অলৌকিক কিছুর অপেক্ষায় পরিবার

image-688730-1687366507

ঘড়ির কাঁটা যত সামনে এগোচ্ছে দীর্ঘশ্বাস ততই বাড়ছে। ভয় বাড়ছে। গলা শুকিয়ে আসছে। কণ্ঠ রোধ হয়ে আসছে। কিছুক্ষণ পরপরই চেপে ধরছে স্বজন হারানোর ভয়। টাইটানিক দেখতে গিয়ে নিখোঁজ টাইটানের চালক-যাত্রীদের পরিবারের অবস্থা এখন এমনই।

রোববার আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে হারিয়ে নিখোঁজ ডুবোজাহাজটির উদ্ধার এবং তাদের জীবত ফিরে আসার শেষ আশাটুকুও এখন ক্ষীণ।

ডুবোজাহাজে অক্সিজেনের হিসাব মোতাবেকে আজ ভোর ৫টায় (বাংলাদেশ সময়) ফুরিয়ে যাবে তাদের নিঃশ্বাসের রসদ। তারপরও অধীর অপেক্ষায় তাদের পরিবার। বিশ্বাসের কোথায় যেন একটা টিমটিমে আশা এখনো মিটমিট করে জ্বলছে-ফিরে আসবে। অবশ্যই ফিরবে।

অলৌকিক কিছু একটা ঘটবেই। ঈশ্বরের ওপর ছেড়ে দেওয়া সেই পরম ভরসায়ই পথ চেয়ে আছে ‘হতভাগাদের’ পরিবার। ডেইলি মিরর।

হৃদয়বিদারক আবেদনে ব্রিটিশ ধনকুবের মি. হাডিংয়ের বন্ধু জ্যানিক মিকেলসন বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা সময় হারিয়ে ফেলছি। আমি নার্ভাস, আতঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন। এই মুহূর্তে আমার ঘুম আসছে না। আমি শুধু ভালো খবরের আশায় আছি। প্রতি সেকেন্ড এখন ঘণ্টার মতো মনে হয়।’

হারানো পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশ্ববাসীর কাছে প্রার্থনা জানিয়েছে অনেকে। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ নৌসেনাপতি ক্রিস প্যারি বলেছেন, ‘এই সময়ে গভীর সমুদ্রে থাকা নিখোঁজ জাহাজটিকে কোনো রকম সংকেত ছাড়া খুঁজে পাওয়া অসম্ভব হবে।’

এর আগে ২০০০ সালে টাইটানিক ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনের সময় মৃত্যুপথ থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন ড. ম্যাকেল গুইলেন।

তিনি বলেন, ‘যদি তাদের হাইড্রোফোন এত কম সময়ে ব্যর্থ হয় তবে কাপের মাধ্যমে তারা ডুবোজাহাজটিতে ঠুং ঠুং শব্দ করতে পারে। তারা পাঁচজন লোক রয়েছে, তারা পাশ দিয়ে আঘাত করতে পারে। কেননা পানিতে শব্দ খুব ভালোভাবে পৌঁছায়।’

ক্রিস ব্রাউন (৬১) নামে একজন অভিযাত্রী জানান, ‘আমি হামিশের কাছে যথেষ্ট আশাবাদী, একজন অভিযাত্রী হিসাবে আপনি কখনই হাল ছাড়বেন না।’

উল্লেখ্য, ডুবোজাহাজটিতে যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ, ছেলে সুলেমান, হামিশ হাডিং এবং পল হেনরি নারজিওলেট।

সমুদ্রের গভীর অবস্থার কথা বলতে গিয়ে অ্যাডমিরাল প্যারি বলেন, ‘সেখানে প্রচুর অন্ধকার। প্রচুর কাদা ও অন্যান্য জিনিসপত্র রয়েছে। আপনি সার্চলাইট দিয়ে ২০ ফুট পর্যন্ত দেখতে পাবেন। কিন্তু শক্তিশালী সমুদ্র আপনাকে ঠেলে নিয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জল খুবই গভীর, দুই মাইল প্লাস। এটি সূর্যহীন, ঠান্ডা পরিবেশ ও উচ্চচাপ।’

এদিকে ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত পাকিস্তানি মি. দাউদ সম্পর্কে তার পরিবারের কাছে তেমন কোনো তথ্য নেই। প্রিন্স ট্রাস্টের নির্বাহী উইল স্ট্র-এর দাউদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এই ভয়ংকর খবরে হতবাক। তাদের উদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করছি।’

Pin It