পুলিশের যে তদন্তের ভিত্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যাকাণ্ডের রায় হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার ছেলে।
সোমবার রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এই অধ্যাপকের ছেলে মৌমিন শাহরিদ বলেছেন, অসৌজন্যমূলক আচরণের মতো ‘ঠুনকো’ কারণে তার বাবাকে হত্যা করা হয়নি, এর পেছনে অন্য কিছু রয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লেখক-ব্লগার-শিক্ষকদের উপর জঙ্গিদের চোরাগোপ্তা হামলার মধ্যে ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর অধ্যাপক শফিউলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
প্রথমে পুলিশের তদন্তও জঙ্গিদের দিকেই এগোচ্ছিল। পরে র্যাব ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর দাবি করে, বিভাগের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
পরে পুলিশের তদন্তও সেদিকে যায়। তার ভিত্তিতে দেওয়া রায়ে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যাদের একজন ওই প্রশাসনিক কর্মকর্তার স্বামী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি।
রায়ের পর আদালতের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার নাসরিন আখতার রেশমার সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণ করেছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফিউল।
“বিষয়টি রেশমা তার স্বামী আবদুস সামাদ পিন্টুকে বলেন। পিন্টু অধ্যাপক শফিউলকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন। এর কয়েক দিন পর শফিউলকে তার বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রেশমার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে পিন্টু এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন।”
রেশমার স্বামী আবদুস সামাদ পিন্টুর সঙ্গে দণ্ডিত অন্য দুজন হলেন রাজশাহীর কাটাখালি পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম মানিক ও যুবদলকর্মী সবুজ শেখ।
রায়ের প্রতিক্রিয়া মৌমিন শাহরিদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে এত ঠুনকো কারণে হত্যা করা হতে পারে না। আমার মনে হয়েছে এতটা অগভীর না এ খুনের কারণ। এতটা স্থূল না।
“তদন্তে খুনের সঠিক উদ্দেশ্য বা কারণ উঠে আসেনি। যৌক্তিকভাবে উঠে আসেনি। মামলাটি আরও গভীরভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন।”
শফিউল হত্যাকাণ্ডের পর আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামে খোলা ফেইসবুক একাউন্টে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকারের বার্তা এসেছিল। আগে-পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন শিক্ষক হত্যাকাণ্ডেও জঙ্গিদের সম্পৃক্ততার কথা উঠে এসেছিল।
তবে ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর শফিউল হত্যামামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউস সাদিক বলেছিলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেশমার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে অধ্যাপক শফিউলকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর ফেসবুকে দেওয়া দায় স্বীকার করে আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশের স্ট্যাটাসের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
শাহরিদ বলেন, “সেদিক থেকে আমি তদন্তকে প্রশ্ন করব, রায়কে নয়। রায় নিয়ে আমার কোনো প্রত্যাশা ছিল না। আদালত তদন্তের মাধ্যমে যতটুকু সঠিক মনে করেছে, তার ভিত্তিতে রায় দিয়েছে। রায় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারি না।”
পুলিশ এ মামলায় রেশমাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিলেও বাকি আটজনকে আদালত বেকসুর খালাস দিয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম মুর্তুজা বলেন, কোনো সাক্ষী হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আদালতে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা এ হত্যার পরিকল্পনা করেছে বা খুন করেছে সে বিষয়েও কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ছিল না।
“আদালত শুধু পুলিশের তদন্ত ও রেশমার ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে রায় দিয়েছে।”
যে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, তাদের বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানান এই আইনজীবী।