দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

image-185100-1600799637

দীর্ঘস্থায়ী করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ! আসন্ন শীতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, দেশে বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের শিথিলতা চলে এসেছে। গ্রামের মানুষ মাস্ক পরেই না। শহরের বেশির ভাগ মানুষ সভা, সেমিনার, যানবাহনে মাস্ক পরছেন না। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনার দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ! এদিকে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার ১৯৯ দিনের মাথায় গতকাল মঙ্গলবার সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

শীতকালে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা এলেও লকডাউনে না গিয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার সব পন্থা রেখেই কর্মপরিকল্পনা করতে যাচ্ছে সরকার।

জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় নিজ নিজ মন্ত্রণালয়কে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এসব কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে এ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় সারা দেশে লকডাউনের কথা ভাবছে না সরকার। কারণ লকডাউনে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থনীতি সচল রেখেই করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, পরবর্তী অবস্থা পর্যালোচনা করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সভায় বলা হয়েছে, অক্টোবর-নভেম্বরে শীতের প্রকোপ বাড়লে কোভিডের সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে। কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা রয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তাই মন্ত্রণালয়গুলো নিজ নিজ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে এবং তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানাবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পরবর্তী সময়ে সেগুলোকে সমন্বয় করে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করবে।

বিশেষজ্ঞরা যা বলেন

বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় দফায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ভারতে সংক্রমণের মাত্রাও অনেক বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনা সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে আবার না-ও পারে। এটা কেউ নিশ্চিত করতে বলতে পারে না। করোনা নিয়ে এ পর্যন্ত যা বলা হয়েছে সবই অনুমানভিত্তিক। শীতের দেশেও হয়েছে, আবার গরমের দেশেও হয়েছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। এক্ষেত্রে যা যা করার তাই করতে হবে। এখন কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না। গ্রামে তো আগেই নেই, শহরের মানুষও মাস্ক পরছে না। এ ধরনের প্রবণতা বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। যে পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানানো যায় সেই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন। দেশে পরীক্ষা কম করায় আক্রান্তের হার কম। এতে আত্মতৃপ্তিতে থাকার সুযোগ নেই। সামনে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশ সংক্রমণের ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ বলেন, তাপমাত্রার ওপর সংক্রমণের কমবেশির সম্পর্ক নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানা, না মানার সঙ্গে করোনার সম্পর্ক। সবার মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে।

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান- নিপসমের দুই জন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, করোনা সংক্রমণ কখন বাড়ে সেটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত না। শীত প্রধান দেশেও প্রকোপ আছে। আবার গরমের দেশেও প্রকোপ আছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে সবাইকে।

শনাক্ত সাড়ে ৩ লাখ, মৃত্যু ৫ হাজার ছাড়িয়েছে

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১ হাজার ৫৫৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৭৮ জন। এছাড়া একই সময়ে আরো ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আরো ২ হাজার ৭৩ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ জন হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য জানানো হয়। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ, আর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে।

Pin It