নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমঝোতা

Untitled-60-5ca11b1a7ad57

বহুল আলোচিত নতুন মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের বিরোধের অবসান হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এফবিসিসিআইসহ শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতা অনুযায়ী, নতুন ভ্যাট আইনে একক বা অভিন্ন হারের পরিবর্তে তিনটি হার হবে। এগুলো হলো ৫, সাড়ে ৭ এবং ১০ শতাংশ। এতে শর্ত সাপেক্ষে রেয়াত বা ক্রেডিট সুবিধা নেওয়ার নিয়ম থাকবে। চাল, আটা, নিত্যপ্রয়োজনীয় ও পেট্রোলিয়ামসহ কিছু পণ্যে ভ্যাট ছাড়ের বিশেষ সুবিধা বহাল থাকবে। বাকি সব পণ্যের মূল্য নির্ধারণে পুরনো প্রথা তথা ট্যারিফ ভ্যালু বাতিল করা হবে।

আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, নতুন আইন নিয়ে এতদিন ভুল বোঝাবুঝি ছিল। পরিস্কার ধারণা ছিল না। এখন আর কোনো বিরোধ ও বিভ্রান্তি নেই। ভ্যাটের রেট নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সময় ও সুযোগ বর্তমানে অনুকূলে। কাজেই আর বিলম্ব করার সময় নেই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একাধিক হার কার্যকর হলে ভ্যাট আদায় কমবে না, বরং বাড়বে। বৈঠকে উপস্থিত এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘তিনটি হারের বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। ব্যবসায়ীরা এ প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন।’ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, এই সরকার ব্যবসাবান্ধব। কাজেই এমন কিছু করা হবে না, যাতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, কোন খাতে কত হার নির্ধারণ করা হবে, তা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। আগামী অর্থবছরে নতুন আইন বাস্তবায়ন করতেই হবে- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে রাজস্ব আহরণ অনেক বাড়বে।

জানা যায়, এখন কোন খাতে কত হার হবে তা বিচার-বিশ্নেষণ করবে এনবিআর। খাত চিহ্নিত করে নতুন ভ্যাট আইনে কিছু সংশোধনী এনে তা চূড়ান্ত করা হবে। এনবিআর সূত্র বলেছে, তিনটি রেট কার্যকর করলে ভ্যাট আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। রাজস্ব আহরণের সুরক্ষা নিশ্চিত করেই নতুন আইন সংশোধন করে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চাপে ২০১০ সালে নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়ন করা হয়, যা ২০১২ সালে জাতীয় সংসদে পাস হয়। এর পর কয়েক দফা প্রচেষ্টা নেওয়া হয় নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে। কিন্তু নানা কারণে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে নতুন আইন বাস্তবায়নে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের তীব্র আপত্তির মুখে বাজেট পাসের দিন আইনটি দুই বছরের জন্য স্থগিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন বলা হয়, বিতর্কিত এই আইন কার্যকর করলে পণ্যমূল্য বেড়ে যাবে। ফলে জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

২০১২ সালের করা আইনে পণ্য ও সেবায় সব ক্ষেত্রে একক ১৫ শতাংশ হার নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া ভ্যাটের প্রতিটি স্তরে রেয়াত নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর এ আইন গ্রহণ করেননি ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের যুক্তি ছিল, বাংলাদেশের অর্থনীতির বাস্তবতার আলোকে এ আইন বাস্তবসম্মত নয়। দুই বছর পর সরকার এখন অনড় অবস্থান থেকে সরে এসেছে এবং একাধিক রেট করতে যাচ্ছে।

জানা যায়, নতুন আইনে প্যাকেজ ভ্যাট থাকবে না। যেসব ব্যবসায়ীর বছরে বিক্রি ৫০ লাখ টাকা হবে, তাদের ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখা হবে, যা এখন আছে ৩৬ লাখ টাকা। ২০১২ সালের আইনে যেসব ব্যবসায়ী বছরে ৮০ লাখ টাকা লেনদেন করেন, তাদের ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার কর দেওয়ার বিধান ছিল। এখন টার্নওভার করের সীমা আরও তিন কোটি টাকায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং কর হার হবে ৪ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী জানান, এই নিয়ম কার্যকর হলে ছোট ব্যবসায়ীরা ভ্যাট থেকে ছাড় পাবেন। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের ওপর আঘাত আসবে -এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না সরকার।

অর্থমন্ত্রী জানান, আইনটি হবে সহজ। এতে কোনো করের চাপ থাকবে না। কাউকে ব্যথা দিয়ে ভ্যাট আদায় করা হবে না। ‘ভ্যাট দেব না’- এ কথা আর বলা যাবে না। সবাইকে ভ্যাট দিতে হবে। তিনি জানান, নতুন আইন সংশোধন ও বাস্তবায়ন বিষয়ে এটাই তার শেষ বৈঠক। এর পর আর কোনো আলোচনা নয়। শুধু সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের পালা। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান ও আসিফ ইব্রাহীম, বিপিজিএমইএর সভাপতি জসিম উদ্দিন, ভ্যাট বিশেষজ্ঞ মঞ্জুর আহমেদ, এনবিআরের সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।

Pin It