দুর্বল বিপণন পদ্ধতিতে মার খাচ্ছেন তাঁতিরা

image-59005-1559388334

রংপুর শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের একটি গ্রাম হাবু। গ্রামটি হাবু বেনারসি পল্লী হিসেবে পরিচিত। এখানে রয়েছে প্রায় দুইশ তাঁতঘর। ঈদকে সামনে রেখে বেনারসি পল্লীতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কারিগররা।

প্রায় এক হাজার পুরুষ-মহিলা কারিগররা দিনরাত তৈরি করছেন বাহারি রং ও ডিজাইনের শাড়ি ও জামা। এখানকার তাঁতের শাড়ি রপ্তানি করা হয় বিদেশেও।

রংপুর, লালমনরহাট জেলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলার লোকজন এখানে আসছেন বেনারসি শাড়ি কিনতে। সম্প্রতি গ্রামটির রাস্তার পাশে দুই ধারে তৈরি করা হয়েছে শো-রুম। এখানে তাঁত মালিকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করছেন। তবে অনেকের শো-রুম নেই। তারা ঢাকায় গিয়ে শাড়ি বিক্রি করেন।

২০০৫ সালে প্রথম গ্রামটিতে তাঁত বসান আব্দুর রহমান। প্রথমের দিকে তাঁত শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটলেও পরবর্তীতে নানা সমস্যার কারণে প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় এ শিল্পের। পেশা ছেড়ে দেয় অনেকেই। এরই মধ্যে এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকার বেনারসি পল্লী প্রকল্প নামে একটি প্রকল্পে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। শ্রমিক ও মালিকদের দেওয়া হয় প্রশিক্ষণসহ আর্থিক সুবিধা।

মৌমিতা বেনারসি কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি শাড়ি তৈরি করতে চার থেকে পাঁচ দিন লাগে। এ জন্য মালিকরা দেন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা। যা দিয়ে তাদের পেট চালানো দায়। অথচ ওই শাড়ি শহরে বিক্রি হয় সাত থেকে আট হাজার টাকায়।

মৌমিতা বেনারসির মালিক নাজমুন্নাহার বেগম বলেন, ঈদ এলে শাড়ির চাহিদা বেড়ে যায়। একটি শাড়ি তৈরি করতে সুতা, লেবার, পলিস, বিবিধসহ খরচ পড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।

তাঁত মালিক ও বেনারসি পল্লীর প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের কাছ থেকে শাড়ি কিনে নিয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন ঢাকার মহাজনরা। তাদের টাকায় সুতা ও রং কেনায় আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। চোখের সামনে আমাদের লাভ তারা নিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, এখানে বিভিন্ন দামের শাড়ি তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে উৎপাদিত কাপড়ের বাজার ব্যবস্থা তৈরি না হওয়া, শ্রমিক সংকট, স্থানীয়ভাবে সুতা না পাওয়া এবং প্রসেসিং ও কাটিং মেশিন না থাকাসহ নানা সমস্যায় আগ্রহ অনেকটা কমে গেছে। বিপণন সমস্যার কারণে এখানকার তাঁত শিল্প পিছিয়ে পড়ছে। এ জন্য সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

Pin It