ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

image-106012-1573846607

দেশে এখন ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। সরকারের উদ্যোগ, বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাস কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। প্রতিদিনই দামের ক্ষেত্রে নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে পেঁয়াজ। শুধু দেশেই নয়, এই মুহূর্তে বিশ্বে পেঁয়াজের দাম সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। সারাদেশেও একই অবস্থা। যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য! এ অবস্থায় স্বল্প আয়ের মানুষ ক্ষুব্ধ, হতাশ।

তাদের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পেঁয়াজের সংকটকে পুঁজি করে ইচ্ছামতো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সংকটকে পুঁজি করার কিছু নেই। দেশে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের সরবরাহ না থাকায় দাম বাড়ছে। সরবরাহ বাড়লেই দাম কমবে।

গতকাল রাজধানীর শান্তিনগর ও নিউমার্কেটসহ কয়েকটি খুচরাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ মানভেদে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দুই বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারীবাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ খুবই কম। চাহিদামতো পণ্য পান না। এছাড়া পেঁয়াজের মানও ভালো না।

গতকাল কারওয়ান বাজারে পাইকারীতে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ টাকা দরে। সে হিসেবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম দাঁড়ায় ২৪০ টাকা। খুচরাবাজারে এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ২৬০ টাকায়।

পেঁয়াজ নিয়ে সংকটের কথা জানালেন, আমদানিকারক হাফিজুর রহমান। গতকাল তিনি বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ নেই। তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আসছে খুবই কম। মিয়ানমারেও এখন পেঁয়াজ নেই। সেখান থেকে যে পেঁয়াজ আসছে তা বেশিরভাগই পচা। আবার দামও বেশি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন পেঁয়াজের চাহিদা ৬ হাজার টনের বেশি। সেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ টন পেঁয়াজ দিয়ে কীভাবে চাহিদা মিটবে? এজন্যই দাম বাড়ছে।

বাংলাদেশে এখন পেঁয়াজের দাম সবচেয়ে বেশি

শুধু দেশেই নয়, এই মুহূর্তে বিশ্বের মধ্যে পেঁয়াজের দাম সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। আন্তর্জাতিক অনলাইন মার্কেটপ্লেস ট্রিজর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের গড় পাইকারি মূল্য ৬৮ সেন্ট যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৮ টাকা। অথচ বাংলাদেশে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা। এছাড়া পাশের দেশ ভারতে পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬২ সেন্ট, চীনে ২৮ সেন্ট, পাকিস্তানে ৩৯ সেন্ট, ও মিশরে ১৭ সেন্ট কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

আসলেই কি সংকট পেঁয়াজের!

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলেও দাম এতটা বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। কারণ, বর্তমানে চাহিদার যে বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ দেশে রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট পেঁয়াজ উত্পাদন হয়েছে ২৩ দশমিক ৩০ লাখ টন। এরমধ্যে ৩০শতাংশ সংগ্রহকালীন ও সংরক্ষণকালীন ক্ষতি বাদ দিলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৩০ লাখ টন। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ১০ দশমিক ৯১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এছাড়া চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ২ দশমিক ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। সবমিলিয়ে মোট পেঁয়াজের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২৯ দশমিক ৩৪ লাখ টন। দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। এই হিসেবে গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ পেঁয়াজ দেশে আছে তা চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি। তাহলে এভাবে লাগামহীনভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কেন?

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একশ্রেণীর ব্যবসায়ী কারসাজি করে এখন পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে। কারণ, মিশর, মিয়ানমার, তুরস্ক ও চীন থেকে যে দামে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে তাতে দেশের বাজারে কোনোভাবেই পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।

আমাদের হাকিমপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি আমদানিতেও সুখবর পাচ্ছেন না দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী মো. মোবারক হোসেন জানান, আমরা অনেক ব্যবসায়ী এখন অলস বসে আছি। প্রতিদিনই ভারতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিন্তু বাংলাদেশে আমদানিতে কোনো সুখবর পাচ্ছি না।

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের নাগরপুরে একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার সদর বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা দরে। কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা।

বরিশালে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা

বরিশাল অফিস জানায়, সারাদেশের মতো বরিশালে আরেক দফা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গতকল শুক্রবার এখানকার পাইকারী বাজার পেঁয়াজ পট্টির দোকানগুলোতে ২৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। সরবরাহ না থাকায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিক্রেতারা। এদিকে বরিশালে বৃহস্পতিবার প্রথম তুরস্কের পেঁয়াজ এসেছে। দু-একটি দোকানে এ পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও তা ক্রয় করতে আগ্রহ নেই ক্রেতাদের। ক্রেতারা জানান, তুরস্কের পেঁয়াজ দেশি কিংবা ভারতের পেঁয়াজের থেকে আলাদা তাই তাদের আগ্রহ নেই।

বেতাগী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, দাম বাড়ায় বরগুনার বেতাগী পৌর শহরে বিক্রি হচ্ছে না পেঁয়াজ। গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রয়েছে। অনেকেই পেঁয়াজ কিনতে এসে না পেয়ে খালি ব্যাগ নিয়ে ফিরে গেছে।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, গত বৃহস্পতিবার আকস্মিকভাবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়ে কেজি ২০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। ব্যবসায়ী রিয়াজুল হক ও জুয়াহিদুর রহমান বলেন, বাজারে পেঁয়াজের যে অবস্থা তাতে আর বিক্রি করা সম্ভব নয়।

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা জানান, লক্ষ্মীপুরের রায়পরের খুচরা বাজারে গত বৃহস্পতি থেকে শুক্রবার পর্যন্ত এ দুই দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০০ টাকা। শুক্রবার সকাল থেকে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়।

কালাই (জয়পুরহাট) সংবাদদাতা জানান, জয়পুরহাটের কালাইয়ে পেঁয়াজের মূল্যে ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ।

পাঁচগ্রাম-মঙ্গলপুকুর আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা গৃহিণী রুপিয়া বেগম ও জুলেখা বেগম বলেন, দুই সপ্তাহ আগে পুনটহাট থেকে হাফ কেজি পেঁয়াজ ৯০ টাকা দিয়ে কিনে এনেছিলাম। এক সপ্তাহ আগে সেই পেঁয়াজ শেষ হয়েছে। সেই থেকেই পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না করছি।

Pin It