ডলার আসছে, সংকট পুরোপুরি কেটে যাবে: অর্থমন্ত্রী

1711296116.mahmud

দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসতে শুরু করেছে। আগামীতে আসবে-যাবে, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

তিনি বলেন, মানুষের আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন ছিল, অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমরা সেই কাজটি করেছি। যাদের টাকা আছে, তারা নিয়ে আসবে, আবার নিয়ে চলে যাবে। এই জিনিসটাই করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা ক্যাম্পেইন শুরু করেছি, ঈদের পর আরও বেশি ডলার আসা শুরু করবে। আইনটা মানুষের পছন্দ হয়েছে। এখন ডলার আসবে।

রোববার (২৪ মার্চ) গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস আয়োজিত ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ বলে যারা দাবি করেন, আসলে প্রতিপক্ষ নই। যারা কথা বলেন, কে তাদের নেতা বোঝা মুশকিল। যারা কথাবার্তা বলেন, তাদের কথাবার্তা শুনে যা মনে হয়, তাদের নেতাকে আমরা চিনি। তিনি বসে আছেন লন্ডনে। লন্ডন থেকে তিনি কী ধরনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বোঝা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমরা আশা করছি যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন দৃশ্যমান হবেন, অন্ধকার থেকে আলোর মধ্যে চলে আসুন। অন্ধকার থেকে যেসব কাজ করছেন, তা মোটেই কাম্য নয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, তারা কয়েকদিন আগে বলছিলেন, দেশে সব শেষ হয়ে গেছে, বাংলাদেশ শ্রীলংকা হয়ে গেছে! দেশ শ্রীলংকা কী হলো? হয়নি। নতুন যে ব্যাংকটি হলো, একবার তারা বাংলাদেশে ঘুরে গেছে। তারা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে তৈরি। তারা ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা, ব্যাংক ও বন্ধু দেশ আসছে। আমি দুঃখিত যে, আমরা শ্রীলংকা হলাম না। আমরা ওপথে যাইনি।

বিশেষ অথিতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে স্কুল কাছে হওয়ার বিষয়টি অত্যাবশ্যক। ১৫ বছরে দায়িত্বকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই কাজটি করেছেন। শিক্ষার হারে বড় ধরনের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এ সময়ে শতভাগ শিশুর স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে, ৭০ ভাগ শিশুর মাধ্যমিকে যাওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। একই সময়ে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার উপরের দিকে মান নষ্ট হয়নি। যেহেতু নিচের দিকে শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে, সে জন্য মনে হতে পারে শিক্ষার মানটা ভয়াবহ হারে কমে গেছে।

ভিয়েতনামের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সেখানে শিল্পের আউটপুটের কম্পোজিশনের আউটপুট কী? তাদের শিক্ষায় প্রযুক্তি নির্ভরতা বেশি। দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগ বেশি হওয়ার কারণে বিদেশের সাথে তাদের সম্পর্ক বেশি। আমাদের এখানে নেই।

আগামীতে সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে সময়োপযোগী করে ইশতেহার বাস্তবায়ন করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইশতেহারে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বশাসনের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে। ব্যাংকের বিষয়ে সমস্ত দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেটা মনে মনে করবে, সেটা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।

ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, একটি কথা বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণের বিপরীতে যে সঞ্চিত রাখার দরকার সেটা বাধ্যতামূলক করা হবে। যাতে অন্যথা না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। এর অর্থ হলো, ব্যাংকের নিজস্ব একটা স্ট্রিগার মেকানিজম থাকার দরকার। সেটা হলো ব্যাংককে যদি খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি রাখতে হয়, তাহলে তার ঋণ বিতরণের ক্ষমতা কমে যাবে। এটা একটি স্ট্রিগার।

আর একটি বিষয় হলো, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ঋণ। ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝি থেকে কথাটি বলছি, কিন্তু এটা স্পষ্ট নয়। একটি হলো ব্যবসায়ীর গাফিলতির কারণে বা ক্ষমতা আছে কিন্তু দিচ্ছে না। আরেকটি হলো পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা বৈশ্বিক প্রতিকূল অবস্থার কারণে ঋণের টাকা দেওয়ার ইচ্ছা থাকার পরও সে দিতে পারছে না। এই ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতকে ইচ্ছাকৃত করা উচিত নয়। সেই কাজটিই হবে যা ইচ্ছাকৃত। আর অন্যটা হলো পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা বা বৈশ্বিক পরিস্থির কারণ সৃষ্ট, বলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা।

মূল প্রবন্ধে কাজী ইকবাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইস্তেহারে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে। সেগুলো হলো,  বেসরকারি খাতকে প্রধান্য; ক্ষুদ্র-কুটির-এসএমই ও বৃহৎ শিল্পের মাধ্যমে শিল্প উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ বাজার নির্ভর শিল্পায়ন। ইশতেহারে উল্লেখিত বৈদেশিক বিনিয়োগ ও দেশের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রযুক্তি স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু দেশে যে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে বা বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে সেখানে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই।

বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্ঠা ড. তৌফিক ই-এলাহী চৌধুরী, শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, নির্বাচনী ইশতেহার ড্রাফ্ট কমিটির অন্যতম সদস্য সাব্বির আহমেদ প্রমুখ।

Pin It