চির নূতনেরে দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ

Untitled-2-5cd1de303f37e

‘উদয়দিগন্তে ওই শুভ্র শঙ্খ বাজে/ মোর চিত্তমাঝে/ চির-নূতনেরে দিল ডাক/ পঁচিশে বৈশাখ’- নিজের লেখা কবিতায় নিজের আবির্ভাবক্ষকে এভাবে অনুভব করেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাহিত্যের সব ক্ষেত্রে আমৃত্যু কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ধাবমান রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছেন হাজার বছরের পথিকৃৎ বাঙালি। তার কাব্যছন্দ, সুরের ডালা আর সরল লেখনীতে বাঙালি খুঁজে পেয়েছে তার সকল আবেগ। তার গান ও কবিতা প্রেরণা জুগিয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে। তাই তো বন্দিদশা থেকে মুক্ত স্বদেশে ফিরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম ভাষণেই অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘কবিগুরু, তুমি এসে দেখে যাও, তোমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে…।’

আজ বুধবার, পঁচিশে বৈশাখ। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জয়ন্তী। কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরবাড়িতে জন্মেছিলেন তিনি। কিন্তু জমিদার পরিবারের ঐতিহ্যকে অতিক্রম করে তিনি তার জীবনব্যাপ্ত কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পৌঁছেন শান্তিনিকেতনে। মা সারদাসুন্দরী দেবী এবং বাবা বিখ্যাত জমিদার ও ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোল আলো করে পৃথিবীতে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে রবীন্দ্রনাথ পৌঁছে দিয়েছেন বিকাশের চূড়ান্ত সোপানে। ‘গীতাঞ্জলি’ রচনা করে ১৯১৩ সালে তিনি নিয়ে আসেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। উর্বর করেছেন তিনি চিত্রকলাকে আধুনিকতার ধারণা দিয়ে। নোবেল পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তিনি এ দেশে শাহজাদপুরের দরিদ্র কৃষকদের ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন কৃষি ব্যাংক। গড়ে তোলেন শান্তিনিকেতন। রাজপথে নেমে আসেন তিনি বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ছুড়ে ফেলেন ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া ‘নাইটহুড’ উপাধি। এভাবে বারবার সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্মতার ঘোষণা দিয়েছেন সমাজসচেতন রবীন্দ্রনাথ। তিনি একমাত্র গীতিকবি, যার রচিত ভিন্ন ভিন্ন সঙ্গীত ভিন্ন দুটি দেশে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গীত হয়। তার রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ ও ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ গান দুটি যথাক্রমে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত।

রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি :রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে এবারের জাতীয় পর্যায়ের মূল অনুষ্ঠান হচ্ছে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে। এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য ‘মানবিক বিশ্ব বিনির্মাণে রবীন্দ্রনাথ’। এ বিষয়ে স্মারক বক্তৃতা দেবেন প্রাবন্ধিক মফিদুল হক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং রবীন্দ্রগবেষক ড. সন্‌জীদা খাতুন।

এর বাইরে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন করা হবে।

এর বাইরে বাংলা একাডেমি প্রদান করবে রবীন্দ্রপদক।

Pin It