পদ্মা সেতু নকশা জটিলতায় থমকে আছে রেল সংযোগ

Untitled-34-5cc5ff6921dae-5cc616c576470

পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চললেও নকশা জটিলতায় থমকে গেছে এর রেল সংযোগ প্রকল্পটি। ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে রেল প্রকল্পের নকশা সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়। পদ্মা সেতুর দুই পাশে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এ জন্য ২০১৬ সালে নেওয়া হয় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প। গত তিন বছরে প্রকল্পটির কাজ হয়েছে মাত্র ১১ শতাংশ।

সূত্র জানায়, অর্থায়ন জটিলতায় বছর দেড়েক ঝুলে ছিল প্রকল্পের কাজ। এ কারণে চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রকল্পটির জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী পদ্মা সেতুর রেল সংযোগের নকশা প্রণয়ন করতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল আলম সমকালকে বলেন, পদ্মায় রেল সেতু নির্মাণে সরকার সচেষ্ট। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের চুক্তি অনুযায়ী সেতুর রেল সংযোগ স্থাপন বিষয়ে নকশা রয়েছে। সেই নকশা অনুযায়ী রেলপথ হবে। এর বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। সবকিছু চুক্তি অনুযায়ী হবে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর রেলওয়ের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন বরাদ্দ (এডিপি) ছিল ১১ হাজার ৩৩১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তবে বিভিন্ন বড় প্রকল্পে অগ্রগতি ধীর হওয়ায় সংশোধিত এডিপি ৩ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পেও বরাদ্দ কমছে। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ একটি মেগা প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ হাজার ৩৩০ কোটি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী প্রকল্পটিতে বরাদ্দ রাখা হয়। তবে প্রকল্পটির ঋণচুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় ব্যয় হওয়ায় ঠিকাদারের মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়। এর পরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে চারটি পরীক্ষামূলক পাইল নির্মাণ করে। তবে এগুলো লোড বেয়ারিং ক্যাপাসিটি (ভারবহন ক্ষমতা) চাহিদা অনুযায়ী হয়নি। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কারিগরি বিষয়ে অধিকতর যাচাই-বাছাই করে পুনঃনকশা প্রণয়ন করতে হচ্ছে। এতে নির্মাণ কাজের প্রত্যাশিত অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।

প্রস্তাবে বলা হয়, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ১ হাজার ৭৮৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। এ কার্যক্রম চলমান। তবে মাঠ পর্যায়ে অধিগ্রহণ কার্যক্রম লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্জিত হয়নি। আর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ কার্যক্রম প্রক্রিয়া অপেক্ষাকৃত সময়সাপেক্ষ। এ কাজে রেলওয়ে ছাড়াও ভূমি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় জেলা প্রশাসন, বন বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ জন্য জমি অধিগ্রহণ খাতেও এডিপিতে বরাদ্দ অর্থ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্যয় করা যাচ্ছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা রেল সেতু সংযোগ প্রকল্পে এডিপি ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের মতো মূল পদ্মা সেতু প্রকল্পেও নকশা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। এতে সেতু নির্মাণ কাজও অনেক পিছিয়ে গেছে। সম্প্রতি পদ্মা সেতুর নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই সড়কের পাশাপাশি ট্রেন চালুর লক্ষ্যে ২০১৬ সালে রেল সংযোগ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। পরে ভাঙ্গা থেকে যশোর ও শেষ ধাপে মাওয়া থেকে ঢাকা পর্যন্ত অংশটি নির্মাণ করা হবে। এ জন্য ২০১৬ সালের আগস্টে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি সই করা হয়। তবে অর্থায়ন জটিলতায় ঝুলে যায় প্রকল্পটি।

এক দফা বৃদ্ধির পর জিটুজি ভিত্তিতে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে চীন। এ জন্য দেড় বছর অপেক্ষা করতে হয়। অবশেষে গত বছর এপ্রিলে চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের ঋণচুক্তি সই করে বাংলাদেশ সরকার। তবে প্রাথমিকভাবে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বা ৩১৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল চীন সরকারের। পরে তা ১২ শতাংশের বেশি কমানো হয়।

গত বছর জুনে প্রকল্পটির অর্থ ছাড় শুরু করে চীনের এক্সিম ব্যাংক। এর পর নির্মাণ কাজ শুরু হলেও নকশা জটিলতায় পড়ে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পটি। এ কারণে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন সড়কের পাশাপাশি ট্রেন চালুর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা। পদ্মা সেতুর কাজ ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি দুই পর্যায়ে বিভক্ত। এর আওতায় প্রথম পর্যায়ে ঢাকা থেকে মাওয়া এবং পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে জাজিরা, শিবচর ও ভাঙ্গা জংশন হয়ে ভাঙ্গা স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত হবে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে ভাঙ্গা থেকে নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোর জেলা রেলপথে যুক্ত হবে।

Pin It