দুই বাংলার নুসরাত

bbbbb-5d0b6d7f85528

সৌন্দর্যের সঙ্গে মেধা ও মননের সমন্বয়ে তিনি ক্রমে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন। শুরুটা হয়েছিল এফএম চ্যানেলের রেডিও জকি হিসেবে। তারপর উপস্থাপনা, এপার-ওপার বাংলার চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে জয় করেছেন ভক্তদের মন। বলছিলাম অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার কথা। যিনি প্রমাণ করেছেন, মেধা থাকলে মানচিত্রের বিভাজন কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। তাই তো পদ্মাপাড়ের মেয়েটি গঙ্গাপাড়েও আজ সমান জনপ্রিয়। অবশ্যই কাজের প্রতি নিষ্ঠা এ অভিনেত্রীকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তাই কলকাতার শীর্ষ নায়কদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করছেন। অভিনয় প্রতিভা কিংবা ব্যবসার নিরিখে পরিচালক থেকে শুরু করে প্রযোজকরাও তাই তাকে নিয়ে বাজি ধরতে সাহস পান। আগামীকাল কলকাতায় মুক্তি পাচ্ছে তার অভিনীত নতুন ছবি ‘বিবাহ অভিযান’। ছবিতে ওপার বাংলার অঙ্কুশের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন ফারিয়া। তাই কথোপকথনের শুরুতে এ অভিনেত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘বিবাহ অভিযান’ ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? তিনি সহাস্য ভঙ্গিতে বলেন, “ছবিতে কাজ করে বেশ তৃপ্ত।

এটি অনেকটা রোমান্টিক-কমেডি ধাঁচের ছবি। কিন্তু ‘বিবাহ অভিযান’ ছবিতে দেখা যাবে নতুন ধাঁচের কমেডি। ছবিটি যেহেতু কিছুটা কমেডি ঘরানার, তাই সব সময় শুটিং সেটে আমরা হৈ-হুল্লোড় করে কাজ করতাম। সত্যি বলতে, এই প্রথম কোনো শুটিং সেটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতাম। প্রতিনিয়ত মনে হতো, কখন শুটিং শুরু হবে। তবে কাজ করতে গিয়ে কিছুটা চ্যালেঞ্জও নিতে হয়েছে। কারণ, কলকাতার পরিচালক বিরসা দাসগুপ্তের পরিচালনায় ছবিতে অঙ্কুশসহ রুদ্রনীল ঘোষ, সায়নী ঘোষ, প্রিয়াঙ্কা সবাই কলকাতার। তাই এখানকার কথা, উচ্চারণ, চলন-বলন রপ্ত করতে হয়েছে।” তবে ফারিয়া যে ওপার বাংলার মানুষের চলন-বলন বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছেন, তা ট্রেলার দেখলেই বোঝা যায়। যেখানে দেখা গেছে, দুই বন্ধু অঙ্কুশ ও রুদ্রনীল ঘোষ তাদের বিবাহিত জীবন নিয়ে হতাশায় ভোগে। তারা পরিকল্পনা করে, তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে আলাদা হওয়ার। কিন্তু নুসরাতকে এ সময় প্রতিবাদী নারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। এরই মধ্যে ট্রেলারে নুসরাত ফারিয়ার উপস্থিতি তার ভক্তদের মধ্যে উন্মাদনা তৈরি করেছে।

যদিও শুরুতে এ ছবিতে অভিনয়ের কথা ছিল কলকাতার অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীর। পরবর্তী সময়ে ব্যাটে-বলে না মেলায় ছবিটিতে মিমির অভিনয় করা হয়নি। মূলত তার পরিবর্তে নুসরাত ফারিয়া চুক্তিবদ্ধ হন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দর্শক, বিশেষ করে ভারতীয় দর্শক নুসরাতের কাছ থেকে বেশি কিছু প্রত্যাশা করবেন এবং চুলচেরা বিশ্নেষণ করবেন- এমনটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে অবশ্য নুসরাত ফারিয়া বলেন, “সেরাটুকু ঢেলে দিয়ে নিজেকে অন্য রকম একটি চরিত্রে ফুটিয়ে তুলতে যা যা করণীয়, তার সবই চেষ্টা করেছি। এ ছাড়া একটু খেয়াল করলে বোঝা যায়, আমার অভিনীত বেশির ভাগ ছবির প্রেক্ষাপট অনেকটাই স্বতন্ত্র। এর আগে আমি অ্যাকশন লুকে, কখনও বা ‘পাশের বাড়ির মেয়ে’ এমন চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু এটাতে তেমন কিছু না। আমার চরিত্রটা কেমন, সেটা নিয়ে কিছু বলতে পারব না এখন। তবে এটা বলতে পারি, ছবিটি নতুন সময়ের। তাই এর স্বাদ, ঢং ও ধরনও হবে নতুন। ছবিটি নিয়ে পরিচালকের চিন্তা-ভাবনাও অন্য রকম।”

দীর্ঘদিন পর এ ছবির মাধ্যমে পুরনো বন্ধু অঙ্কুশ হাজরার সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়েছেন ফারিয়া। সর্বশেষ ‘আশিকী’ ছবিতে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাদের। তাই স্বাভাবিকভাবে উচ্ছ্বসিত ফারিয়া বলেন, “প্রায় চার বছর পর ‘বিবাহ অভিযানে’ একসঙ্গে কাজ করছি। এর মধ্যে অঙ্কুশ অনেক কাজ করেছে, তার অনেক পরিবর্তনও হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে সে পুরনো বন্ধুর মতোই। ওর সঙ্গে কাজ করাটা বরাবরই আনন্দের।”

তবে ‘বিবাহ অভিযান’ নিয়ে ফারিয়া সাফল্যের প্রত্যাশা বুনলেও তিনি এর বাইরে মডেলিং ও নতুন সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কয়েক দিন আগে প্রসাধনসামগ্রী ক্লিয়ার শ্যাম্পুর শুভেচ্ছাদূত হয়েছেন। এ ছাড়া সম্প্রতি দীপংকর দীপনের ‘ঢাকা ২০৪০’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ফিউচার ঢাকা কেমন হবে এ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে নির্মিত হচ্ছে ছবিটি। দারুন একটি চরিত্রে অভিনয় করবেন নুসরাত। এছাড়াও শাকিব খানের বিপরীতে ছবি ‘শাহেনশাহ’ মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এ তো গেল সিনেমার কথা। কিন্তু নুসরাত ফারিয়ার ভক্তদের দীর্ঘদিনের অনুযোগ, কেন পছন্দের অভিনেত্রীকে ছোটপর্দায় দেখা যায় না? বিষয়টি খোলাসা করেই তিনি বলেন, ‘সিনেমা ও বিজ্ঞাপনের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে নাটকে সেভাবে কাজ করা হয় না। তবে এখন আমাদের দেশে ভালো ভালো নাটক হচ্ছে। গল্পগুলোও চমৎকার। ভালো গল্পের নাটকে অভিনয় করতে আমারও খুব ইচ্ছা হয়। তবে তা সময়সাপেক্ষে। শুধু ভালো গল্প পেলে সময় বের করে নাটকে অভিনয় করার ইচ্ছা আছে।’

নিজের প্রথম গান ‘পটাকা’ দিয়ে ভালো সাড়া পেয়েছিলেন ফারিয়া। আগামীতে নতুন গান নিয়ে তিনি বলেন, “আমি অভিনয়ের মানুষ। নিজের ভালোলাগা থেকেই গান করছি। প্রথম গান ‘পটাকা’য় যে সাড়া পেয়েছি, তাতেই অভিভূত। শ্রোতাদের ভালোবাসার ডানায় ভর করেই সামনে নতুন গান নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে টাইমফ্রেমটা বলতে পারছি না। এখন এই গানের আবেশেই রয়েছি।”

Pin It