জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস আজ, গৌরবময় অধ্যায়

Untitled-4-5ced87ea21594-5ced8f72cc74c

আজ ২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় এ বছর দিবসটি উদযাপন করা হবে। নানা আয়োজনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

রাষ্ট্রপতি বাণীতে বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। পেশাদারিত্বের পাশাপাশি অর্পিত দায়িত্বের প্রতি একনিষ্ঠতা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের এ সাফল্য অর্জনে ভূমিকা রেখেছে। সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমাদের শান্তিরক্ষী সদস্যরা আগামী দিনগুলোতেও বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার এ ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবেন বলে প্রত্যাশা করি।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাংলাদেশ বর্তমানে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ। শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশের সদস্যরা বিপদসংকুল এবং সংঘাতপূর্ণ এলাকায় নিয়োজিত থাকেন। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের পেশাদারিত্ব, আন্তরিক সেবা, কঠোর পরিশ্রম, আত্মত্যাগ, নিঃস্বার্থ মনোভাব ও সাহসিকতা আজ সারাবিশ্বে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী কার্যক্রমের প্রতি আমার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তার বাণীতে বলেন, বিশ্বজুড়ে আজ কর্মরত এক লাখের বেশি বেসামরিক লোক, পুলিশ ও সামরিক শান্তিরক্ষীর প্রতি এবং এসব সাহসী ও নিবেদিতপ্রাণ নারী-পুরুষ যেসব দেশ থেকে এসেছেন সেসব দেশের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই।

জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। ওই বছর ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক দলে ১৫ জন সামরিক পর্যবেক্ষক পাঠায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেই থেকে শুরু শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে লাল-সবুজের বাংলাদেশের যাত্রা। এর পর যত দিন পার হয়েছে, ততই আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় দেশের সাফল্যে নতুন নতুন পালক যুক্ত হয়েছে, যা বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুন এক মর্যাদায় নিয়ে গেছে। নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী শান্তিরক্ষী মিশনে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। আর পুলিশ নামিবিয়া মিশনের মধ্য দিয়ে ১৯৮৯ সালে শান্তিরক্ষী মিশনে যাত্রা শুরু করে। এ পর্যন্ত ৪০টি দেশে ৫৪টি মিশনে এক লাখ ৬৩ হাজার ৮৮৭ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে বিশ্বের ১০টি দেশে ছয় হাজার ৫৮২ জন সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন। এরই মধ্যে এক হাজার ৬০৯ জন নারী শান্তিরক্ষী সাফল্যের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ২১৪ জন নারী শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্মরত রয়েছেন। সংঘাতময় পরিস্থিতি ও জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ১৪৬ জন শান্তিরক্ষী নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

কর্মসূচি :শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আজ বুধবার সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয়দের ও আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

এ ছাড়া সকালে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে ‘কমেমরেশন’ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন।

শান্তি সমাবেশ :আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোয়ালিশন অব লোকাল এনজিও’স (সিএলএনবি) নামে একটি সংগঠন এ সমাবেশের আয়োজন করে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশের উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম বীরপ্রতীক।

সিএলএনবির সভাপতি হারুনুর রশীদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য নার্গিস জাহান বানু, মানবাধিকার নেত্রী নুর উন নাহার মেরী, আইনজীবী আফজাল হোসেন, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, শ্রমিক নেতা বজলুর রহমান, ফয়েজ হোসেনসহ মানবাধিকারকর্মী, পেশাজীবী ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্ব এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষ কূটনীতির কারণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ সদস্যদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বিশ্বে স্বীকৃত। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশিদের দায়িত্বশীলতা, সততা ও নিষ্ঠার কারণে মিশন এলাকায় বড় বাণিজ্যের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। বক্তারা শান্তিরক্ষা মিশনে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের আত্মত্যাগ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং তাদের নামে রাজধানীর সড়ক ও উড়াল সেতুর নামকরণের আহ্বান জানান।

Pin It