ঢাকাই শোবিজের শোকের বছর

ttttt-5df8b3e2c2215

পুরো বছরই ছিল হারানোর বেদনা। ২০১৯ সালে চলচ্চিত্র, সঙ্গীতসহ শোবিজের নানা অঙ্গনের বহু গুণী-প্রিয় মানুষেরা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে গেলেন।  যারা আজীবন থাকবেন আমাদের হৃদয়ে অমর হয়ে। জেনে নেই, ২০১৯ এ যাদের হারিয়েছি আমরা। 

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল

বাংলা গানের প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক, গীতিকার, সুরকার ও বীরমুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে হারাতে হয় বছরের শুরুতেই।  চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ৬৩ বছর বয়সে রাজধানীর বাড্ডায় নিজ বাসায়  মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। ১৯৭০ দশকের শেষ লগ্ন থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পসহ সংগীতশিল্পে সক্রিয় ছিলেন এ তারকা।

শাহনাজ রহমতুল্লাহ

বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন তিনি। দেশাত্মবোধক গানের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে অনন্য উচ্চতায পৌছে গিয়েছিলেন।তার উল্লেখযোগ্য গানসমূহের মধ্যে রয়েছে এক নদী রক্ত পেরিয়ে, একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে, একতারা তুই দেশের কথা বলরে‌ এবার বল্, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, আমায় যদি প্রশ্ন করে, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়। প্রথমোক্ত তিনটি গান বিবিসির একটি জরিপে সর্বকালের সেরা বিশটি বাংলা গানের তালিকায় স্থান পায়। এ বছরের ২৩ মার্চ ৬৭ বছর বয়সে চির বিদায় নিয়ে চলে যান তিনি।

টেলি সামাদ

ঢাকাই চলচ্চিত্রের শক্তিশালী ও জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ চলে গেলেন এ বছর। ৭ এপ্রিল  রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।  তিনি দুই স্ত্রী রেখা সামাদ, নিগার সুলতানা, চার সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে সোহেলা সামাদ কাকলী, সায়মা সামাদ ও দুই ছেলে সুমন এবং দিগন্ত সামাদকে রেখে গেছেন। তিনি হৃদরোগ, ব্লাড ক্যানসার ও বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। চার দশকে ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন টেলি সামাদ।

হাসিবুল ইসলাম মিজান 

২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল ৬২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন হাসিবুল ইসলাম মিজান। ঢাকাই চলচ্চিত্র ইন্ডাষ্ট্রির পরিচিত একজন নির্মাতা ছিলেন তিনি। তার পরিচালিত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রেমের কসম, আমার স্বপ্ন তুমি,জন্ম,কপাল ও তুমি আছো হৃদয়ে।

সুবীর নন্দী

৭ মে বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে চারটার দিকে  মারা যান বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী ।সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের এমআইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ৬৬ বছর বয়সী সুবীর নন্দী দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। তার হার্টে বাইপাস অপারেশন করা হয়েছিল। কিডনিতেও সমস্যা ছিল।বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন সুবীর নন্দী। ১৯৮১ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে।

সুবীর নন্দীর কণ্ঠে ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘আশা ছিল মনে মনে’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘বন্ধু তোর বরাত নিয়া’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘কতো যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘পাহাড়ের কান্না দেখে’, ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’, ‘একটা ছিল সোনার কইন্যা’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’ শ্রোতাদের হৃদয়ে অমর হয়ে আছে।

কৌতুক অভিনেতা আনিস

টেলি সামাদের পর পরই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান চলচ্চিত্রাভিনেতা আনিসুর রহমান আনিস (৭৮)। ২৯ এপ্রিল রাজধানীর টিকাটুলীর অভয় দাস লেনের নিজ বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেন।  তিনি দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

অভিনেতা সালেহ আহমেদ

অভিনেতা সালেহ আহমেদ আর ২৪ এপ্রিল দুপুর ২টা ৩৩ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন এই অভিনেতা। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে চাকরির পাশাপাশি অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। ধারাবাহিক ‘অয়োময়’ নাটক এবং ‘আগুনের পরশমণি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জগতে তার পদচারণা শুরু। এই অভিনেতা পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক।

মমতাজউদদীন আহমদ

বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক মমতাজ উদ্দীন আহমদ। তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত যিনি এক অঙ্কের নাটক লেখায় বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন। চলতি বছরের ২ জুন না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।

কালা আজিজ

অভিনেতা কালা আজিজ ২৩ নভেম্বর  রাতে দশটায় রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় তার মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। অসংখ্য বাংলা ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। বিশেষ করে আম্মাজান ছবিতে অভিনয় করে তমুল পরিচিতি পান। কালা আজিজ দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও কিডনি সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে দুই ছেলে রেখে গেছেন।

 অভিনেতা বাবর 

চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক বাবর মারা যান ৬ আগস্ট।। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৭ বছর। খলনায়ক চরিত্রেই অভিনয করতেন তিনি। তবে চলচ্চিত্রে বাবর প্রথম অভিনয় করেন নায়ক চরিত্রে। বাবরের অভিষেক ঘটেছিল আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘বাংলার মুখ’ চলচ্চিত্রে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করে। খলনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু হয় নায়করাজ রাজ্জাক প্রযোজিত ও জহিরুল হক পরিচালিত ‘রংবাজ’ চলচ্চিত্র দিয়ে। এরপর তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অবশ্য মাঝে প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরিচালনা করেছেন ‘দয়াবান’, ‘দাগী’, ‘দাদাভাই’সহ বেশ কিছু ব্যবসাসফল ছবি।

চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিলে ৭০ বছর। চলচ্চিত্রে চিত্রগ্রহণের জন্য ৯বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। মাহফুজুর রহমান খান ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক আবদুল লতিফ বাচ্চুর শিষ্য। তাঁর অধীনে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে ১৯৭০ সালে ‘দর্প চূর্ণ’ ও ১৯৭১ সালে ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন।

হুমায়ূন সাধু

অভিনেতা ও নির্মাতা হুমায়ূন সাধুকেও হারাতে হয়েছে এ বছর। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ অক্টোবর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷

সঙ্গীতশিল্পী পৃথ্বীরাজ

২০১৯ সালে বাংলাদেশের শোবিজ জগতে সর্বশেষ মৃত্যুবরণ করেন তরুণ গায়ক, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক পৃথ্বীরাজ। ১৫ ডিসেম্বর নিজের স্টুডিও জিলাপিতে কাজ করার সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

Pin It