‘নির্বাচন কমিশন এখন নাম পরিবর্তন করে নির্বাসন কমিশন হয়েছে’

204825alal-bnp

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয়তাবাদী প্রকাশনা সংস্থার উদ্যোগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের লেখা ‘কুপির বাতির গণতন্ত্র’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন  অনুষ্ঠান হয়। জাতীয়তাবাদী প্রকাশনা সংস্থা এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে।

আজ রবিবার সকালে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এখন নাম পরিবর্তন করে নির্বাসন কমিশন হয়েছে। যেখান থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসন করা হয়।’

বইটি লেখার কারণ ব্যাখ্যা করে লেখক সাবেক সাংসদ সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘‘কুপি বাতি কেন? কুপি বাতি হচ্ছে এই কারণে যে, সেই কুপি বাতি আমলের কথা স্মরণ করা। যখন বিদ্যুতবিহীন সমাজ ব্যবস্থা ছিলো কিন্তু বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত মানুষরা ছিলেন যাদের অন্তর্জগত ছিলো বিদ্যুতের আলোকে আলোকিত। সেই মানুষের সংখ্যা আজ দিন দিন কমে যাচ্ছে, সেই মানুষের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যারা আছে তারা চুপচাপ আছেন, নিশ্চুপ আছেন।”

তিনি বলেন, ‘‘এই কারণে আমাদের ডিজিটাল সিস্টেমের অনেক কিছু আমাদের ভালো লাগে না, আমরা এনালগে ফিরে যেতে চাই। যে এনালগে আমরা জীবনের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাই, জীবনের দর্পন খুঁজে পাই।সেই দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার যে তাগিদ সেই তাগিদ থেকে আমার মধ্যে একটা চেতনা কাজ করেছে-যে এলইডির আলোকে যত আলোকিত হোক, আজকে উন্নয়ন যে পর্যায় গিয়ে পৌঁছুক কুপি বাতির সেই অবস্থা গণতন্ত্র সেই পর্যায়ে রয়ে গেছে।”

তিনি আরো বলেন, ‘‘যদি গণতন্ত্র সেই পর্যায়ে নাই থাকে, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের যে নির্বাচন যেখানে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে যুক্তফ্রেন্টের প্রার্থীদেরকে ভোট দিয়েছিলো তখন তো এই অঞ্চলে কোনো নির্বাচন কমিশন ছিলো না। পূর্ব পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে সেই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। তারপরেও যুক্তফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্টতা পেয়েছিলো। কোনো নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনই ছিলো না দেখা গেছে।”

‘‘নির্বাচন নিয়ে কোনো বির্তক উঠেনি। ১৯৭০ সালে আইয়ুব খান-ইয়াহিয়া খানের আমলে নির্বাচন হয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে নৌকার পক্ষে ভোট দিয়েছে, সেই দিনও তো নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেনি। আজকে ৫০ বছর পরে নির্বাচন নিয়ে ধ্বংস স্তুপ আমরা দেখতে পারছি। নির্বাচন কমিশন এখন নাম পরিবর্তন করে নির্বাসন কমিশন হয়েছে। যেখান থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসন করা হয়। তাহলে কুপিবাতি বলব না কী বলব? এই চেতনার জন্য কি মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করেছেন, মঞ্চে বসে থাকা এনারা রক্ত দিয়েছেন, অনেকে জীবন দিয়েছেন, অনেক পরিবারে সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা চোখের অশ্রু ফেলেন” বলেন তিনি।

২০০৮ সালের ২৪ এপ্রিল রংপুর কারাগারে থেকে জামিনে মুক্তির পর জেল গেইট থেকে পুনরায় গ্রেপ্তারের সংবাদ শুনে মারা যান আলালের মা উম্মে কুলসুম। কারাগারে বন্দি অবস্থায় মায়ের সংবাদ তিনদিন পরে কারাকর্তৃপক্ষ থেকে জানার সংবাদ শুনে নিজের মর্মবেদনার কথা বলতে বলতে গিয়ে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন এই সাংসদ আলাল।

‘‘আমি কারাগারে ছিলাম। আমার মা মারা গেছে, আমাকে তিনদিন পরে জানানো হয়েছে। আমি আমার মায়ের লাশটাও দেখতে পারি নাই। এদেশের রাজনীতি করার অপরাধটা কি এই।”

বর্তমান সরকারের আমলে আলালের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ২১৩টা।

এই গ্রন্থটি আলাল তার প্রয়াত মা উম্মে কুলসুম,  প্রয়াত পিতা সৈয়দ আলতাফ হোসেন এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরোত্তমের স্মরণে উতসর্গ করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ফজলুল হক সৈকতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, সাবেক অ্ধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, গ্রন্থের প্রকাশক মো. জহির দীপ্তি বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির এবিএম মোশাররফ হোসেন, ডা. রফিকুল ইসলাম, অনিন্দ্র্য ইসলাম অমিত, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, হেলেন জেরিন খান, শাহ নেসারুল হক, মাইনুল ইসলামসহ বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Pin It