করোনা ছাড়লেও পিছু নিচ্ছে নানা জটিলতা

????????????????????????????????????

করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে সুস্থ হয়ে ওঠার পরও নানা শারীরিক জটিলতা পিছু নিচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর ৭০ ভাগ মানুষ নানা সমস্যায় ভুগতে পারে। সম্প্রতি ছয় মাসের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা এক সার্ভে রিপোর্টে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরাও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের অনেকেরই শরীর থেকে ভাইরাস চলে যাওয়া বা নেগেটিভ হওয়ার পরেও ধ্বংসের রেশ রয়ে যাচ্ছে অথবা নতুন করেও কিছু উপসর্গ বা দীর্ঘ মেয়াদে ধারাবাহিক নানারকম জটিলতায় ভুগতে হচ্ছে। তারা বলছেন, রোগীর শরীরের এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই যেখানে করোনা তার ক্ষতির চিহ্ন রাখে না। করোনা ভাইরাস ফুসফুসসহ রোগীর হার্ট, কিডনি, লিভার, রক্ত সংবহনতন্ত্র এবং স্নায়ুতন্ত্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই সুস্থ হওয়ার পরও বা করোনা নেগেটিভ হওয়া বা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া মানেই সব ভোগান্তির অবসান নয়। সুতরাং করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার পরও বাড়তি সতর্কতা এবং নিয়মিত চিকিত্সকের তত্ত্বাবধায়নে থাকতে হবে।

করোনা-পরবর্তী যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে যাওয়া, অবসাদ বা ক্লান্তি বোধ হওয়া, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়া, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, হাত-পা অবশ অবশ ভাব, ঝিঁঝিঁ লাগা, মাংসপেশি, হাড় বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, কোমরে ও মেরুদণ্ডে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস, অরুচি, অস্থিরতা ইত্যাদি। অর্থাৎ সব ধরনেরই জটিলতা দেখা দিতে পারে।

তারা জানান, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার এক মাস পর থেকে এসব রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই কমপক্ষে ছয় মাস চিকিত্সকের ফলোআপে থাকতে হবে।

করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার তিন মাস পার হয়েছে একজন কলেজ শিক্ষকের। সুস্থ হওয়ার পর থেকে প্রায়ই স্মৃতিভ্রমের মতো সমস্যা অনুভব করছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সুস্থ হলেও আমার শরীরে বেশকিছু পার্শ্বপতিক্রিয়া রয়ে গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো স্মৃতিভ্রম। ধরুন আমি বাসা থেকে দোকানে গেছি কিছু একটা কিনতে। কিন্তু যেখানে যাওয়ার পর কী জন্য এসেছি তা ভুলে যাই। অনেকক্ষণ চিন্তা করার পর হয়তো স্মরণে আসে। অথচ এমন সমস্যা আমার করোনার আগে ছিল না।

করোনা থেকে সুস্থ হওয়া একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর যতটুকু সমস্যা দেখা দেয় তার চেয়ে বেশি সমস্যা হয় করোনার থেকে সেরে ওঠার পর। আমি সুস্থ হয়েছি দুই মাস পার হলো , অথচ শরীরে প্রচণ্ড দুর্বলতা অনুভব করি। এছাড়া ভারী জিনিসপত্র বহন ও সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারি না এখনো। স্মৃতিশক্তিও লোপ পেয়েছে মনে হচ্ছে। এখনো ডাক্তারের পরামর্শে চিকিত্সা নিচ্ছি।

ধানমন্ডির এক গৃহিণী করোনামুক্ত হয়ে সুস্থ জীবনে ফেরেন ঠিকই কিন্তু তারপর থেকে শুরু হয় আরেক অসুস্থতা। সারাক্ষণ সবকিছুতে করোনা আছে মনে হয় তার। বাসাতেও সবাইকে মাস্ক পরে থাকতে বাধ্য করেন, সারাক্ষণ হাত ধোয়া, সারাক্ষণ সবকিছু ধোয়াধুয়ি করতে থাকেন। দেখা দিয়েছে মানসিক সমস্যা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার এক মাস পর রোগীর শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ এই রোগ তার পিছু ছাড়ে না। শরীরে সব ধরনের জটিলতাই দেখা দিতে পারে। তাই কমপক্ষে তিন মাস পর্যন্ত রোগীর চিকিত্সকের ফলোআপে থাকা নিরাপদ।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (এনআইএনএস) হাসপাতালের পরিচালক ও প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, খিঁচুনি, মানসিক সমস্যা, স্বাভাবিক কাজকর্মে অনীহা ও দুর্বলতা হতে পারে। এই সময়ে নিউরোলজিস্টেরও পরামর্শ নেওয়া উচিত। নইলে জটিলতা বেড়ে যেতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, লিভারের রোগীরা করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরও ৪০ ভাগের মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই সময়ে রোগীর চিকিত্সকের পরামর্শে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

Pin It