আ.লীগ বিএনপি জাতীয় পার্টি নেতার বাহাস

image-613158-1667765760

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সফররত মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারের সামনেই বাহাসে লিপ্ত হলেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতারা। রোববার বিকালে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আয়োজনে ‘ডেপুটি পলিটিক্যাল রেসিডেন্সে’ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মার্কিন উপসহকারী মন্ত্রী অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন কীভাবে আয়োজন করা যেতে পারে সে ব্যাপারে দলগুলোর মনোভাব জানতে চান। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে পক্ষে-বিপক্ষে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা বিতর্কে লিপ্ত হন। আর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দুদলের (আওয়ামী লীগ-বিএনপি) সমঝোতায় পৌঁছানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি।

এদিন বিকাল সাড়ে তিনটায় শুরু হওয়া সোয়া এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত ও উপদেষ্টা মাসরুর মাওলা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি শাম্মী আহমেদ তার দলের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি কেএম হাসানকে নিয়ে সৃষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্ক এবং পরবর্তীকালে আদালতের রায়ে তা বাতিলের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আর কোনোভাবেই ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ আশ্বাস দিয়েছেন। বিএনপিকে এ ব্যাপারে বিশ্বাস করতে হবে। মার্কিন কর্তকর্তাদের উদ্দেশে শাম্মী আহমেদ বলেন, আপনারা মানবাধিকারের কথা বলেন, শেখ হাসিনার নিজেরই মানবাধিকার হরণ করা হয়েছিল। শিশুসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকেই হত্যা করা হয়েছিল। তখন মানবাধিকার কোথায় ছিল?

সূত্র আরও জানায়, শাম্মী আহমেদের বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করেন বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপির পক্ষ থেকে তিনি জানান, ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে দেশের অধিকাংশ দল অংশ নেয়নি। একতরফাভাবে ওই নির্বাচন করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও আগের রাতে ভোট ডাকাতি করা হয়। দেশে গণতন্ত্র নেই। বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ দল এখন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না। তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকার চায়। এ সময় তিনি গত ১৪ বছরে দলীয় নেতাকর্মীদের গুম-খুন, নির্যাতন ও হামলা-মামলার তথ্য তুলে ধরেন।

জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলের সদস্য মাসরুর মাওলা বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। তাদের মধ্যে যে হিংসার রাজনীতি সেটা পরিহার করা জরুরি। এখন অতীতে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকাতে হবে। গত ১৪ বছরে দুই কোটি নতুন ভোটার হয়েছেন। তারা যেন সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারেন সেই ব্যাপারে আমাদের কাজ করতে হবে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা কথা বলার সময় অনেকটা টিভি টকশোর মতো তর্কে জড়ান। আমীর খসরু মাহমুদের বক্তব্যের সময় আওয়ামী লীগ নেতা শাম্মী আহমেদ বারবার বলতে থাকেন-‘হি ইজ লায়িং’। নিজেদের বক্তব্যে দুজনেই অতীতের অনেক ঘটনা টানতে থাকেন। আলোচনায় শাম্মী আহমেদ বঙ্গবন্ধুর আমল এবং আমীর খসরু জিয়ার আমলের শাসন ব্যবস্থার কথা বলতে থাকেন। এ সময় মার্কিন কর্তকর্তারা তাদের উত্তেজিত না হয়ে ভবিষ্যতের কথা বলার আহ্বান জানান। আলোচনায় গাইবান্ধার উপনির্বাচনের প্রসঙ্গও উঠে আসে।

এক পর্যায়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে পিটার হাস মন্তব্য করেন-বিশ্বে মাত্র দু-একটা দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আছে। সারা বিশ্বেই এটা তেমন জনপ্রিয় ব্যবস্থা নয়। মার্কিন কর্মকর্তারা মূলত দলগুলোর মনোভাব জানার চেষ্টা করেছেন। তারা খুব বেশি মন্তব্য করেননি। তবে তারা বলেছেন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চায়। এ বিষয়ে দলগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এদিকে আফরিন আক্তার রোববার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবসহ একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা মিশন ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয় আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে এ দেশের সুশীল সমাজের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আফরিন আক্তার বলেন, আমি এখানে প্রথমবারের মতো এসেছি। কীভাবে একসঙ্গে আমরা কাজ করতে পারি-তা নিয়ে সরকারের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছি।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর।

এদিকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এই জনগোষ্ঠীর সহায়তায় ১৭০ মিলিয়ন (১৭ কোটি) ডলার সহায়তা দেওয়া নিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা দিয়েছে। সেটা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়-তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

আফরিন আক্তার আরও জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্র নিরাপত্তা নিয়েও কথা হয়েছে। কীভাবে বঙ্গোপসাগরে মৎস্য ও খনিজসম্পদের সর্বোচ্চ সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে কথা বলেছে দুই দেশ। বাংলাদেশ সফরে এসে খুব ভালো লাগছে বলেও জানান তিনি।

Pin It