ঢাকার লো ভোল্টেজ কমাতে ডেসকোর প্রকল্প

রাজধানী ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন, গাজীপুর ও পূর্বাচলের লো ভোল্টেজ সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিতরণের সক্ষমতা বাড়ানো এবং সিস্টেম লস কমাতে ডেসকো ২ হাজার ২৭২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপনের কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য এ কে এম ফজলুল হক।

‘ডেসকো এলাকায় বৈদ্যুতিক অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) এলাকার সিস্টেম লস শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ কমবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ফজলুল হক বলেন, যত আধুনিক প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ বিতরণ করা যাবে সক্ষমতা ততই বাড়বে। আবার সিস্টেম লসও কমে আসবে।

তিনি জানান, প্রকল্পটির মোট ব্যয়ের ৫৪ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। আর বাস্তবায়নকারী সংস্থা ডেসকোর নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৯৪ কোটি টাকা এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা যোগান দেওয়া হবে।

ডেসকোকে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া অর্থের মধ্যে ৪০ শতাংশ ঋণ হিসেবে এবং ৬০ শতাংশ মূলধন হিসেবে দেওয়া হবে বলে যোগ করেন তিনি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে সার্বিক বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থায় গড় সিস্টেম লসের হার ছিল ১১ দশমিক ১১ শতাংশ বিদ্যুৎ। আর ডেসকো এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণে এ হার ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে ডেসকো এলাকার সিস্টেম লস শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ কমবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, বিমানবন্দর, বসুন্ধরা, মিরপুর সিরামিকস, রূপনগর আবাসিক এলাকা, বারিধারা, উত্তরা রূপায়ন সিটি, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী ও পূর্বাচল এলাকার বিদ্যুৎ বিতরণ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করা হবে।

আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ করতে চায় ডেসকো।

প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার কারণ হিসেবে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) বলা হয়েছে, বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী ও পূর্বাচলসহ প্রায় ৪০০ কিলোমিটার এলাকা ডেসকোর অন্তর্ভূক্ত। এসব এলাকা অত্যন্ত জনবহুল ও শিল্পঘন হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এতে অধিকাংশ বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র ও বিতরণ লাইনের ওপর চাপ ব্যাপকভাবে বাড়ছে।

রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের দেয়াল ঘেঁষে থাকা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে আছেন ভবনগুলোর বাসিন্দারা। ছবি: মাহমুদ জামান অভিরাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের দেয়াল ঘেঁষে থাকা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে আছেন ভবনগুলোর বাসিন্দারা। ছবি: মাহমুদ জামান অভিএরফলে গ্রাহক পর্যায়ে লো ভোল্টেজের সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং সিস্টেম লসের মাত্রাও দিন দিন বাড়ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এবং বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডেসকো এলাকার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য করা যাবে এবং সিস্টেম লস কমানো সম্ভব হবে। নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

প্রকল্পটির মাধ্যমে ১৩২/৩৩/১১ কেভির চারটি জিআইএস গ্রিড উপকেন্দ্র এবং ৩৩/১১ কেভির চারটি বিতরণ উপকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

একই সঙ্গে ৩০ কিলোমিটার ১৩২ কেভির ডাবল সার্কিট এবং ১৫০ ‘সার্কিট কিলোমিটার’ ভূ-গভর্স্থ্য সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে।

এছাড়া প্রকল্পটির মাধ্যমে ১৫০ কিলোমিটার ওভারহেড বৈদ্যুতিক বিতরণ নেটওয়ার্ক নির্মাণ, ১০০টি ১১কেভি ভোল্টেজ আরএমইউসহ বিভিন্ন ধরনের বিতরণ ট্রান্সফার স্থাপন করা হবে।

Pin It