এলডিসি থেকে উত্তরণে প্রস্তুতির সময় এখনই: বাণিজ্যমন্ত্রী

ldc-graduation-tipu-munshi-170422-01

চার বছর পর বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণের পরের সমস্যাগুলো মোকাবেলায় এখন থেকে পরিকল্পনা করে প্রস্তুতি শুরুর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পযর্যটন ভবনে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ (এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন) পরবর্তী সময়ের প্রস্তুতি বিষয়ক দিনব্যাপী কর্মশালার সমাপনী বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল আয়োজিত এ কর্মশালায় ‘প্রেফারেন্সিয়াল মার্কেট এক্সসেজ অ্যান্ড ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ ও ‘ডব্লিউটিও ইস্যুজ (আদার দেন) মার্কেট এক্সেস অ্যান্ড ট্রিপস’ শীর্ষক দুই পর্বের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বেসরকারি অর্থনীতি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ এলডিসি থেকে উত্তরণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা কর্মশালায় অংশ নেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশন নিয়ে একদিকে যেমন আমরা আনন্দিত, ঠিক একইভাবে কিছুটা চিন্তত। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের ধাক্কা সামাল দিতে এখনই আমাদেরকে কাজ শুরু করে দিতে হবে।

“আজকের আলোচনায় এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, হাতে যেই সময় আছে তাতে এখনই সিরিয়াসলি প্রস্তুতি নেমে পড়তে হবে। পিটিএ, এফটিএ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীও সতর্ক করেছেন। যেসব দেশের সঙ্গে এসব চুক্তি করা প্রয়োজন তা যদি সময়মত আমরা করতে না পারি, তাহলে ২০২৬ সালের পর বিপদে পড়ে যেতে হবে।“

সরকার ইতোমধ্যেই স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পরবর্তী সময়ের জন্য একটি জাতীয় কমিটি ও ছয়টি বিষয়ভিত্তিক উপ কমিটি গঠন করেছে।

এ উত্তরণ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গণ্য হবে। এর আগে প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় পাবে ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ।

এলডিসি থেকে বের হলে বাণিজ্যসহ আরও বেশ কিছু সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে বাংলাদেশের। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকেই আলোচনা চলছে।

রোববারের কর্মশালায় টিপু মুনশি বলেন, “আমরা যদি প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি ও দায়িত্বশীল লোক তৈরি করতে পারি তারাই আমাদের দিক নির্দেশনা দেবেন। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে হবে।“

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সমস্যাগুলো এখন প্রায় চিহ্নিত হয়েছে। এখন আমরা সমাধানে হাত দেব।

“আজকের আলোচনায় এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, আমাদের থিঙ্কট্যাং পর্যায়ে ঘাটতি রয়েছে। সেদিকে উন্নতি করার জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, তারাই ভবিষ্যত সম্পর্কে আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সেগুলো সব সময় হয়তো শতভাগ ফলে না। কিন্তু তাদের চিন্তাভাবনা ধরেই পরিকল্পনা করে এগুতে হয়।“

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরীফা খান দুটি কারিগরি সেশনের আলোচনার উপসংহার টেনে বলেন, ভর্তুকি, স্থানীয় কনটেন্টের চাহিদা, বিরোধ মীমাংসা, সেবা খাতে রেয়াত, বাণিজ্য সুবিধা, শুল্কায়ন, নূন্যতম আমদানি মূল্য, ট্যারিফ, সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানোর মত বিষয়গুলোতে পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ এসেছে আলোচনা থেকে।

ডব্লিউটিও এর সিদ্ধান্ত মেনে ধীরে ধীরে কৃষি ভর্তুকি তুলে দেওয়া, বিরোধ মীমাংসায় দক্ষতা অর্জনে প্রয়োজনীয় জনশক্তি প্রস্তুত করা, সেবাখাতে সক্ষমতা বাড়াতে লজিস্টিক খাতে উন্নতি করার কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “বাণিজ্য সুবিধার ক্ষেত্রে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এগ্রিমেন্ট (টিএফএ) যত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন করা যাবে, তত তাড়াতাড়ি আমাদের মঙ্গল হবে।“

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, এলডিসির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গঠিত কমিটিকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২৬ সালের পর যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ ছাড়া বাকি সব দেশে একযোগে এ সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। এ হিসাব মাথায় রেখে নির্বাচিত দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ করতে হবে। সেজন্য ট্যারিফ যৌক্তিকিকরণ বা কমিয়ে আনার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন নীতি গ্রহণ করতে হবে।

বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করার বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর প্রাইভেট সেক্টরগুলোকে আরও সক্রিয় করতে হবে। কারণ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ নিলে আলোচনার ক্ষেত্রে তারা বেসরকারি খাতের সঙ্গে নেগোশিয়েশন করতে আগ্রহী। এজন্য সরকারি বেসরকারি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা যেতে পারে।“

তিনি রপ্তানি পণ্যে বর্তমানের ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজনের হার বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

“আসলে এখন আমাদের ঘর গোছানোর সময়। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে,” যোগ করেন বাণিজ্য সচিব।

এফবিসিসিআই সভাপতি জসীম উদ্দিন বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর রপ্তানি সক্ষমতা ধরে রাখতে হলে এখনই বিভিন্ন খাতের সক্ষমতা বাড়াতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও গ্যাস বিদ্যুতের নিশ্চিয়তা দিতে হবে।

তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচলের গড় গতিবেগ ৪০ কিলোমিটার থেকে বাড়ানোর তাগিদ দেন। পাশাপাশি বন্দরের কাজের গতি বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে বলেন।

এজন্য বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সব মিলিয়ে আমরা ভীত নই। যে ধরনের ঝামেলাগুলো আছে, এগুলো দূর করা সম্ভব।”

Pin It