নতুন শুরু দেখছেন সাকিবরা

Untitled-10-5d700b72ba3c5-5d7011d4756e2

সাদা জার্সিতে নাম আর নম্বর লেগেছে, দলে এসেছে নতুন নতুন কোচিং স্টাফ। সাকিব আল হাসানও লম্বা বিরতির পর এ বছরের প্রথম টেস্ট খেলতে নামছেন। ওদিকে আফগানিস্তানের আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট। বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলতে নামার রোমাঞ্চ রশিদ খানদের চোখেমুখে। সব মিলিয়ে অনেক ‘নতুন’-এর আবাহন নিয়েই আজ থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের একমাত্র টেস্ট, যা নিয়ে টাইগারদের মধ্যে নব উদ্যম। প্রতিপক্ষের প্রতি যেমন সমীহ আছে, তেমনি আছে দাপুটে ক্রিকেট খেলার প্রতিশ্রুতি।

সেন্টার উইকেটে বোলারদের নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলেন রাসেল ডমিঙ্গো আর চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট। পাশে দাঁড়িয়ে বোলারদের দৌড়ঝাঁপ দেখছিলেন সাকিব আল হাসান। ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক যেখানে ক্যাচিং প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত, সেখানেও গেলেন একবার। গতকাল এভাবে স্কিল ট্রেনিংয়ের এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে সতীর্থদের অনুশীলন পর্যবেক্ষণ করলেন সাকিব। নিজেও কিছুটা সময় ক্যাচিং আর ব্যাটিংয়ে কাটালেন। কিন্তু বোলিংয়ে একটা ডেলিভারিও দিতে দেখা গেল না। নিজের অনুশীলনের চেয়ে দলের একাগ্রতা পর্যবেক্ষণ করাই যেন মুখ্য বিষয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচ নিয়ে সবাই কতটা সিরিয়াস, সেটা বুঝে নেওয়ারই চেষ্টা করছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এই দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই যেমন বললেন, “গত কিছুদিন দেশের ক্রিকেটে ভালো সময় যায়নি। ‘এ’ দল বলেন, একাডেমি বলেন, কোথাও আমরা ভালো পারফর্ম করতে পারিনি। এই ম্যাচটি ভালোভাবে জিততে পারলে অনেক কিছুই আবার একটু স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।” সেই স্বাভাবিকতার শুরুকে লক্ষ্যে রেখে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে নামছে বাংলাদেশ। খেলা শুরু হবে সকাল ১০টায়।

নানাবিধ কারণেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি জিততে চান সাকিব। ভালোভাবে ম্যাচটি জিততে পারলে আত্মবিশ্বাস নিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করতে পারবেন। কিন্তু অঘটনের শিকার হলে আরও এলোমেলো হয়ে পড়বে বাংলাদেশের ক্রিকেট। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি নিয়ে নভেম্বরে যেতে হবে ভারতে দুই টেস্ট ও তিনটি টি২০ ম্যাচ খেলতে। সমালোচকরাও ছেড়ে কথা বলবেন না। বিশ্বকাপে সাকিবের যে বিশাল অর্জন, তাতেও কিছুটা কালচে দাগ ফেলবে। এ জন্যই হয়তো সাকিবের চ্যালেঞ্জটা অন্যদের থেকে একটু বেশি। এ কারণে স্বাগতিকতার সব সুবিধাই নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। মঙ্গলবার যেমন পিচের ওপর বল ফেলে উইকেট বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ভারতীয় পিচ কিউরেটর প্রাভিন হিঙ্গানিকার বিকেলে নিজেও দুবার বল করে পিচ দেখে নেওয়ার চেষ্টা করলেন, সাকিবের চাওয়া কতটা পূরণ করতে পারলেন। পিচে যেভাবে বল টার্ন করতে দেখা গেল, তাতে নিখাদ স্পিন ট্র্যাকের বার্তা দেয়। স্পিন বোলারের আধিক্য রেখে একাদশ সাজাবেন বলেই সংবাদ সম্মেলনে বার্তা দেন সাকিব, ‘আমরা ২০ উইকেট নিতে না পারলে কোনো চান্স থাকবে না। আমাদের চেষ্টা থাকবে ২০ উইকেট নেওয়ার। সেটা যত কম রানে নেওয়া সম্ভব হয়। আমাদের ব্যাটসম্যানদের কাজ হলো যত বেশি রান করা। এর চেয়ে বেশি কিছু চিন্তা করছি না।’

তবে সাকিবের এই তৎপরতা থেকে একটা জিনিস পরিস্কার, নবীন আফগানিস্তানকে হালকাভাবে নিতে চান না। বড় দলের মতো খেলে ম্যাচটা জিতে পায়ের নিচের মাটিকে শক্ত ভিত দিতে চান। একই চিন্তা আফগান শিবিরেও। দলটির অধিনায়ক রশিদ খান সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, টেস্ট জয়ের জন্যই খেলবেন তারা। মাত্র দুই টেস্টের অভিজ্ঞতা আফগানিস্তানের। নবীনতম সদস্য হিসেবে টেস্ট অভিষেক হয়েছে গত বছর ভারতের বিপক্ষে। লম্বা দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা তাদের এ বছরের মার্চে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। সমশক্তির আইরিশদের বিপক্ষে জয় এলেও বিরাট কোহলিবিহীন ভারতের কাছে হারতে হয়েছে ইনিংস ব্যবধানে। এমন নবীন একটা দল হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের আন্ডারডগ বলে অভিহিত করেছেন আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত কোচ অ্যান্ডি মোলস। অবশ্য প্রতিপক্ষকে ধাঁধায় ফেলতে এটা তার কৌশলও হতে পারে। কারণ, বোলিংয়ে তার দল বেশ ভালো। বিশ্বমানের একাধিক স্পিনার আছে। ‘এ’ দলের সফর এবং বিসিবি একাদশের বিপক্ষে দু’দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের পারফরম্যান্স মিলে মানসিকভাবে চাঙ্গা দলটির খেলোয়াড়রা। সাকিব প্রতিপক্ষের এই কৌশল সম্পর্কে অবগত। তার মতে, ‘আমাদের চিন্তা থাকবে ম্যাচটি জেতার। এ জন্য দুইজন বা এক পেসার নিয়ে খেলতে হলে খেলব। যেটাই আমরা পরিকল্পনা করব, সেটিতেই অটল থাকার চেষ্টা করব।’

দেশের মাটিতে গত দু-তিন বছর ধরেই সব ফরম্যাটে ভালো খেলছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ জিতেছে। আজ সকাল ১০টায় শুরু হতে যাওয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টেও ধারাবাহিকতা রাখার চেষ্টা থাকবে। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা সাকিব ব্যক্তিগতভাবেও ভালো কিছু করতে মুখিয়ে আছেন। ইনজুরির কারণে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজ খেলা হয়নি তার। গত বছর ডিসেম্বরে দেশে উইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলেছেন তিনি। এটি তার প্রত্যাবর্তনের টেস্ট। ইনজুরি থেকে ফেরা পেস বোলার তাসকিন আহমেদ ভারতে চার দিনের ম্যাচের টুর্নামেন্টে ভালো করেছেন। সুযোগের অপেক্ষায় আছেন এই পেসার। মাহমুদুল্লাহ বোলিং করতে পারছেন স্বাভাবিক অ্যাকশনে। টানা ১৫ দিন ব্যাটিং ও বোলিং নিয়ে কঠোর অনুশীলনে ছিলেন তিনি। এ সিরিজ দিয়ে ভালো কিছু করতে চান ডানহাতি এই অলরাউন্ডার। ব্যাটিং অর্ডারে প্রত্যেকেই উন্মুখ হয়ে আছেন পারফর্ম করতে। তবে ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের অভাবটা ঠিকই অনুভূত হতে পারে। তরুণ সাদমান ইসলামের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিজ্ঞতার নিদর্শন রাখতে হবে সৌম্য সরকারকে। অবশ্য তামিম না থাকায় ওপেনিং সামর্থ্য দেখে নেওয়ারও দারুণ একটা সুযোগ এসেছে। এই চ্যালেঞ্জটা তাই জাতীয় দলের নতুন কোচিং স্টাফের জন্যও। এ জন্য জয়ই একমাত্র লক্ষ্য টাইগার শিবিরে।

তবে টেস্ট ম্যাচটি নির্বিঘ্নে হবে কি-না, তা নিয়ে ভাবনা আছে। দেশের আবহাওয়া বিভাগ গতকাল ৩ নম্বর সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছিল সাগরিকার উপকূলে। গতকাল দুবার বৃষ্টির ঝাপটাও লেগেছে মাঠে। প্রতিপক্ষ আফগানদের পাশাপাশি আবহাওয়া বার্তার ওপরও চোখ রাখতে হচ্ছে টাইগারদের।

Pin It