কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কাজে আসবে না: ড. বারকাত

barakal-samakal-5d16505f74bf9

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা কাজে আসবে না বলে মনে করেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত। তিনি কালো টাকা বিস্তার রোধে সৎ, যোগ্য ও সাহসী ব্যক্তিদের দিয়ে কমিশন গঠনের পরামর্শ দেন।

শুক্রবার রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ মিলনায়তনে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ অর্থনীতি শিক্ষক সমিতি।

ড. বারকাত বলেন, আগেও কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু এ সুযোগ কাজে আসেনি। উল্টো কালো টাকার একটা অংশ বিদেশে পাচার হচ্ছে। কালো টাকা প্রদর্শনের পর ভবিষ্যতে এটা নিয়ে প্রশ্ন করা হতে পারে, এই ভয়ে এটি হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সভরেন গ্যারান্টি (দায়মুক্তি) দিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে কালো টাকা নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই। এটা নিয়ে আগে একটি গবেষণা করা হয়েছিল। যদিও ওই গবেষণা তথ্য আর প্রকাশ করা হয়নি। ওই গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশে কালো টাকার পরিমাণ জিডিপির ৪২ থেকে ৪৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ১৭ লাখ কোটি টাকা। যা আমাদের বর্তমান তিনটি বাজেটের সমান। তবে পুঞ্জীভূত কালো টাকার পরিমাণ আরও বেশি। এটা ৩০ থেকে ৪০ লাখ কোটি টাকার কম হবে না, যা এখনকার দুটি জিডিপির সমান।

অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে ড. বারকাত বলেন, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় একজন লুঙ্গি পরা লোক তার কাছে এসেছিলেন কালো টাকা সাদা করতে। তিনি এক হাজার কোটি টাকা সাদা করতে চেয়েছিলেন। তাকে দেখে বোঝা যায়নি যে, তিনি এত টাকার মালিক। যেদিন তার টাকা সাদা করার কথা, তার আগের দিন এনবিআর ঘোষণা দিল, কালো টাকা বৈধ করলে এনবিআর কোনো প্রশ্ন করবে না। কিন্তু দুদকসহ অন্য সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে। এরপর ওই লোক আর আসেননি।

কালো টাকা অর্থনীতির মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে ও উৎপত্তি রোধে তিনটি পরামর্শ দিয়ে ড. বারকাত বলেন, কালো টাকা মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে স্থায়ীভাবে কমিশন গঠন করা যেতে পারে। একজন সৎ, যোগ্য ও সাহসী লোককে কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে তাকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত যেসব কারণে কালো টাকার সৃষ্টি হয় আর্থিক নীতিতে তার পরিবর্তন আনতে হবে। তৃতীয়ত কালো টাকার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করতে হবে।

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে দুই ধরনের ঋণখেলাপি আছে। একটি শ্রেণি অভ্যাসগত, দ্বিতীয়ত অনাভ্যাসগত। অভ্যাসগত শ্রেণি ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেয় না। অনভ্যাসগত শ্রেণি নানা কারণে খেলাপিতে পরিণত হয়। তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখা উচিত।

তিনি আরও বলেন, সংসদে তিনশ’ শীর্ষ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ছোট-বড় মিলিয়ে ঋণখেলাপির সংখ্যা এক লাখের বেশি। ওই তিনশ’ জনকে জেলে ভরলে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে না। এদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ে আইন সংস্কার করা যেতে পারে। যেমন খেলাপি প্রতিষ্ঠান রফতানির সঙ্গে জড়িত তাদের বিদেশে পণ্য রফতানি আয়ের অংশ সরাসরি ব্যাংক কেটে রাখতে পারবে।

সভায় অর্থনীতি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এমএ জলিল ও সাধারণ সম্পাদক ড. রেজাউল করিম, যুব অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি বদরুল মুনির, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম, অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দীনসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।

Pin It