। দেশের বাইরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দুজনের দেখা হত প্রায়ই। এছাড়া মুম্বাইয়ের গানের রিয়েলিটি শোতে এ দুই শিল্পী বিচারকের দায়িত্বও পালন করেছেন একসাথে।
আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা নারী কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন রুনা। শুধু গান নয়, চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শিল্পী’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ভারতে পেয়েছেন সায়গল পুরস্কার। পাকিস্তান থেকে তার ঝুলিতে এসেছে নিগার, ক্রিটিক্স, গ্র্যাজুয়েটস পুরস্কার।