এক একে এগারো: বিশ্বকাপের গল্প

ljsea77k-5cefc5408aa73

বছর, মাস, দিন শেষে এখন ঘণ্টার অপেক্ষা। আর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও আরাধ্য ক্রিকেটের আসর। ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখ এখন ইংল্যান্ডে। ৩০ জুন বসছে এই গ্রহের সবচেয়ে জমজমাট টুর্নামেন্টগুলোর অন্যতম, বিশ্বকাপ ক্রিকেট। ইংল্যান্ডে বসছে ইতিহাসের দ্বাদশ টুর্নামেন্টটি। এর আগে আরো তিনবার বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে ক্রিকেট ইংলিশরা। আসুন দেখে নেই, গত এগারটি আসরের খুটিনাটি তথ্য।

১৯৭৫: ক্লাইভ মহাকাব্য ও ক্যারিবীয় সামাজ্র্যবাদের সূচনা

প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্টের ৯৪ বছর পর, ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। এর প্রায় ৪ বছর পর, ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মত আইসিসি আয়োজন করে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, স্বাগতিক ইংল্যান্ড এবং কেনিয়া, উগান্ডা, তানজানিয়া ও জাম্বিয়া মিলে পূর্ব আফ্রিকা নামে মোট আটটি দল নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বিশ্বকাপের। আসরটির নাম ছিল প্রুডেনশিয়াল বিশ্বকাপ। ছয়টি ভেন্যুতে হয় ১৫টি ম্যাচ। নিউজিল্যান্ডের গ্লেন টার্নার ৩৩৩ রান ও অস্ট্রেলিয়ার গ্যারি গিলমোর তুলে নেন আসর সেরা  ১১ উইকেট।

গ্রুপ ‘এ’ থেকে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড ওঠে সেমিফাইনালে। অন্য গ্রুপ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া ওঠে শেষ চারে। প্রথম সেমিফাইনালে গ্যারি গিলমোর ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে মাত্র ৯৩ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা। ৩৯ রানে ৬ উইকেট নেন গিলমোর। ৯৪রান তুলতে অস্ট্রেলিয়াকে খেলতে হয় ২৮.৪ ওভার। বলের পর ব্যাট হাতেও ২৮ বলে ২৮ রান করে দলকে ফাইনালে টেনে তোলেন গিলমোর। অন্য সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ১৫৮ রানে আটকে রাখে ক্যারিবীয় পেসাররা। জবাবে আলভিন কালিচরণের ৭২ রানে ভর করে ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ফাইনালে টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। ৫০ রানে ক্যারিবীয়দের তিন উইকেট তুলে নেয় অসি পেসাররা। তবে ক্লাইভ লয়েডের সাথে পেরে ওঠেননি গিলমোর। ক্যারিবীয় অধিনায়ক মাত্র ৮৫ বলে ১২ চার ও ২ ছয়ে তিনি খেলেন ১০২ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস। ম্যাচে ৫ উইকেট নেন গিলমোর। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পায় ২৯১রানের সংগ্রহ। জবাবে ফিনিশিংয়ের অভাবে ১৭ রানে হেরে যায় অস্ট্রেরিয়া। স্নায়ুচাপে ভোগা অজিদের ৫ ব্যাটসম্যান রান আউট হন। এই আসরে সিরিজ সেরার কোনো পুরস্কার ছিল না। ম্যান অফ দ্যা ফাইনাল হন ক্লাইভ লয়েড।

সংক্ষেপে প্রথম বিশ্বকাপ

সময়: ৭ জুন-২১ জুন,১৯৭৫

আয়োজক: ইংল্যান্ড।

ভেন্যু: ৬

ম্যাচ: ১৫

চ্যাম্পিয়ন:ওয়েস্ট ইন্ডিজ

রানার আপ: অস্ট্রেলিয়া

সবোর্চ্চ রান: গ্লেন টার্নার (৩৩৩), অস্ট্রেলিয়া

সবোর্চ্চ উইকেট: গ্যারি গিলমোর (১১), অস্ট্রেলিয়া

ম্যাচ অফ দ্যা ফাইনাল: ক্লাইভ লয়েড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

১৯৭৯: সেই ইংল্যান্ডে আবার ক্যালিপসো সুর

প্রথম বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল অপ্রতিরোধ্য। তবে এই আসরে ইংল্যান্ডকেও অদম্য মনে হচ্ছিল। ১৯৭৭ সালে ক্যারি পেকারের ওয়ার্ল্ড সিরিজের কারণে রঙ্গীন পোশাক, সাদা বল, ফ্লাড লাইট দেখে ফেলেছে ক্রিকেট বিশ্ব। তবে বিশ্বকাপে তার ছোঁয়া অবশ্য লাগেনি। ছয়টি টেস্ট প্লেইং দেশ (ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া) এর সাথে আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর মধ্য থেকে বাছাই পর্বের ভিত্তিতে শ্রীলংকা এবং কানাডা বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। ‘এ’ গ্রুপ থেকে ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান এবং ‘বি’ গ্রুপ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনালে ওঠে। এই আসরে একটিও ম্যাচেও জয় না পাওয়া দল দুটি হলো ভারত ও কানাডা।

ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডের প্রথম সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড ৯ রানে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। অপর সেমিতে পাকিস্তানকে ৪৩ রানে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফাইনালে টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ইংল্যান্ড। ৯৯ রানের মধ্যে ক্লাইভ লয়েড, গ্রিনিজ, হেইন্স, কালিচরণেনের উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে ক্যারিবীয়রা। তবে ১৫৭ বলে ৩টি ছক্কা এবং ১১টি চারের সাহায্যে নান্দনিক ১৩৮ রান করে দলকে ২৮৬ রানের শক্ত অবস্থানে নিয়ে যান ভিভ রিচার্ডস। কলিস কিং করেন ৬৬ বলে ৮৬ রান।

জবাবে ইংল্যান্ড শুরুটা করেছিল দারুণ। ২ উইকেটে তুলে নিয়েছিল ১৮৩ রান। গ্রাহাম গুচ, মাইক ব্রিয়ারলি ও জিওফ বয়কটের ব্যাটে জয়ের দিকেই এগুচ্ছিল স্বাগতিকরা। তবে নিজের নিজের দ্বিতীয় স্পেলে জোয়েল গার্নার যা করলেন সেটাকে মহাকাব্য বললেও কম বলা হবে। গুচ, গাওয়ার ও লারকিংসকে টপাপট তুলে নিয়ে ক্যারিবীয়দের জয়ের পথটা একেবারে মসৃণ করে দিলেন তিনি। শেষ দুটি উইকেট তুলে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিশ্বজয়ের স্বাদ দিলেন বিগবার্ডখ্যতি জোয়েল গার্নার।

এক নজরে ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ

সময়: ৯-২৩ জুন, ১৯৭৯

আয়োজক: ইংল্যান্ড

ভেন্যু: ৬

ম্যাচ: ১৫

চ্যাম্পিয়ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ

রানার আপ: অস্ট্রেলিয়া

সবোর্চ্চ রান: গর্ডন গ্রিনিজ (২৫৩), ওয়েস্ট ইন্ডিজ

সবোর্চ্চ উইকেট: মাইক হেনড্রিক (১০), ইংল্যান্ড

ম্যান অফ দ্য ফাইনাল: স্যার ভিভ রিচার্ডস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

১৯৮৩: অঘটনের এক বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপের আগের দুবারের মতো তৃতীয় আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডকে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন ধরে হিসাব কষছিলেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। তবে আসর শুরুরে দিনই সব হিসাব বদলে যাওয়া শুরু করে। ডানকান ফ্লোচারের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ভর করে শিরোপাপ্রত্যাশী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয় জিম্বাবুয়ে। প্রথম দিনের অপর ম্যাচে গত দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে টুর্নামেন্ট মাতিয়ে দেয় ভারত।

গ্রুপ ‘এ’ থেকে সেরা দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান। ‘বি’ গ্রুপ থেকে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া শেষ চার নিশ্চিত করে।সেমিফাইনালে প্রত্যাশিত জয় পায় ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাকিস্তানের ১৮৪ রানের জবাবে,ভিভ রিচার্ডসের ঝড়ো ৮০ রানের ইনিংসে ৮ উইকেটে জয় তুলে নিয়ে তৃতীয় ফাইনাল নিশ্চিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

লর্ডস যখন আরেকটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড ফাইনালের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ঠিক তখনই ক্রিকেট বিশ্বে আরেকটি অঘটন ঘটায় কপিল দেবের ভারত। ডেভিড গাওয়ার, মাইক গ্যাটিংয়দের হেসে খেলে হারিয়ে প্রথম এশীয় দেশ হিসেবে ফাইনালে জায়গা করে নেয় তেরঙ্গাধারীরা।

ফাইনালে আবার চমক দেখায় ভারত। ব্যাটিং করতে নেমে তারকা খচিত ক্যারিবীয় বোলারদের সামনে দাঁড়াতে না পারলেও ১৬৩ রানের ছোটখাট লক্ষ্য দাঁড় করায়। লর্ডস যেন সেদিন ভারতীয়দের দুহাতে ভরিয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল। গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স, ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েডের নিয়ে সাজানো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনে আপ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে মহিন্দর অমরনাথ ও মদন লালের সামনে। মাত্র ১৪০ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪৩ রানে ভারতের এমন অঘটনীয় জয় বিশ্বজয়ের পথে পরবর্তীতে অন্য দলগুলোর জন্য জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করেছে।

এক নজরে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ

সময়:  ৯ থেকে ২৫ জুন, ১৯৮৩

আয়োজক: ইংল্যান্ড ও ওয়েলস

ভেন্যু: ১৫

ম্যাচ: ২৭

চ্যাম্পিয়ন: ভারত

রানার আপ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ

সবোর্চ্চ রান: ডেভিড গাওয়ার (৩৮৪), ইংল্যান্ড

সবোর্চ্চ উইকেট: রজার বিনি (১৮), ভারত

ম্যান অফ দ্য ফাইনাল: মহিন্দর অমরনাথ (ভারত)

১৯৮৭: অস্ট্রেলিয়ান রাজত্বের শুরু

এই প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয় ইংল্যান্ডের বাইরে। এই আসর দিয়েই শেষ হয় শেষ হয় সাদা পোশাক ও লাল বলের ওয়ানডে ম্যাচ। আগের তিন আসরে দারুণ খেলা অস্ট্রেলিয়া দল এবার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করে।

আট দল নিয়ে আয়োজিত বিশ্বকাপের আধুনিক এই আসরের ‘এ’ গ্রুপে ছিল ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে। অপর গ্রুপে ছিল ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গ্রুপ পর্বে ভারত ও পাকিস্তানের দাপটের সাথে পেরে উঠছিল না কোনো দলই। ছয় ম্যাচে পাঁচটি জয় নিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। অপর গ্রুপ থেকে পাকিস্তান পাঁচটি ও ইংল্যান্ড চারটি জয় নিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করে।

গ্রুপ পর্বে একটি মাত্র ম্যাচে হেরেছিল ইমরান খানের দল। সেই কারণেই পাকদের পক্ষে প্রত্যাশার পারদ অনেক চড়া ছিল। সেমিফাইনাল জিতে তখন ফাইনালের স্বপ্নে বিভোর পাক সমর্থকরা। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে সূচনাটা ভালো হয়েচিল অস্ট্রেলিয়ার। উদ্বোধনী জুটিতে ৭৩ রান তুলে নেন জিওফ মার্শ ও ডেভিড বুন। মার্শ (৩১) আউট হওয়ার পর ডিন জোন্স ও বুন মিলে অজি স্কোটাকে এগিয়ে নিতে যেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বেলেত্তা (৪৮), স্টিভ ওয়াহ (৩২) মিলে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহটা ২৬৭ রানে নিয়ে যান।

জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৩৮ রানে তিন উইকেট হারায় পাকিস্তান। এরপর ১১২ রানের জুটি গড়েন ইমরান খান ও জাভেদ মিয়াদাদ। ইমরান আউট হওয়ার পর দ্রুত রান তোলার তাগিদে টপাপটপ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত ৪৯ ওভারে ২৪৯ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। ১৮ রানে ম্যাচটা জিতে ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। অপর সেমিফাইনালে গ্রাহাম গুচের অনবদ্য শতকের কাছে ৩৫ রানে হরে বিদায় নেভারত।

ভারতের ইডেন গার্ডেনে অনুষ্ঠিত শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৭  রানে হারায় অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেটবোদ্ধাদের চোখে এটি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যাচ। ডেভিড বুন (৭৫), ভেলেত্তা (৪৫) ও অ্যানেল বোর্ডারের ৩১ রানে ভর করে ৫ উইকেটে ২৫৩ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে বিল অ্যাথে (৫৮), অলেন ল্যাম্ব (৪৫) মাইক গ্যাটিং (৪৫) এর ব্যাটিংয়ে ব্যাটিং ইনিংসের তিনভাগ সময় ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতে ধরে রাখে ইংল্যান্ড। তবে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত ৭ রানে পরাজয় বরণ করতে হয় ইংলিশদের।

এক নজরে ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ

সময়: ৮ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর, ১৯৮৭

আয়োজক: ভারত ও পাকিস্তান

ভেন্যু: ২১

ম্যাচ: ২৭

চ্যাম্পিয়ন: অস্ট্রেলিয়া

রানার আপ: ইংল্যান্ড

সবোর্চ্চ রান: গ্রাহাম গুচ (৪৪৭), ইংল্যান্ড

সবোর্চ্চ উইকেট: ইমরান খান (১৭), পাকিস্তান

ম্যান অফ দ্য ফাইনাল: ডেডিভ বুন (অস্ট্রেলিয়া)

১৯৯২: ভারতের পর পাকিস্তানের উত্থান

ক্রিকেটকে আমূলে বদলে দিতে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের বড় একটা ভূমিকা আছে। সেবারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রঙীন পোষাক, সাদা বল, নিয়ন আলো ব্যবহার করা হয়। ক্রিকেটে পিঞ্চ হিটিং, ইনিংসের শুরুতে স্পিনার দিয়ে বল করানোর প্রথাও শুরুও সেই বিশ্বকাপ দিয়েই শুরু হয়। এছাড়া নাম সম্বলিত জার্সি, দুই প্রান্ত থেকে নতুন বল, বৃষ্টি আইনও প্রথম চালু হয় সেবার। বর্ণবাদের অভিযোগের সাজা শেষ করে ২১ বছর পর ক্রিকেটে ফেরে দক্ষিণ আফ্রিকা। সে কারণে সেবার নয় দল নিয়ে বিশ্বকাপ আযোজন করা হয়।

ঘরের মাটিতে শুরু থেকেই নাজেহাল হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হেরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেয় অজিরা। আগেরবারের সেমিফাইনালিস্ট ভারতের অবস্থা  হয় আরো বাজে। পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ে ছাড়া আর কারো বিপক্ষেই জিততে পারেনি কপিল দেব-আজহাররা। প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজও। আট ম্যাচের চারটিতে হেরে বিদায় নেয় দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

প্রথম সেমিফাইনালে ইমরান খান-জাভেদ মিয়াদাদের অভিজ্ঞতা ও ইনজামাম উল হক ও মঈন খান নামে দুই তরুণ তুর্কির কাছে হেরে বসে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে প্রকৃতির বিড়ম্বনা ভাগ্যের নির্মম প্রহসনের কাছে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল শুরু হওয়ার আগেই হানা দেয় বৃষ্টি, খেলার দৈর্ঘ্য কমে আসে ৪৫ ওভারে। গ্রায়েম হিকের ৯০ বলে ৮৩ রানের চমৎকার ইনিংসের ওপরে ভর করে ছয় উইকেটে ২৫২ রান করে ইংল্যান্ড। জবাবে ব্যাট করতে নেমে অ্যান্ড্রু হাডসন (৪৬), এড্রিয়ান কাইপার (৩৬), জন্টি রোডস (৪৩) আর ক্রনিয়ের (২৪) দায়িত্বশীল ব্যাটিং লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। শেষ পাঁচ ওভারে চার উইকেট হাতে নিয়ে প্রয়োজন ছিল ৪৭ রান। সপ্তম উইকেটে ব্রায়ান ম্যাকমিলান ও ডেভ রিচার্ডসন মাত্র তিন ওভারে ২৬ রানের জুটি গড়ে লক্ষ্যকে নিয়ে আসেন হাতের নাগালে। দুজন যেভাবে ব্যাট করছিলেন তাতে জয়টা মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। ম্যাকমিলান ২১ বলে ২১ রান আর রিচার্ডসন ১০ বলে ১৩ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন। কিন্তু ৪৩তম ওভারের শেষ বলের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ‘বিশ্বকাপ-ট্র্যাজেডি’র জন্ম দিতেই যেন আবার শুরু হলো বৃষ্টি। জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন ১৩ বলে ২২ রান।

সে সময় ১২ মিনিটের বৃষ্টি একটা ‘ক্লাসিক ম্যাচকে পরিণত করে ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম বিতর্কিত ম্যাচে। বৃষ্টি শেষে নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ৭ বলে ২২ রান। কিছুক্ষণ পর সেখানে নতুন লক্ষ্য হয় ১ বলে ২২ রানের। সিডনির কালো আকাশ তখন ছেয়ে গেছে বিভ্রান্তির মেঘে। শেষ চারের মতো ফাইনালেও জ্বলে ওঠেন ইমরান খান-জাভেদ মিয়াদাদ-ইনজামাম-ওয়াসিম আকরামরা। ব্যাট হাতে সবোর্চ্চ ৭২ রান করেন ইমরান। ৫৮ রান করেন বড়ে মিঁয়া, ইনজি ৪২ ও ১৮ বলে ৩৩ রান করেন ওয়াসিম আকরাম। ৫০ ওভার শেষে ২৪৯ রান করে পাকিস্তান।

শিরোপা জয়ের ম্যাচে নেইল ফেব্রাদার বাদে সপ্রতিভ ছিলেন না আর কোনো ইংলিশ ব্যাটসম্যান। ওয়াসিম ও্র মুশতাক আহমেদ তিনটি করে উইকেট নিয়ে ২২১ রানের মধ্যেই ইংল্যান্ডকে আটকে রাখেন। ২২ রানে ম্যাচটি জিতে প্রথমবারের মতো শিরোপা আনন্দে মেতে ওঠে এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি পাকিস্তান। এই ম্যাচ জিতেই অবসর নেন ক্রিকেট বিশ্বের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার ইমরান খান।

এক নজরে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ

সময়: ২২ ফেব্রুয়ারি-২৮ মার্চ ১৯৯২

আয়োজক: অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড

ভেন্যু: ১৮

ম্যাচ: ৩৯

চ্যাম্পিয়ন: পাকিস্তান

রানার আপ: ইংল্যান্ড

সবোর্চ্চ রান: মার্টিন ক্রো (৪৫৬), নিউজিল্যান্ড

সবোর্চ্চ উইকেট: ওয়াসিম আকরাম (১৮), পাকিস্তান

ম্যান অফ দ্য ফাইনাল: ওয়াসিম আকরাম, পাকিস্তান

ম্যান অফ দ্য সিরিজ: মার্টিন ক্রো, নিউজিল্যান্ড

১৯৯৬: খুন-হাঙ্গামার বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার ইতিহাস

ক্রিকেট তো বটেই বিশ্ব রাজরীতিতে ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। বিশ্বকাপ শুরুর কয়েকদিন আগে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বোমা হামলা চালিয়ে ৯০ জনকে হত্যা করে শ্রীলঙ্কার বিদ্রোহী গোষ্ঠী লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিটিই; যারা তামিল টাইগার নামেও পরিচিত) । শ্রীলঙ্কা সেবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকের দায়িত্ব পেয়েছে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এমন রক্তপাত বিশ্বকাপ আয়োজকদের কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত দ্বীপ দেশটিতে বিশ্বকাপ শুরু হলেও অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেখানে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। তাতে অবশ্য লাভটা শ্রীলঙ্কারই হয়েছিল।

প্রথমবারের মতো সেবার বিশ্বকাপে অংশ নেয় ১২টি দল। বিশ্বকাপে অভিষেক হয় কেনিয়া, নেদারল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের।‘এ’ গ্রুপের সূচি অনুযায়ী শ্রীলঙ্কার একটি বাদে প্রতিটি ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলার কথা ছিল। যদিও নিরাপত্তার অজুহাতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে কলম্বোতে খেলতে অস্বীকৃতি জানায় অস্ট্রেলিয়া ও উইন্ডিজরা। আর অন্য ম্যাচগুলোতে ভারত, কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পেলে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে চলে আসে দলটি।

অন্য গ্রুপ থেকে অনুমিতভাবেই বাড় পড়ে আরব আমিরাত ও নেদারল্যান্ডস। গ্রুপ সেরা হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্য তিনটি দল ছিল পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ইংল্যান্ড। গ্রুপ পর্বে একটি ম্যাচেও হারেনি প্রোটিয়ারা। কোয়ার্টার ফাইনালে জয়সূরিয়ার ঝড়ে ইংল্যান্ডকে হারায় শ্রীলঙ্কা। শেষ চারে ওঠার লড়াইয়ে ভারত হারায় পাকিস্তানকে। ব্রায়ান লারার ঐতিহাসিক শতকে ফেভারিট দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর শেষ ম্যাচে ক্রিস হ্যারিসের শতক (১৩০) ফিকে করে দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সেমিতে তোলেন মার্ক ওয়াহ (১১০)।

সেমিফাইনালে ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ভারতকে হারিয়ে দেয় অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলঙ্কা। ইডেনে দর্শকদের হাঙ্গামায় ম্যাচটি শেষ হতে পারেনি। শাস্তিস্বরুপ শ্রীলঙ্কাকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। যদিও নিশ্চিতভাবে ম্যাচটি লঙ্কানরাই জিততো। আর অপর ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় শিরোপা ঘরে তুলবে এমন স্বপ্নে বুদ ছিলেন অজি সমর্থকরা। ঠিক এমন সময়ে অরবিন্দ ডি সিলভার বীরোচিত শতকে লাহোরে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা।

এক নজরে ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ

সময়: ১৪ ফেব্রুয়ারি-১৭ মার্চ ১৯৯৬

আয়োজক: ভারত-পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা

ভেন্যু: ২৬

ম্যাচ: ৩৭

চ্যাম্পিয়ন: শ্রীলঙ্কা

রানার আপ: অস্ট্রেলিয়া

সবোর্চ্চ রান: শচীন টেন্ডুলকার (৫২৩), ভারত

সবোর্চ্চ উইকেট: অনিল কুম্বলে (১৫), ভারত

ম্যান অফ দ্য ফাইনাল: অরবিন্দ ডি সিলভা, শ্রীলঙ্কা

ম্যান অফ দ্য সিরিজ: সনৎ জয়সুরিয়া, শ্রীলঙ্কা

১৯৯৯: অস্ট্রেলীয় সাম্রাজ্যবাদ ও টাইগারদের শুরু

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এবারই প্রথম বিশ্বকাপের সাথে পরিচয় ঘটে টাইগারদের। বিভিন্ন কারণেই ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এই আসরটির কথা মনে রাখবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেবার স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের আগমনী বার্তা দিয়ে রাখে বাংলাদেশ। এই আসর দিয়েই ক্রিকেটে প্রায় যুগব্যাপী আধিপত্যের শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার। বাংলাদেশের সাথে সেবারই বিশ্বকাপের সাথে পরিচয় হয় আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসের। সেটি সহ-আয়োজক হিসেবে। এবারই প্রথম বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। গ্রুপের সেরা ছয় দল ওঠে সুপার সিক্সে। আয়োজক হলেও সেবারের আসরটি ভুলে যেতে চাইবে ইংল্যান্ড। সেবার প্রথম পর্ব থেকেই বাদ পড়ে যায় দলটি।

নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে চমক দেখিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় টাইগাররা। ৫ ম্যাচের মধ্যে জয় পেয়ে ছিল ২ টি ম্যাচে। সাঈদ আনোয়ার, আজহার মাহমুদ, ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আক্তারদের পাকিস্তানকে হারিয়ে নজর কাড়ে লাল সবুজের বাংলাদেশ।

‘এ’ গ্রুপ থেকে সেরা হয়ে সুপার সিক্সে ওঠে ক্রিকেট বিশ্বে পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা দক্ষিণ আফ্রিকা। অপর দুটি দল ছিল ভারত ও জিম্বাবুয়ে। ইংল্যান্ডের মতো সেবার প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে যায় আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা।  গ্রুপ ‘বি’ থেকে পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ ও স্কটল্যান্ডকে নিয়ে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার। গ্রুপ পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ছয় পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে থেকে সুপার সিক্স নিশ্চিত করে তারা। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী সুপার সিক্সে প্রতিটি দলকে প্রতিপক্ষ গ্রুপের দলগুলোর সঙ্গে খেলতে হতো।

সুপার সিক্সে প্রতিটি ম্যাচ জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে অ্রস্ট্রেলিয়া। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে নিজেদের শিরোপার অন্যতম দাবিদার হিসেবে ঘোষণা করে স্টিভ ওয়াহর দল। অন্যদিকে তিন ম্যাচের দুটিতে জয় নিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে পাকিস্তান দক্ষিণ আফ্রিকা। সুপার সিক্সে কেবল একটি করে ম্যাচে জেতে ভারত ও নিউজিল্যান্ড। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বৃষ্টির কারণে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় বাড়তি একটি পয়েন্ট পেয়ে ভারতকে টপকে শেষ চারে ওঠে কেউইরা।

সেমিফাইনালে সাঈদ আনোয়ার (১১৩) ও ওয়াজিতুল্লাহ ওয়াস্তির (৮৪) অবিচ্ছিন্ন ১৯৪ রানের জুটিতে ৯ উইকেট হাতে রেখেই নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ইমরান খানের উত্তরসূরীরা। শ্বাসরুদ্ধকর অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় সেমিফাইনাল টাই হয়। রান রেটে এগিয়ে থাকায় ফাইনালে ওঠে অজিরা। ফাইনালে শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণিতে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া।

এক নজরে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ

সময়কাল: ১৪ মে-২০ জুন, ১৯৯৯

আয়োজক: ইংল্যান্ড, ওয়েলশ, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস

ভেন্যু: ২১

ম্যাচ: ৪২

চ্যাম্পিয়ন: অস্ট্রেলিয়া

রানার আপ: পাকিস্তান

সবোর্চ্চ রান: রাহুল দ্রাবিড় (৪৬১)

সবোর্চ্চ উইকেট: ২০টি জিওফ অ্যালট (নিউজিল্যান্ড) ও শেন ওয়ার্ন (অস্ট্রেলিয়া)

ম্যান অফ দ্য ম্যান: শেন ওয়ার্ন (অস্ট্রেলিয়া)

ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট: ল্যান্স ক্লুজনার (দক্ষিণ আফ্রিকা)

২০০৩: অস্ট্রেলিয়া, কেনিয়া ও শচীনের বিশ্বকাপ

২০০৩ বিশ্বকাপ শুরুর আগেই দেখা দেয় নানাবিধ ঝামেলা। স্পন্সরশিপ ইস্যুতে আইসিসি ও ভারত ঝড়িয়ে পড়ে বিবাদে। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত পৌঁছায়। শেষ পর্যন্ত ভারত দুক্ষিণ আফ্রিকাগামী বিমানে উঠলেও ঝামেলা কিন্তু শেষ হয়নি। এদিকে জিম্বাবুয়েতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেখানে খেলতে অস্বীকৃতি জানায় ইংল্যান্ড। স্বৈরশাসক রবার্ট মুগাবের বিরুদ্ধাচরণ করেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও হেনরি ওলঙ্গা। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে কালো টেপ পেচিয়ে খেলতে নামেন তারা। বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি মুগাবে সরকার। এই বিশ্বকাপের পরেই দেশের হয়ে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় এই দুই কিংবদন্তি জিম্বাবুইয়ানের।

অন্যদিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আশ্বস্ত না হতে পেরে কেনিয়ায় খেলতে যায়নি নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক চারদিন আগে ডোপ টেস্টে উতরাতে ব্যর্থ হওয়ায় টুর্নামেন্টে নিষিদ্ধ হয়ে পড়েন আগের আসরের সুপার স্টার শেন ওয়ার্ন। বিশ্বকাপের আগের সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বর্ণবাদী আচরণের দায়ে নিষিদ্ধ হন ড্যারেল লেহম্যান। ক্রিকেট বিশ্বে তিনিই প্রথম ক্রিকেটার যিনি বর্ণবাদের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত হন। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে অনুষ্ঠিত হয় মোট ৫৪টি ম্যাচ। এর চেয়ে বেশি ম্যাচ হয়নি আর কোনো বিশ্বকাপেই। সেবার সহযোগী দেশ হিসেবে কেনিয়া, কানাডা, নামিবিয়া ও নেদারল্যান্ডস অংশ নেয়।

২০০৩ বিশ্বকাপকে অঘটনের বিশ্বকাপই বলা যায়। সেবার গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের মত দেশগুলি। আইসিসির সহযোগী প্রথম দেশ হিসেবে কোন টেস্ট না খেলেই সেমিফাইনালে উঠে চমক দেখায় কেনিয়া। ২০০৩ বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য ছিল দারুণ হতাশার। সেবার কারো বিপক্ষেই জয় পায়নি খালেদ মাসুদ পাইলটের দল। কানাডা ও কেনিয়ার কাছেও হেরে যায় বাংলাদেশ।

পুল ‘এ’ থেকে সুপার সিক্সে ওঠে অস্ট্রেলিয়া ভারত ও জিম্বাবুয়ে। অপর পুল থেকে দুর্দান্ত খেলে সেরা ছয় নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া ও নিজিল্যান্ড। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ডার্ক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতির কাছে হার মেনে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।

সুপার সিক্সে সব কটি ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। অপরদিকে দুটি ম্যাচে জয় পায় শ্রীলঙ্কা। একটি করে ম্যাচে জয় পেলেও রান রেট হিসেবে এগিয়ে থাকায় নিউজিল্যান্ডকে ডিঙিয়ে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে ওঠে কেনিয়া। প্রথম সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। অপর সেমিতে একতরফা জয় নিয়ে ২০ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ভারত।

২৩ মার্চ জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে ফাইনালে অজিদের বিপক্ষে পেরে ওঠেনি সৌরভ গাঙ্গুলীর ভারত। জহির খান-শ্রীনাথদের পিটিয়ে অস্ট্রেলিয়া তোলে ২ উইকেট ৩৫৯ রান। বিশ্বকাপের ফাইনালে এটি সবোর্চ্চ রানের বিশ্বরেকর্ড। পুরো টুর্নামেন্টে স্বপ্নের মতো খেলা শচীন টেন্ডুলকার ফাইনালে করেন মাত্র ৪ রান। ৩৯.২ ওভারে ২৩৪ রানে অলআউট হয় যায় ভারত। এতেই ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে তৃতীয় শিরোপা ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া।

এক নজরে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ

সময়: ৯ ফেব্রয়ারি-২৩ মার্চ, ২০০৩

আয়োজক: দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া

ভেন্যু: ১৫

ম্যাচ: ৫৪

চ্যাম্পিয়ন: অস্ট্রেলিয়া

রানার আপ: ভারত

সবোর্চ্চ রান: শচীন টেন্ডুলকার (৬৭৩)

সবোর্চ্চ উইকেট: চামিন্দা ভাস (২৩)

ম্যান অফ দ্য ফাইনাল: রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া)

ম্যান  অফ দ্য টুর্নামেন্ট: শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)

২০০৭: অস্ট্রেলিয়ার হ্যাটট্রিক শিরোপা আর বাংলাদেশের দৈত্যবধ

আগেরবারের মতো ২০০৭ বিশ্বকাপেও শুরু থেকেই বিতর্ক লেগে থাকে। অনুশীলনের জন্য ছিল না পর্যাপ্ত ভেন্যু। ক্রিকেটাররদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল তুঙ্গে। ছিল টিকিটের বাড়তি দাম নিয়ে ঝড়। বিশ্বকাপ শুরুর পর পরই জৌলুস হারিয়ে বসে টুর্নামেন্ট। কারণ এশিয়ার দুই পরাশক্তি ভারত-পাকিস্তান বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকেই। টুর্নামেন্ট চলাকালীলেই হোটেল রুমে পাওয়া যায় পাকিস্তানের কোচ বব উলমারের মৃতদেহ। তার মাত্র একদিন আগে নবাগত আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হারে পাকিস্তান।

আগের আসরের ব্যর্থতা ভুলে সেবার দুর্দান্ত খেলে হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। এই প্রথমবার বিশ্বকাপের সুপার এইটে ওঠে লাল-সবুজের দল। প্রথম ম্যাচেই শচীন-সৌরভ-দ্রাবিড়ের ভারতকে হারিয়ে হৈচৈ ফেলে দেন তামিম-মুশফিক-সাকিবরা। সুপার এইটে আরেক দৈত্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারায় টাইগাররা।

চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে টুর্নামেন্টে অংশ নেয় ১৬ দর। গ্রুপ ‘এ’ থেকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার এইট নিশ্চিত করে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। এই গ্রুপ থেকে অজিদের সঙ্গী হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ ‘বি’ থেকে শেষ আটে ওঠে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। ভারত ও বারমুডা বিদায় নেয়।

গ্রুপ ‘সি’ থেকে কেনিয়া ও কানাডাকে পেছনে ফেলে সুপার এইটে ওঠে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। আর ‘ডি’ গ্রুপ থেকে উঠে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ড।

সুপার এইটে অনুষ্ঠিত হয় ২৪টি ম্যাচ। অপরাজিত হয়ে প্রথম দল হিসেবে সেমি ফাইনালে টিকিট কাটে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। অজিদের সাথে সেমিফাইনালে ওঠে শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাইনালে ওঠার ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সাথে পেরে ওঠেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। সাত উইকেটে ম্যাচটা জিতে টানা তৃতীয়বারের মতো ফাইনাল নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া। অপর সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৮১ রানে হারিয়ে ১৯৯৬ সালের পর প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠে শ্রীলঙ্কা।

সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনেরা পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেললেও ফাইনালে অজি আধিপত্যে কোনরকম আঁচ ফেলতে পারেননি। বৃষ্টির কারণে খেলা কমিয়ে আনা হয়েছিল ৩৮ ওভারে৷ অ্যাডাম গিলক্রিস্টের দানবীয় ১০৪ বলে ১৪৯ রানের কল্যাণে অজিরা পায় চার উইকেটে ২৮১ রানের শক্ত ভিত। আরেক দফা বৃষ্টিতে শ্রীলঙ্কার সামনে পুনঃনির্ধারিত লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৬ ওভারে ২৬৯ রান।

ব্যাটিং করতে নেমে কম যাচ্ছিল না শ্রীলঙ্কাও। তবে জয়াবর্ধনে ও সাঙ্গাকারা ফিরতেই ম্যাচের লাগাম ফিরে পায় অস্ট্রেলিয়া। আলো কমে আসায় আম্পায়াররা খেলা বন্ধ করে দেন এবং অসি খেলোয়াড়রা তাদের বিজয়োল্লাস শুরু করেন৷ কিন্তু একটু পর আম্পায়াররা জানান শেষ তিন ওভার খেলতেই হবে। শেষ ১৮ বলে শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া হয় ৬৩ রানের লক্ষ্য। শেষ পর্যন্ত আর পেরে ওঠেনি লঙ্কানরা। ৫৩ রানে জিতে হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

এক নজরে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ:

সময়: ১৩ মার্চ-২৮ এপ্রিল, ২০০৭

আয়োজক: ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ভেন্যু: ৮টি

ম্যাচ: ৫১

চ্যাম্পিয়ন: অস্ট্রেলিয়া

রানার আপ: শ্রীলঙ্কা

সবোর্চ্চ রান: ম্যাথু হেইডেন (৬৫৯), অস্ট্রেলিয়া

সবোর্চ্চ উইকেট: গ্লেন ম্যাকগ্রা (২৬), অস্ট্রেলিয়া

ম্যান অফ দ্য ফাইনাল: অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (অস্ট্রেলিয়া)

ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট: গ্লেন ম্যাকগ্রা (অস্ট্রেলিয়া)

২০১১: বাংলাদেশের বিশ্বকাপ আয়োজন ও ওয়ানডেতে শচীনের অমরত্ব

অবিসংবাদিতভাবে ওয়ানডে ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের চেয়ে বড় তারকা ক্রিকেট বিশ্বে দ্বিতীয়জন নেই। ক্যারিয়ারে প্রায় সব ট্রফিই ছিল ক্রিকেট ঈশ্বরের শোকেসে, ছিল না কেবল বিশ্বকাপের ট্রফিটিই। ১৯৮৩ সালের পর ২৮ বছর ধরে ভারতের বিশ্বকাপ খরা চলছিল। অবশেষে ক্রিকেট পাগল দেশটিতে অধরা বিশ্বকাপটি আসে সেই শচীনের হাত ধরেই।

২০১১ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের ভার পরে বাংলাদেশের ওপর। সেবার ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে ২০০৯ সালে পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার কারণে দেশটিকে আয়োজক দেশের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

২০০৭ সালে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে ভারত ও পাকিস্তান বাদ পড়ায় এই আসরে আবার রাউন্ড লিগ পদ্ধতিতে ফিরে যায় আইসিসি। সেবার উপমহাদেশের চারটি দলকে দুটি গ্রুপে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়। ২০১১ সালের বিশ্বকাপেই ক্রিকেটে ডিআরএস, ব্যাটিং পাওয়ার প্লে ও বোলিং পাওয়ার প্লে চালু করা হয়।

১৯ ফেব্রুয়ারি মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও ভারতের ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠে বিশ্বকাপের দশম আসরের। বড় ব্যবধানে জয় নিয়ে ভালোভাবেই বিশ্বকাপ শুরু করে ভারত। সেবার গ্রুপ পর্বে তেমন কোনো অঘটন ঘটেনি।

‘এ’ গ্রুপ থেকে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ওঠে কোয়ার্টার ফাইনালে। ১৯৯৯ সালের পর ৩৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ হারে অস্ট্রেলিয়া। এটি একটি বিশ্বরেকর্ড। ‘বি’ গ্রুপ থেকে বাদ পড়ে বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস।

ঘরের মাঠে প্রত্যাশিত জয় পেয়ে সেমিফাইনালে ওঠে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। ঢাকার মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় পাকিস্তান। আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চাপের মুখে আরেকবার ভেঙে পড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার নামের সাথে চোর্কাস অপবাদটি স্থায়ীভাবে সেঁটে যায়।

সেমিফাইনালে ভারতের সাথে পেরে ওঠেনি পাকিস্তান। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডকে সহজেই হারিয়ে শ্রীলঙ্কাও ওঠে ফাইনালে। ২ এপ্রিল শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মাহেলা জয়াবর্ধনের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ছয় উইকেটে ২৭৪ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। ক্রিকেট বিশ্বে এই প্রথম কোনো ম্যাচে দুবার টস করা হয়। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দুদলের সমর্থকদের গগন বিদারী শব্দে মাহেলা জয়াবর্ধনের কল শুনতে পাননি কেউই।

২৭৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই শচীন-শেবাগকে ফেরান মালিঙ্গা। তবে লঙ্কানরা কোহলি-গম্ভীরকে ফেরাতে পারেনি। দলীয় ১১৫ রানে কোহলি যখন ফিরে আসেন তখন ম্যাচে ভালো অবস্থানে ভারত। এরপর শুরু হয় ধোনি শো। গম্ভীরকে সাথে নিয়ে ভারতে এগিয়ে নিয়ে যান দলপতি। ২২৩ রানে গম্ভীর যখন ফেরেন তখন ম্যাচে ভারতের একক আধিপত্য। যুবরাজ সিংকে নিয়ে বাকি কাজটুকু বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন করেন ধোনি। এই বিশ্বকাপে দুটি শতকসহ ৪৮২ রান করেন শচীন। ৯ ম্যাচে ৩৬২ রান ও বল হাতে ১৫ উইকেট নেওয়ায় টুর্নামেন্ট সেরা হন যুবরাজ সিং।

এক নজরে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ

সময়: ১৯ ফেব্রুয়ারি-২ এপ্রিল

আয়োজক: ভারত-শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ

ভেন্যু: ১৩

ম্যাচ: ৪৯

চ্যাম্পিয়ন: ভারত

রানার আপ: শ্রীলঙ্কা

সবোর্চ্চ রান: তিলকরত্নে দিলশান, শ্রীলঙ্কা (৫২২)

সবোর্চ্চ উইকেট: শহীদ আফ্রিদি ও জহির খান (২১)

ম্যান অফ দ্য ম্যাচ: মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)

ম্যান অফ দ্য ফাইনাল: যুবরাজ সিং (২০১১)

২০১৫: অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা পুনরুদ্ধার ও ক্রিকেটে টাইগারদের পুনর্জন্ম

২০১৫ সালের বিশ্বকাপকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের নবজাগরণ বলা যায়। এই বিশ্বকাপে সাফল্যের মধ্য দিয়ে আমূলে বদলে যায় দেশের ক্রিকেটের হালচিত্র।  সেবার গ্রুপ পর্বে তিন জয় নিয়ে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখে বাংলাদেশ। ‘ব্যাক টু ব্যাক’ শতক করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

ক্রিকেটের একাদশতম আসরটি বসেছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে। গত আসরে ভালো না করার বদলাটা এই আসরে পুষিয়ে নেয় অস্ট্রেলিয়া। গ্রুপ পর্বে মাত্র একটি ম্যাচ হারা দলটি শেষ পর্যন্ত শিরোপাও ছিনিয়ে নেয়।

২০১৫ সালের বিশ্বকাপটা ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য। এই প্রথম বিশ্বকাপ দেখে ডাবল সেঞ্চুরি। মার্টিন গাপটিল করেন ২৩৭ রান। উদ্বোধনী জুটিতে ৩৭২ রানের পাহাড় গড়েন ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলস। বিশ্বকাপের দলীয় সবোর্চ্চ রানের রেকর্ডটিও হয় অস্ট্রেলিয়ায়। স্বাগতিক অজিরা ৪১৭ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। সেবার বিশ্বকাপ সাক্ষী হয় সাঙ্গাকারার টানা চারটি সেঞ্চুরির। গ্রুপ পর্বের শেষ চারটি ম্যাচের সবকটিতেই শতক হাঁকান লঙ্কান কিংবদন্তি।

ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠে ১১তম বিশ্বকাপের। গ্রুপ ‘এ’ থেকে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কা টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে। ‘বি’ গ্রুপ থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠ ভারত,দক্ষিণ আফ্রিকা,পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ উইকেটে হারায় শ্রীলঙ্কাকে। বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে হেরে যায় ১০৯ রানে। অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে হারায় পাকিস্তানকে এবং নিউজিল্যান্ড ১৪৩ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে।

শ্বাসরুদ্ধকর প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেটে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। অথচ ম্যাচটি প্রোটিয়াদের পক্ষেই ছিল। রান আউট, ক্যাচ মিস করে ডি ভিলিয়ার্স-ডুমিনিরাই ম্যাচটা কঠিন বানিয়ে ফেলে। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারতকে ৯৫ রানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। সেবার বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলছিল নিউজিল্যান্ড। তবে ফাইনাল ম্যাচে এসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করেন ম্যাককালাম-বোল্টরা। ফাইনালে কিউদের ৭ উইকেটে হারিয়ে রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া।

 এক নজরে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ

সময়: ১৪ ফেব্রুয়ারি-২৯ মার্চ, ২০১৫

আয়োজক: অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড

ভেন্যু: ১৪

ম্যাচ:৪৯

চ্যাম্পিয়ন: অস্ট্রেলিয়া

রানার আপ:নিউজিল্যান্ড

সবোর্চ্চ রান: মার্টিন গাপটিল (৫৪৭), নিউজিল্যান্ড

সবোর্চ্চ উইকেট: টেন্ট্র বোল্ট ও মিচেল স্টার্ক (২২)

ম্যান অফ দ্য ফাইনাল: জেমস ফকনার (অস্ট্রেলিয়া)

ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট: মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)

Pin It