গ্রহাণুর বুকে প্রথম স্পন্দন শুনল নাসার মহাকাশযান

image-182955-1600111311

মহাকাশে এতদিন যাদের নিষ্প্রাণ মনে করা হতো তাদের মধ্যে প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পেয়েছে নাসার মহাকাশযান। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে এটি অনেক বড় ঘটনা। কারণ এবারই প্রথম ঘটল এমন ঘটনা। আদ্যোপান্ত পাথুরে গ্রহাণু বেন্নুতে এই প্রাণের স্পন্দন আবিষ্কার করেছে নাসার মহাকাশযান ‘ওসিরিস রেক্স’। সেই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে লেখা গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘জার্নাল অব জিওফিজিক্যাল রিসার্চ :প্ল্যানেটস’-এ।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই স্পন্দনকে অবশ্য জৈবিক বলা যাচ্ছে না। তবে দেখা গেছে, দূর থেকে এত দিন যাদের শুধুই নির্জীব, নিছকই পাথুরে বলে ভাবা হতো, তাদের মধ্যেও নিয়মিত ভাঙাচোরা হয়। পাথরে ফাটল ধরে। আর আপাতদৃষ্টিতে সেই নির্জীব, নিষ্প্রাণ পাথুরে মহাজাগতিক বস্তুটি মহাকাশে মুহুর্মুহু উগরে দেয় রাশি রাশি কণা। যার বেশির ভাগ ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশে আর কিছুটা ফিরে আসে উৎসে। সেই চঞ্চলতা প্রাণের স্পন্দনের মতোই গতিময়। কোনো গ্রহাণু থেকে কীভাবে রাশি রাশি কণা প্রতি মুহূর্তে ছড়িয়ে-ছিটকে পড়ে মহাকাশে তার যথাসম্ভব ব্যাখ্যাও দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে গবেষণাপত্রে।

বলা হয়েছে, ধূমকেতু আর গ্রহাণুর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। ধূমকেতুতে থাকে বরফ, পাথর আর ধুলোবালি। সেগুলো সূর্যের যত কাছে আসে ততই তার বরফ গলে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ধূমকেতুর লেজ তৈরি হয়। বদলে যেতে শুরু করে ধূমকেতু। কিন্তু গ্রহাণু তৈরি হয় মূলত পাথর আর ধুলোবালি দিয়ে। বরফ থাকে যৎসামান্যই। এ কারণেই কোনো গ্রহাণুর আচার, আচরণ, চেহারা, চরিত্রে রদবদল হলেও তা ততটা চোখে পড়ে না। তাদের মনে হয় নির্জীব, নিষ্প্রাণ।

মূল গবেষক অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লুনার অ্যান্ড প্ল্যানেটারি ল্যাবরেটরির অধ্যাপক কার্ল হার্জেনরোথার জানিয়েছেন, কোনো গ্রহাণুর এই ধুকধুকানি প্রথম দেখা গিয়েছিল গত বছরের জানুয়ারিতে। বেন্নুর কক্ষপথে নাসার মহাকাশযান ওসিরিস-রেক্স পৌঁছনোর পর। মনে হয়েছিল গুচ্ছ গুচ্ছ তারা! কিন্তু সেটা যে কোনো গ্রহাণুর প্রাণের স্পন্দন, তা প্রথমে বোঝা যায়নি।

কার্লের ভাষায়, আমি প্রথমে ওসিরিস-রেক্সের পাঠানো ছবি দেখে চমকে উঠেছিলাম। এত তারা রয়েছে ঐ এলাকায়? এমন তো আমার জানা ছিল না। নাসার মহাকাশযানের পাঠানো ছবিতে দেখলাম ছোট ছোট অন্তত ২০০টি বিন্দু। অবাক হয়ে গেলাম, ২০০টি তারা রয়েছে ঐখানে? পরে সব ছবি খতিয়ে দেখে বুঝতে পারি ঐখানে কোনো নক্ষত্রপুঞ্জ নেই। ঐগুলো আসলে রাশি রাশি কণা যা উগরে দিচ্ছে গ্রহাণু বেন্নু। কোনো গ্রহাণুতে যে এই ভাবে প্রাণের স্পন্দন চাক্ষুষ করা যাবে আগে ভাবিনি কখনো। এই রাশি রাশি কণার বেশির ভাগই ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশে। কিছু গ্রহাণুকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে। আর কিছু ফিরে আসে গ্রহাণুর বুকেই।

কার্ল বলেছেন, সবচেয়ে বড় আকারের যে কণাগুলোকে আমরা বেন্নু থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসতে দেখেছি, সেগুলোর ব্যাস ৬ সেন্টিমিটার (২ ইঞ্চি)। খুবই ছোট। সংখ্যাও তেমন বেশি নয়। গতিবেগও খুব কম। ফলে, এদের থেকে মহাকাশযানের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও নেই বললে চলে।

কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসপি)’-এর কর্মকর্তা জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, পাথুরে গ্রহাণুগুলো মূলত মঙ্গল আর বৃহস্পতির মাঝখানে থাকা গ্রহাণুপুঞ্জে। এগুলো আসলে কোনো গ্রহ হয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু এরা যেহেতু সৌরজগৎ তৈরির সময়কার পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়েছিল, তাই এদের সম্পর্কে জানাটা খুব জরুরি। সন্দীপের কথায়, এটি নাসার মহাকাশযানের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। —আনন্দবাজার

Pin It