নারায়ণগঞ্জের সেই ধর্ষণ ও হত্যা মামলা: লোমহর্ষক বর্ণনা

image-179771-1599144738

নারায়ণগঞ্জে ‘ধর্ষণ-হত্যার দায়’ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেওয়া তিন আসামির মধ্যে নৌকার মাঝি খলিলুর রহমান জামিনে মুক্ত হয়েছেন। এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে তাকে বাধ্য করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই শামীম।’

বৃস্পতিবার বিকালে বন্দরের একরামপুর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বার বার চোখের পানি মুছছিলেন খলিল। পুলিশের নির্যাতনে শারীরিক ও মানষিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া খলিল গত মঙ্গলবার খলিল আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। বন্দরের একরামপুরে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন এই নৌকার মাঝি।

খলিল জানান, মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে আমার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে মুখে গামছা বেঁধে অনবরত মুখে পানি ঢালা হয়েছে। যদি স্বীকারোক্তি না দেই তাহলে আমাকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। আমাকে তিনদিন থানার লকআপে আটকে রেখে নিযার্তন করে শেখানো স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে এসআই শামীম আল মামুন।

খলিল আরও জানান, এসআই শামীম এসে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। সদর থানায় আমার সামনে দুই ছেলেকে (আব্দুল্লাহ ও রকিব) দেখিয়ে বলে, তুই ওদের চিনিস কি না? তখন আমি বলি তাদের আমি চিনি না। তখনই আমাকে মারধর শুরু করেন শামীম। আমি ওই দুই ছেলে ও কিশোরীকে চিনি না। জীবনে তাদের দেখি নাই। এরপর থেকে শুরু হয় আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন।

গত ৮ আগস্ট কিশোরী স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় খলিলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। খলিলকে গ্রেফতারের পর কোনো কারণ জানাননি। এমনকি তার স্বজনরা খলিলকে গ্রেফতারের কারণ জানতে চাইলে বরখাস্তকৃত এসআই শামীম তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

খলিলের বাবা আব্দুল গফুর বলেন, দুই দিন থানায় ভাত দিয়েছি। পরের দিন ভাত নিয়ে গেলে রাখেনি পুলিশ, দেখাও করতে দেয়নি।

খলিলের স্ত্রী শারমিন বেগম বলেন, খলিল বুধবার জামিনে মুক্ত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার তাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা দিয়েছিলেন টাকা না থাকায় বাড়িতে ফেরত এসেছি। আগে থেকেই তার অসুখ ছিল। মারধর করে আরও অসুস্থ বানিয়ে ফেলেছে।

পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি এসআই শামীমের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের অনেক সত্যতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ জুলাই স্কুল ছাত্রী কিশোরী নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজের ঘটনায় সদর থানায় মামলা করে তার পরিবার। পুলিশ খলিল, আব্দুল্লাহ্ ও রকিব নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তারা আদালতে জবানবন্দি দেন। সেখানে তারা ‘অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার’ দায় স্বীকার করেন।এদিকে ঘটনার ৫১ দিন পর ২৩ অগাস্ট ওই কিশোরী ফিরে আসে। আদালতের নির্দেশে সে এখন পরিবারের জিম্মায় আছে। ফিরে আসার পর কিশোরী আদালতে বলেছে, ইকবাল নামের এক যুবককে বিয়ে করে বন্দর এলাকার এক ভাড়া বাড়িতে সংসার পেতেছিল সে। আলোচিত এ ঘটনায় এখনও আব্দুল্লাহ্ ও রকিব এবং কিশোরীর বিয়ে করা স্বামী ইকবাল জেল হাজতে রয়েছে।

Pin It