কুয়েতে গ্রেপ্তার এমপি পাপুল রিমান্ডে

mp-papun-kuwait-arrest-080720

মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সোমবার গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়েতের রেসিডেন্স ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের আবেদনে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাদের আদেশ দেয় কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন বিভাগ।

ওই রেসিডেন্স ইনভেস্টিগেশন বিভাগ শনিবার রাতে মুশরেফ এলাকা থেকে আটক করে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি পাপুলকে, যিনি সেদেশে একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো তাকে কুয়েতের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে জানিয়েছেন কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

এদিকে এমপি পাপুলকে আটক করার কারণ এবং তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চেয়ে কুয়েত সরকারকে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস চিঠি লিখেছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম।

তিনি সোমবার রাতে বলেন, “এ সম্পর্কে জানতে চেয়ে আমরা কুয়েত সরকারের কাছে রোববারই চিঠি লিখেছি। এখন পর্যন্ত কোনো জবাব আসেনি।”

গালফ নিউজ লিখেছে, পাঁচ বাংলাদেশির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।

ওই ব্যক্তিরা প্রসিকিউশনকে জানিয়েছিল, তিন হাজার কুয়েতি দিনার খরচ করে পাপুলের মাধ্যমে সেদেশে গিয়েছে তারা। শুধু তাই নয়, ভিসা নবায়নের জন্য ফি বছর টাকা দিতে হয় তাদেরকে।

সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয় নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি।

কুয়েতে বাংলাদেশি এমপিকে আটক  

গালফ নিউজ লিখেছে, পাঁচ বাংলাদেশির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।

ওই ব্যক্তিরা প্রসিকিউশনকে জানিয়েছিল, তিন হাজার কুয়েতি দিনার খরচ করে পাপুলের মাধ্যমে সেদেশে গিয়েছে তারা। শুধু তাই নয়, ভিসা নবায়নের জন্য ফি বছর টাকা দিতে হয় তাদেরকে।

পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটির ধারণা।

কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সেবা খাত, নিরাপত্তা, নির্মাণ, আবাসন, পরিবহন, তেল শোধন প্রভৃতি খাতে কার্যক্রম রয়েছে মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপের। কুয়েতের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ব্যবসায় রয়েছে তাদের।

পাপুলের বিরুদ্ধে উঠা মানবপাচারের অভিযোগ তদন্ত হওয়ার বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

সে সময় কুয়েত সিআইডির বরাত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মানব পাচার নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কুয়েতি পত্রিকা আল কাবাস ও আরব টাইমস।

আল কাবাসের খবরে বলা হয়, কুয়েতে মানবপাচার ও ‘ভিসা বাণিজ্যে’ জড়িত থাকার অভিযোগে তিন বাংলাদেশির একটি চক্রের সন্ধান পাওয়ার পর একজনকে গ্রেপ্তার করেছে সেখানকার সিআইডি। বাকি দুজন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন; তাদের মধ্যে একজন সংসদ সদস্য।

ওই চক্রটি ২০ হাজার জনকে কুয়েতে পাচার করে ৫০ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার (১৩শ কোটি টাকা) হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ধারণা দেওয়া হয় ওই দুই সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে।

ওই সময় আল কাবাস থেকে উদ্ধৃত করে আরব টাইমস পরে আরেক প্রতিবেদনে লিখেছিল, কুয়েত সরকারের কাজ পেতে কর্মকর্তাদের পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি ঘুষ হিসেবে দিয়েছেন এমপি পাপুল। তিনি তার সম্পদের একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নিয়ে এক মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা শুরু করেছেন।

‘মানবপাচারে’ এমপি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন ‘ফেইক নিউজ’  

কুয়েতি গণমাধ্যম তখন ওই সাংসদের নাম উল্লেখ না করলেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এমপি পাপুলের নাম উঠে আসে, যিনি কুয়েতে জনশক্তি রপ্তানি এবং দেশে আর্থিক খাতের ব্যবসায় যুক্ত।

সে সময় ওই প্রতিবেদনগুলোকে ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

গত শনিবার পাপুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার স্ত্রী সেলিনাও সে খবর ভুয়া বলে উড়িয়ে দিতে চাইছিলেন।

Pin It