পরোপকারের ফল !

Untitled-6-5d66d0a954dee

মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গোফরান ভুঁইয়া ১৯৮৩-৮৪ সালে রাজধানীর পশ্চিম ভাসানটেকের দেওয়ানপাড়া এলাকায় ৫৮ শতাংশ জমি কিনে বসবাস শুরু করেন। তখন ওই এলাকায় কোনো রাস্তা না থাকায় এলাকাবাসী তার জমির ওপর দিয়েই যাতায়াত করত। একপর্যায়ে সবার সুবিধার্থে তিনি নিজের জমির ১৮ শতাংশ ছেড়ে দেন। তৈরি হয় ১২ ফুট প্রশস্ত রাস্তা। অথচ স্থানীয় কয়েকজন সম্প্রতি তার বিরুদ্ধেই রাস্তার জায়গা দখলের অভিযোগ তুলেছে। এরপর বিষয়টি মিটমাটের নামে দাবি করেছে ২০ লাখ টাকা। সেই চাঁদা না দেওয়ায় তারা গোফরানের বাড়িঘর ও দোকানপাট ভেঙে ফেলে। তাদের দাবি, রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ। তবে তদন্তে দেখা যায়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা সিটি করপোরেশন বা অন্য কোনো সংস্থা এমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অভিযুক্ত ছয়জন চাঁদা না পেয়ে পরিকল্পিতভাবে তার বাড়ি-দোকান ভাংচুর করেছে।

এ সংক্রান্ত মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআইয়ের ঢাকা মহানগর অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার বশীর আহমেদ সমকালকে বলেন, অভিযুক্তরা এলাকায় মন্দ লোক হিসেবে পরিচিত। তদন্তকালে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলের বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া যায়। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অন্তত পাঁচটি মামলা রয়েছে।

তদন্ত সূত্র জানায়, দেওয়ানপাড়া এলাকায় আগে কোনো রাস্তা না থাকায় স্থানীয় লোকজন প্রথমে গোফরান ভুঁইয়ার কেনা জমির ওপর দিয়ে যাতায়াত করতেন। একপর্যায়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বৈঠক করে রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। এ ক্ষেত্রে গোফরান ভুঁইয়ার জমি থেকে ছয় ফুট ও তার পাশের জমির মালিকদের থেকে ছয় ফুট নেওয়া হবে বলে সবাই সম্মত হন। ১৯৯৫ সালে ওয়ার্ড কমিশনার শফিউদ্দিন রাস্তা তৈরির জন্য নকশা এঁকে তিন টাকার স্ট্যাম্পে জমির মালিকদের স্বাক্ষর নিয়ে নিজ দপ্তরের সিল মেরে ঢাকা সিটি করপোরেশনে জমা দেন। তবে তখনও বিবাদীদের জমি মূলত জলাভূমি থাকায় পরে গোফরানের জমি থেকেই ১২ ফুট নিয়ে রাস্তাটি তৈরি হয়। তবে সিটি করপোরেশন কখনই রাস্তা তৈরির জন্য গোফরানের জমি অধিগ্রহণ করেনি। বরং তিনি স্বেচ্ছায় রাস্তা তৈরির জন্য জমি ছেড়ে দিয়েছেন। তারপরও রাস্তা থেকে তিন ফুট ফাঁকা রেখে তিনি দোকান ও বাড়িঘর নির্মাণ করেন। কিন্তু প্রতিবেশী হাছান আলী মোল্লা, হুমায়ুন কবির মোল্লা, সাজিদুর রহমান রুবেল মোল্লা ও ইসমাইল হোসেন সিরাজী দাবি করেন, সিটি করপোরেশনের অধিগ্রহণ করা রাস্তার জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন গোফরান। গত ২ এপ্রিল সকালে তারা গোফরানের বাসায় গিয়ে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে বাড়িঘর, দোকানপাট ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। গোফরান টাকা দিতে অস্বীকার করায় ৫ এপ্রিল সকালে তারা এক্সক্যাভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে তার বাড়ি, দুটি পাকা দোকান, ১৪টি সেমিপাকা দোকান ও বারান্দাসহ চারটি সেমিপাকা বাসা ভেঙে ফেলেন। এতে আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। উপস্থিত নারীরা এতে বাধা দিলে তাদের মারধর করা হয়। এ ঘটনায় কেউ মামলা করলে খুন করা হবে বলে হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়।

এ ঘটনার ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী ৬৯ বছর বয়সী আবদুল গোফরান ভুঁইয়া বলেন, ‘অভিযুক্তরা চাঁদাবাজ ও দখলদার প্রকৃতির। ওই জমিতে ছয়তলার ভিত্তি দিয়ে ভবন নির্মাণ শুরুর পরই তারা আমাকে টার্গেট করে, চাঁদা চায়। সর্বশেষ রাস্তার জায়গা দখলের ভুয়া অভিযোগ তুলে তারা আসলে চাঁদা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনারের কাছেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী উপ-পরিদর্শক জুবায়ের ইবনে ছাইদ বলেন, সার্বিক তদন্ত, সাক্ষ্যপ্রমাণ, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনের সঙ্গে শফিকুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান মোড়ল নামে আরও দু’জন অংশ নেন। তাদের বিরুদ্ধে ভাংচুর-ক্ষতিসাধনসহ বাদী ও উপস্থিত নারীদের মারধর করে হুমকি দেওয়ার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির মোল্লা বলেন, ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আবদুল গোফরান ভুঁইয়া মিথ্যা মামলা করেছেন। সবার সম্মতি ও উপস্থিতিতে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য তার বাড়ি-দোকান ভাঙা হয়। পরে ওই অংশে বর্ধিত রাস্তাও তৈরি হয়।

এ প্রসঙ্গে আবদুল গোফরান ভুঁইয়া জানান, বর্ধিত রাস্তা তৈরির কার্যক্রম শুরুর অনেক আগেই তার বাড়ি ভাঙা হয়। পরে এ নিয়ে সালিশ বৈঠকে অভিযুক্তরা ক্ষমা চেয়েছিলেন। তখন তার বাড়ির ভাঙা অংশ পুনর্নির্মাণ করে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। আর রাস্তা তৈরির উদ্দেশ্য থাকলে তাকে নোটিশ দেওয়া হয়নি কেন? চাঁদাই বা কেন চেয়েছিল তারা? প্রকৃত ঘটনা পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।

Pin It