ভাষার মাস: প্রকট হয় রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি

image-774801-1708021766

একুশের প্রস্তুতির মধ্যেই প্রকট হয়ে ওঠে রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি। জাতীয়তাবাদী অনেক নেতাও তখন জেলে বন্দি। তাদের মুক্তির দাবির সঙ্গে ভাষার দাবি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

একুশের দিনলিপি’ গ্রন্থে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক বলেন, ১৬ ফেব্র“য়ারি ১৯৫২। রাজনীতিমনস্ক ছাত্রদের ব্যস্ততা একুশের কর্মসূচি নিয়ে। ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রাবাসে চলছে একুশের কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি।

এর দুটো দিক যেমন মানসিক তেমন কর্মতৎপরতায়। প্রথম দিকটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, যার ওপর নির্ভর করে যে কোনো সংগ্রামের বা আন্দোলনের সফলতা, ব্যর্থতা। সে প্রস্তুতি যে কোনো প্রকার কর্মে বা ত্যাগে মানসিক দৃঢ়তা জোগায়।

এ পর্যায়ে একুশের আন্দোলন নিয়ে তেমন কোনো অঘটনের সংকেত না দিলেও ভাসানীর সতর্কতামূলক কথা, আশঙ্কার কথা বারবার মনে হচ্ছিল।

আহমদ রফিক বলেন, সমআদর্শের সহপাঠী বন্ধু সালামকে সে কথা বলতেই সে হেসে ওঠে। আর কর্মতৎপরতা নতুন কীই বা করার আছে। সভা, সমাবেশ, মিছিলÑসবই তো চলছে। পতাকা দিবসও পালিত হলো সফলভাবে। অর্থ সংগ্রহ, তাও একেবারে কম নয়।

পোস্টার লেখার দায়িত্ব জনাকয়েকের দক্ষ হাতে। ইশতেহার ছাপা, প্রেসে যাওয়া, বিতরণ, পত্রিকা অফিসে যাওয়া ইত্যাদি। বিশেষ বিশেষ ছাত্রাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ মানেই তো বন্ধুদের সঙ্গে একই বিষয় নিয়ে কথা বলা।

আহমদ রফিক তার গ্রন্থে বলেন, অন্যদিকে নুরুল আমীন ও তার প্রশাসন কি তাদের হাত-পা গুটিয়ে চুপচাপ বসে ছিল? না, ওরাও নিশ্চয় সবরকম প্রস্তুতি নিচ্ছিল যাতে একুশের কর্মসূচি ভন্ডুল করে দেওয়া যায়। সেসব প্রক্রিয়া কী, তা ছাত্রদের জানা ছিল না। তবে কারও কারও আশঙ্কা ছিলÑকিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে, যা মোটেও ভালো কিছু নয়।

এ সময় একুশের পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদী বিষয় ছিল রাজবন্দিদের মুক্তি। কারণ জেলে বিনা বিচারে আটক রাজবন্দিরা অসহনীয় কষ্ট ভোগ করছিলেন। তাদের সিংহভাগ কমিউনিস্ট পার্টি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর। তাদের ওপর চলেছে নির্মম অত্যাচার। প্রমাণ রাজশাহী জেলে বন্দি খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট রাজবন্দিদের ওপর গুলি, সাতজনের মৃত্যু, অনেক আহত এবং ইলা মিত্রের ওপর দানবিক অত্যাচার। তেমনি জেলে জেলে চলেছে নির্যাতন ও পিটিয়ে মারার মতো ঘটনা।

তাদের হয়ে কথা বলার কেউ ছিল না। প্রধান কারণ পাকিস্তান নিয়ে অন্ধ উন্মাদনা। তাছাড়া এদের অধিকাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। ভাষা আন্দোলনেই প্রথম উচ্চারিত স্লোগানÑ‘রাজবন্দিদের মুক্তি চাই’।

তবে তা বিশেষভাবে ১৯৫২ সালে ফেব্র“য়ারিতে পৌঁছে। ইতোমধ্যে কিছুসংখ্যক জাতীয়তাবাদী নেতাও জেলের নিয়মিত বাসিন্দা। আর সেজন্যই বায়ান্নতে এসে রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিটি প্রকট হয়ে ওঠে।

Pin It