‘অ্যাডভানসড সেন্টারে’ উন্নত চিকিৎসা চান খালেদা: ফখরুল

image-119816-1578235713

গত প্রায় নয় মাস ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘গুরুতর’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অ্যাডভানসড ট্রিটমেন্টের’ জন্য তাদের চেয়ারপারসনকে আগে ‘অ্যাডভানসড সেন্টারে’ নেওয়া প্রয়োজন।

সোমবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদার শারীরিক অবস্থার তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

আগের দিন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে আসেন তার বোন সেলিমা ইসলাম, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তার এক কন্যাসহ নাতনীরা।

খালেদা জিয়ার ‘উন্নত চিকিৎসা’ হচ্ছে না অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, “একমাস চেষ্টা করার পরে তারা অনুমতি পেয়েছিলেন। তারা দেখে বেরিয়ে এসে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে অঝোর কান্নায় তারা বলেছেন, দেশনেত্রী গুরুতর অসুস্থ এবং তিনি এখন কিছু খেতে পারছেন না, যা মুখে দিচ্ছেন তা সব বেরিয়ে যাচ্ছে, তার বমি হচ্ছে।

“আমাদের কাছে মেসেজ আছে যে, উনি (খালেদা জিয়া) জানিয়েছেন যে, উনার চিকিৎসা হচ্ছে না, উনি চিকিৎসা করতে চান উচ্চতর সেন্টারে।”

দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার বয়স ৭৫ পেরিয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, প্রতিস্থাপনজনিত হাঁটুর ব্যথায় (অস্টিও-আর্থরাইটিস) ভুগছেন।

বয়স ও অসুস্থতার যুক্তি দেখিয়ে খালেদার জামিনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পর্যন্ত গিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা।

গতবছর ১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দিয়ে বলে, বিএনপি চেয়ারপারসনের সম্মতি থাকলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে দ্রুত ‘অ্যাডভানসড ট্রিটমেন্ট’ দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে।

এর ঠিক আগের দিন গুলশানের লেইক শোর হোটেলে এক বৈঠকে মির্জা ফখরুল কোনো এক ‘মেডিকেল প্রতিবেদন’ থেকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা এখন ‘ক্রিপল স্টেইজে’। অথচ এই প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টে উপস্থাপন করা হয়নি।

সেই প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ তুলে সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, “ডাক্তারা বলেছিলেন রিপোর্টে তার (খালেদা জিয়া) অ্যাডভানসড টিট্রমেন্ট দরকার। সেই ট্রিটমেন্ট তিনি পাচ্ছেন না। এখন আরো ডেটোরেট করে গেছে।

“আমরা বরাবর বলে এসেছি যে, তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আটক করে রাখা হয়েছে এবং তাকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। আমরা এখন আশঙ্কা করছি, তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।”

খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা না হলে  ‘যে কোনো পরিস্থিতির জন্য’ সরকারকে দায়ী থাকতে হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আদালত উচ্চতর চিকিৎসার কথা বলছে। অ্যাডভানসড চিকিৎসা দিতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে কেন? অ্যাডভানসড ট্রিটমেন্টের জন্য তাকে অ্যাডভানসড সেন্টারে পাঠাতে হবে; দেয়ার ইজ অনলি ওয়ে আউট।”

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সরকারের অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও এখনো কোনো জবাব পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে আবারো চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ড্যাবের সাবেক মহাসচিব ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার রক্তে চিনির মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। অথচ ‘কেউ কেউ’ বলছেন, তার ডায়াবেটিস ‘নিয়ন্ত্রণে আছে’।

বিএসএমএমইউর অনেক চিকিৎসক  ‘স্বনামধন্য ও আঞ্চলিকভাবে স্বীকৃত’ হলেও এই হাসপাতাল  ‘অ্যাডভানসড’ কি না- সেই প্রশ্ন তোলেন ডা. জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, “এখানে যদি অ্যাডভানসড ট্রিটমেন্ট দেওয়ার সর্বাধুনিক সুযোগ থাকতই তাহলে কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হয়ে ভর্তি হওয়ার পরে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ট্রান্সফার করতে হয়েছিলো সিঙ্গাপুরে। সিএমএইচ খুব ভালো, তারপরও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব জয়নাল আবেদীন সাহেবকে ট্রান্সফার করতে হয়েছিলে সিঙ্গাপুরে।

“অর্থাৎ, অ্যাডভানসড ট্রিটমেন্টের জন্য দরকার অ্যাডভানসড সেন্টার। সেই অ্যাডভানসড ট্রিটমেন্টের সুযোগ বিএসএমএমইউতে কি আছে? উনার (খালেদা জিয়া) সুচিকিৎসার জন্য উনাকে অ্যডভানসড সেন্টারে নেওয়া প্রয়োজন।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

Pin It