পদ্মা সেতুর নকশার জটিলতা কাটল

Untitled-36-5aa580d548c2c-5c3dfe80ed02b

জটিলতা কাটিয়ে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর ৬ ও ৭ নম্বর পিয়ারের (পিলার) নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। পিলার দুটির চূড়ান্ত নকশা মঙ্গলবার অনুমোদন পেয়েছে। শিগগির শুরু হবে এ দুই পিলারের নির্মাণ কাজ। মূল সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

নির্মাণাধীন ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুতে পিলারের সংখ্যা ৪২। দুটি পিলার নদীর দুই প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ৪০ পিলার নির্মাণ করা হচ্ছে নদীগর্ভে। এর অধিকাংশের নির্মাণ কাজ শেষের পথে। কিন্তু ৬ ও ৭ নম্বরসহ কয়েকটি পিলারের নকশা চূড়ান্ত করা যায়নি পানির তলদেশে দুর্বল মাটির স্তরের কারণে। এসব পিলার যেসব স্থানে নির্মাণ করা হবে, সেখানে মাটির তলদেশে কাদার স্তর রয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৫ নম্বর পিলারের এ ক্ষেত্রে এ সমস্যা ছিল। পদ্মা সেতুর নদীগর্ভের এ পিলারগুলো নির্মাণের কথা ছিল ৯৬ থেকে ১২৮ মিটার গভীর পাইলের ওপর। কিন্তু পানির তলদেশে মাটির স্তর দুর্বল হওয়ায় সংশোধন করা ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের পাইল নির্মাণের সময় তা দেবে যায়। আটকে যায় ১৪টি পিলারের কাজ।

সংশোধিত নকশা অনুযায়ী, ৬ ও ৭ নম্বরের দেবে যাওয়া পাইলের ওপরই পিলার নির্মাণ করা হবে। তবে বাড়বে একটি পাইল। অন্যান্য পিলার ছয়টি পাইলের ওপর নির্মাণ করা হলেও দুর্বল মাটির স্তর রয়েছে- এমন স্থানে নির্মাণাধীন ১৪টি পিলারে থাকবে সাতটি করে পাইল।

পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘স্কিন গ্রাফটিং’ পদ্ধতি থাকবে এ ১৪টি পিলারে। পাইলের বাইরের অংশে দেওয়া হবে খাঁজকাটা। ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউই ইউকে লিমিটেড সংশোধিত নকশা অনুমোদন করেছে। এসব পিলারে খাঁজকাটা পাইল বসিয়ে বিশেষ ধরনের সিমেন্টের মিশ্রণ ব্যবহার করে পানির তলদেশের কাদামাটি শক্ত করা হবে।

পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী মঙ্গলবার রাতে সমকালকে জানান, সংশোধিত নকশা অনুযায়ী ছয়টি পাইলের মাঝে অতিরিক্ত আরেকটি পাইল বসানো হবে। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুতে সব ধরনের কারিগরি জটিলতার অবসান হলো।

প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্প অনুমোদন পায় ২০০৮ সালে। মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর ট্রাস (স্প্যান) স্থাপনের মাধ্যমে দৃশ্যমান হয় সেতুর অবয়ব। এখন পর্যন্ত ৪২টি স্প্যানের ৫টি বসেছে। দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ৭৫০ মিটার। চলতি মাসে আরেকটি স্প্যান বসানোর কথা থাকলেও নদীতে নাব্য সংকটের কারণে স্প্যান মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে সেতু পর্যন্ত নেওয়া যাচ্ছে না।

গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নকশা জটিলতা ও বৈরী প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে কাজ পিছিয়ে যায়। মূল সেতুর ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি লিমিটেড ২২ মাস অতিরিক্ত সময় চেয়েছে। চলতি বছরে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৬২ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৭২ ভাগ।

Pin It