দুদকের জাল ছিঁড়ে কেউ বের হতে পারবে না: ইকবাল মাহমুদ

image-112174-1575810451

চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তালিকায় অনেক রুই-কাতলার নামও রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। তালিকায় ১৮৯ জনের নাম রয়েছে। দুদকের জাল ছিঁড়ে কেউ বের হতে পারবে না। যারা দুর্নীতি করবে, তাদের দুদকের বারান্দায় আসতেই হবে।

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০১৯ (৯ ডিসেম্বর) উপলক্ষে রোববার মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান আরও জোরদার হবে বলে এ সময় উল্লেখ করেন তিনি। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (র‌্যাক) ওই অনুষ্ঠানে কমিশনের দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ বিষয়ে বক্তব্য দেন ইকবাল মাহমুদ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুদকের চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান আর এগোবে না, বন্ধ হয়ে যাবে- এ ধরনের চিন্তা যারা করছেন, তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। দুদকের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে এবং তাদের সম্পর্কে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে অভিযান বন্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই; বরং এ অভিযানের পরিধি আরও বাড়বে।

মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, র‌্যাক সভাপতি ও দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার মোর্শেদ নোমান এবং র‌্যাক সাধারণ সম্পাদক ও ডিবিসি টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার আদিত্য আরাফাত। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব মো. দিলোয়ার বখ্‌ত।

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে সাংবাদিকরা দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ বিষয়ে নানা প্রশ্ন তুলে ধরেন চেয়ারম্যানের কাছে। চেয়ারম্যান সব প্রশ্নের জবাব দেন।

বেআইনি ক্যাসিনোকাণ্ডসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকারের চলমান অভিযানের পাশাপাশি দুদক ক্যাসিনোবাজ ও মেগা দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। দুদকের তালিকায় ১৮৯ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এরই মধ্যে ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সম্পর্কে চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, এরই মধ্যে যাদের নাম এসেছে, তারা দুদকের জাল থেকে বের হতে পারবে না। এদের মধ্যে রুই-কাতলা পর্যায়ের অনেকে আছে। তাদের বিষয়ে তথ্য চেয়ে সিঙ্গাপুরসহ একাধিক দেশে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। এ অনুসন্ধান তদন্তে দুদক শক্ত অবস্থানে আছে। ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত অনেককে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে অনেকের নাম পাওয়া যাচ্ছে। যাদের নাম বেশি বেশি সামনে আসছে, তাদের আগে ধরা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। এ কাজটি করতে পারলেই দেশে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি: বেসিক ব্যাংকে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গণমাধ্যমে এ নিয়ে যে খবর প্রকাশ হয়েছে, তার ভিত্তিতে ব্যাংকটিতে নিয়োগ নিয়ে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) নিরীক্ষা প্রতিবেদন চাওয়া হবে। প্রায় ১২শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগ নিয়ে নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর আমলে।

ওই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ওই ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলার চার্জশিট কবে দেওয়া হবে- এ প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, আত্মসাৎকৃত অর্থ সর্বশেষ কোন চ্যানেলে কার কাছে গেছে, তা এখনও বের করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে চার্জশিট দিতে দেরি হচ্ছে। চার্জশিটে বাচ্চুর নাম আসবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি তদন্তের বিষয়। তদন্তে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেলে তদন্ত কর্মকর্তা সে হিসাব করেই চার্জশিট তৈরি করবেন।

জনআস্থা বেড়েছে: ইকবাল মাহমুদ বলেন, বর্তমানে যেভাবে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, তাতে কমিশনের প্রতি জনআস্থা বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ২২ হাজার ২২৩টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩০০টি অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে।

দুদকের বারান্দায় আসতেই হবে: অন্য এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান সময়ে কমিশন দেশের মানুষের কাছে একটা বার্তা পৌঁছাতে পেরেছে। সেটি হলো, কেউ দুর্নীতি করলে তাকে দুদকের বারান্দায় আসার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ, দুর্নীতি করলে আজ হোক, কাল হোক বের হবেই। দুর্নীতির তথ্য তামাদি হয় না। যে দুর্নীতি করবে, তাকে জবাবদিহি ও আইনের আওতায় আসতেই হবে।

অর্থপাচার অপরাধের সাজা শতভাগ: অর্থ পাচার অপরাধ বিষয়ে তিনি বলেন, এ মামলায় শতভাগ সাজা নিশ্চিত হচ্ছে। মানি লন্ডারিং আইন সংশোধনের সময় এনবিআর, সিআইডি, শুল্ক্ক গোয়েন্দাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে এ অপরাধের ক্ষেত্রে তদন্ত ও মামলা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তারাও এ অপরাধের ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধের বিষয় দুদক দেখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ একাধিক সংস্থা থেকে মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ দুদকে পাঠানো হয়। দুদক সেগুলো নিয়েও কাজ করছে।

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি দমনে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করতে হবে।

ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি: পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের কারসাজি সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এ বিষয়টি শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর নিবিড়ভাবে পর্যক্ষেণ করছে। এ ক্ষেত্রে কারসাজির মাধ্যমে ব্যবসা করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করা হলে সেটি দুদক তদন্ত করতে পারে।

এর আগে অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন ইকবাল মাহমুদ। এ সময় তিনি বলেন, কমিশন জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে চায়। ফাঁদ মামলা সম্পর্কে বলেন, ঘুষের টাকাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের হাতেনাতে ধরার কাজ শুরু হওয়ায় সার্বিকভাবে ঘুষের মাত্রা কিছুটা হলেও কমেছে। জনগণকে ঘুষ, দুর্নীতি, হয়রানি-বিবর্জিত সরকারি সেবা দিতে হবে।

দুদকের মামলায় সাজার হার সম্পর্কে তিনি বলেন, সাজার হার না বাড়লেও কমেনি। শতভাগ সাজা নিশ্চিত করতে কমিশনের প্রসিকিউটররা কাজ করছেন। বিচারাধীন বিভিন্ন মামলায় সাক্ষীদের আইনি প্রক্রিয়ায় সুরক্ষার কাজও করা হচ্ছে।

দুদক সূত্র জানায়, যানজট ও জনহয়রানির বিষয়টি মাথায় রেখে এবারও আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসটি পালন উপলক্ষে ব্যস্ত সড়কে কোনো র‌্যালি করা হবে না। দুর্নীতিবিরোধী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, সততা সংঘের সমাবেশ, তথ্যচিত্র প্রদর্শনসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করা হবে।

জানা গেছে, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদ (আনকাক) অনুযায়ী জাতিসংঘ প্রতিবছরের মতো এবারও ৯ ডিসেম্বর দিবসটি পালনের জন্য সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। দুদক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ (টিআইবি) বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনে দিনটি পালন করবে।

Pin It