ঝুঁকি নিয়েই পশুর হাটে হাজার হাজার ক্রেতা

005833Cow_kalerkantho_pic

ঈদুল আজহার আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি আছে। তাই আজ পাবনার সর্ববৃহৎ ভাঙ্গুড়া উপজেলার শরৎনগর সাপ্তাহিক পশুর হাটের শেষ দিনে কোরবানির পশু কিনতে হাজার হাজার ক্রেতা উপচেপড়া ভিড় করে।

সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে আজকের হাটে ৩ সহস্রাধিক পশু কেনাবেচা হয়। যেটা চলতি বছরের একদিনে সর্বোচ্চ পশু কেনাবেচার রেকর্ড। তবে হাটে আগত ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বালাই ছিল না। এক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন অথবা থানা প্রশাসনের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি।

শনিবার শরৎনগর পশুহাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাবনা ও নাটোর থেকে গরু ব্যবসায়ীরা সহস্রাধিক গরু পশুহাটে বিক্রি করতে এনেছেন। এছাড়া ভাঙ্গুড়া এবং পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর ও চাটমোহর উপজেলা থেকে খামারিরা নিজেদের লালন-পালন করা গরু ও ছাগল নিয়ে হাটে বিক্রি করতে এসেছেন।

বড়াল ব্রিজ রেল স্টেশনের পাশে উন্মুক্ত মাঠে সারিবদ্ধ করে গরু রাখা হয়েছে। একেকজন ব্যবসায়ী ১০ থেকে ২০টি করে গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। আর খামারিরা মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে উন্মুক্তভাবে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে একটি বা দুইটি গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে ক্রেতারা খামারিদের গরু কেনার প্রতি ঝুঁকছেন বেশি। এবছর হাটে কোনো ভারতীয় গরু দেখা না গেলেও দুই-একটি নেপালি জাতের গরু দেখা গেছে।

এদিকে হাটে আগত কিছুসংখ্যক সচেতন ক্রেতা-বিক্রেতা মাস্ক ব্যবহার করলেও অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না। ক্রেতাদের ভিড়ে সামাজিক দূরত্বের ছিল না কোনো বালাই। হাটে আগতরা একে অপরের শরীর ঘেঁষে কেনাবেচা করছিল। এসময় হাট কর্তৃপক্ষ ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মাস্ক ব্যবহার করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মাইকে বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতারা তা কর্ণপাত করছিলেন না।

হাটে থানা পুলিশের সদস্যরা ও প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও তারা মাঠের একপাশে বসেছিলেন।

ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এবছর কোরবানির ঈদের একমাস আগে থেকেই জমজমাট হাট শুরু হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ বেচাকেনা হয়েছে আজকের হাটে। ভাঙ্গুড়াসহ আশেপাশের উপজেলা থেকে প্রচুর ক্রেতা কোরবানির জন্য পশু কিনতে এসেছেন। আজকের হাটে পশুর দাম স্বাভাবিক ছিল। তাই হাটে আগত প্রায় সকল ক্রেতাই পশু কিনে বাড়ি ফিরেছে। তবে এর আগে দুই হাটে পশুর দাম আজকের চেয়ে অনেকটাই কম ছিল।

হাটে গরু কিনতে আসা পার্শ্ববর্তী উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের বাবুল আক্তার বলেন, ঈদের আগে কয়েকটি হাটে লোকজনের প্রচণ্ড ভিড় হয়। তবে শেষ হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি হয়। এদিন কেনাবেচাও বেশি হয়। শেষ হাট বলে কেউই কোরবানির পশু না কিনে ফিরতে চায় না।

গরু ব্যবসায়ী জাফর আহমেদ বলেন, পাবনা জেলার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ সাপ্তাহিক পশুহাট শরৎনগর হাট। প্রায় একযুগ হলো প্রত্যেক সাপ্তাহে এই হাটে গরু বিক্রি করতে আসি। কিন্তু এবছর করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে গত তিন মাস হাটে গরু বিক্রি করতে পারিনি। এতে আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। ঈদ উপলক্ষে বেশি পরিমাণে পশু বিক্রি করে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।

হাট কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি অর্থবছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা দিয়ে শরৎনগর পশুহাট ইজারা নেওয়া হয়। কিন্তু এবছর করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘদিন হাট বন্ধ থাকায় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা লোকসান হয় তাদের। এখন কোরবানির হাট উপলক্ষে পশু বেশি কেনাবেচা হলে কিছুটা ক্ষতি উসুল হয়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সহ সার্বিক পরিস্থিতি দেখভালের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের লোকজন ও থানা প্রশাসনের সদস্যরা নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি অনেকেই না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক লোকের সমাগম। কাউকে ব্যক্তিগতভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করা সম্ভব নয়। তাই মাইকিং করে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। এর পরেও অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে নেই।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য। কিন্তু অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস রপ্ত করতে পারেনি।

Pin It